Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
কালো হয়ে যাচ্ছে আমরুহাঁসা নদী, আশঙ্কায় এলাকা

দূষণ থেকে বাঁচানোর আর্জি গ্রামের

বলরামপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোরও আশ্বাস, ‘‘বিষয়টি নিয়ে বিডিওর সঙ্গে কথা বলব।’’ বিডিও (বলরামপুর) ধ্রবপদ শান্ডিল্য বলেন, ‘‘সবে সমস্যার কথা শুনেছি। কোনও ভাবেই নদী দূষণ মেনে নেওয়া যায় না। এ নিয়ে শীঘ্রই আলোচনায় বসব।’’

বিপদ: লাক্ষা ধোয়া রাসায়নিক জলের এই দশা করেছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

বিপদ: লাক্ষা ধোয়া রাসায়নিক জলের এই দশা করেছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
বলরামপুর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৬
Share: Save:

এক সময়ের টলটলে নদী এখন দূষণে কালো হয়ে গিয়েছে। দূর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে জল। সেই জল ছুঁতে ভয় পাচ্ছেন বাসিন্দারা। গরু-ছাগলও জল খেতে চায় না। চাষের জমিতেও সেই জল দেওয়া বন্ধ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, লাক্ষা কারখানার বর্জ্য জলেই দূষিত হয়ে পড়েছে পুরুলিয়া জেলার বলরামপুরের আমরুহাঁসা নদী। দৈনন্দিন কাজের নির্ভরশীল এক মাত্র নদীর জল এ ভাবে দূষিত হয়ে পড়ায় সমস্যায় পড়েছেন আমরুহাঁসা-সহ কিছু গ্রামের বাসিন্দারা। নদী বাঁচানোর দাবিতে আমরুহাঁসার বাসিন্দারা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।

বলরামপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোরও আশ্বাস, ‘‘বিষয়টি নিয়ে বিডিওর সঙ্গে কথা বলব।’’ বিডিও (বলরামপুর) ধ্রবপদ শান্ডিল্য বলেন, ‘‘সবে সমস্যার কথা শুনেছি। কোনও ভাবেই নদী দূষণ মেনে নেওয়া যায় না। এ নিয়ে শীঘ্রই আলোচনায় বসব।’’

আদিবাসী অধ্যুষিত আমরুহাঁসা গ্রামে প্রায় শ’দুয়েক পরিবারের বাস। গ্রামের বাসিন্দা সন্তুল টুডু, ঠাকুরদাস হেমব্রম, বনমালি সোরেন, শ্রীদাম হেমব্রমেরা জানান, এলাকায় পুকুর নেই। স্নান করা থেকে চাষাবাদ সব কিছুর জন্যই ভরসা এই নদী। তাঁদের দাবি, এক সময়ে এই নদীর জল তাঁরা পানও করেছেন। কিন্তু, বছর তিনেক ধরে নদীর জল ধীরে ধীরে কালো হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ছুঁতেও ভয় পাচ্ছেন।

গ্রামের মহিলাদের মধ্যে জানকী হাঁসদা, সুরজমণি বেসরা, সোমবারি বেসরার অভিযোগ, ‘‘স্নান করলে চুল উঠে যাচ্ছে। ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ির মতো চর্ম রোগ হচ্ছে। নদীর জল মুখে ঝাপটা দিলে চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে।’’ তাঁরা জানান, বাধ্য হয়ে আড়াই কিলোমিটার দূরের একটি জলাধারে স্নান করতে যেতে হয়।

খেরোয়াল হেমব্রম, লক্ষ্মণ বেসরা, মহাবীর সোরেনদের কথায়, ‘‘নদীর জলেই এত দিন চাষাবাস করতাম। কিন্তু, এখন ওই জল দিলে উল্টে শাক-আনাজ মরে যাচ্ছে। এ বার তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় ধান চাষের ক্ষতি হল। কিন্তু, নদী দূষিত হওয়ায় ধান জমিতে ওই জল দিতে পারিনি।’’ তাঁদের অভিযোগ, নদীর জল খেয়ে ছাগল-ভেড়ার গলা ফুলে যাচ্ছে। কয়েকটা পশু মারাও গিয়েছে। তাই পশুদেরও নদী থেকে তাঁরা দূরে রাখার চেষ্টা করেন।

কী ভাবে নদী দূষিত হচ্ছে?

কানহা পাহাড় থেকে বেরিয়ে আমরুহাঁসা নদী বনডি, বনবাঁধা, ঘনুরডি, নন্দুডি হয়ে আমরুহাঁসা গ্রাম পেরিয়ে মাইতিডি, ছোলাগোড়া গ্রাম হয়ে মিশেছে হনুমাতা জলাধারে। আমরুহাঁসার আগে নদীতে বলরামপুর এলাকার লাক্ষা শিল্পের বর্জ্য জল এসে মেশাতেই দূষণ ছড়াচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

তাঁদের দাবি, বলরামপুরে শতাধিক লাক্ষাকুঠি রয়েছে। এই শিল্পে প্রায় হাজার চারেক মানুষ কাজ করেন। গালা তৈরির জন্য কিছু রাসায়নিক দিয়ে কাঁচা লাক্ষা ধুতে হয়। লাক্ষা ধোয়া সেই লালচে জল আগে নিচু জমিতে পড়ত। কিন্তু, ধীরে ধীরে বসতি বাড়ায়, নোংরা জল ইদানীং নদীতে ফেলা হচ্ছে। তাতেই দূষণ। সম্প্রতি তাঁরা বলরামপুরের বিডিও-র কাছে নদীর দূষণ বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন।

নদী বাঁচাও আন্দোলনে গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক তথা চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ওই গ্রামে গিয়ে দেখেছি নদীর জল দূষিত হয়ে পড়েছে। জল থেকে নানা রকম রোগ ছড়াচ্ছে। সমস্যাটি নিয়ে প্রশাসনের জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।’’

লাক্ষা ধোয়া দূষিত জল যে ওই নদীতে পড়ছে তা মানছেন বলরামপুর লাক্ষা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রঞ্জিত মাঝিও। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও জানি, লাক্ষা ধোয়া জল ওই নদীতে মেশায় দূষণ ছড়াচ্ছে। কিন্তু, বর্জ্য জল কোথায় ফেলা হবে? প্রশাসনের আমাদের সঙ্গে বসে এ নিয়ে একটা সমাধানের রাস্তা খোঁজা প্রয়োজন। দরকারে খাল খুঁড়ে কোথাও ফেলা যেতে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lac Waste River Pollution Industrial Waste
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE