মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়ায় প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি। (ডানদিকে) জোটের নিশান। মানবাজারে সূর্যকান্ত মিশ্রের সভায়।—নিজস্ব চিত্র
ভোট এগিয়ে এলেও এতদিন আঁচটা সে ভাবে ছিল না। শুক্রবার একই দিন দু’দলের দুই মহারথী পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সভা করে রীতিমতো তরজা জুড়ে ভোটের পারদ কয়েক ডিগ্রি তুলে দিলেন। এ দিন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র কখনও একই কেন্দ্রে, কখনও পাশাপাশি কেন্দ্রে মাইক্রোফোনে পরস্পরের বিরুদ্ধে বাক্যবাণ নিক্ষেপ করলেন, হাততালিতে ফেলে পড়লেন সমর্থকেরা। বাতাসের গনগনে তাপের সঙ্গে মিশে গেল ভোটের উত্তাপও।
পুরুলিয়া জেলায় মনোনয়ন পর্ব শেষ হয়েছে। এতদিন গাঁয়ে-গঞ্জে কর্মীদের নিয়ে প্রার্থীরা সভা, মিছিল করেছেন। দেওয়াল লিখন থেকে পোস্টার, ব্যানার, হোর্ডিংয়ে ভরেছে জেলার শহর থেকে মফস্সল, গ্রামের মেঠো পথ। কিন্তু বাতাসের পারদ চড়লেও ভোটের সেই উত্তাপ ছড়াচ্ছিল না। শুক্রবার থেকেই শাসক ও বিরোধীদের হেভিওয়েট নেতারা জেলায় সভা করতে শুরু করায় এ বার ভোটের সেই চেনা আমেজ অনেকটাই ফিরল। এ দিন সূর্যবাবুর সভা ছিল দুপুরের বান্দোয়ান কেন্দ্রের বরাবাজার এবং বিকেলে মানবাজারে। অভিষেকের দিনের প্রথম সভা ছিল জয়পুর। দুপুরে বান্দোয়ান কেন্দ্রের বোরো, বিকেলে পুরুলিয়া শহর। সূর্যবাবু ঘুরলেন চারচাকার গাড়িতে। আর অভিষেক এক কেন্দ্র থেকে আর এক কেন্দ্র দাপালেন হেলিকপ্টারে। একজন স্থলপথে, অন্যজন আকাশপথে।
দুই নেতা কে কেমন ভিড় টানলেন তা নিয়ে দিনভর জেলার বিভিন্ন এলাকায় কর্মীদের মধ্যে চাপান-উতোর চলল। তবে প্রথম দিনের প্রচারে সূর্যবাবুই যে কিছুটা হলেও অভিষেকের থেকে ভিড়ের পাল্লায় এগিয়ে গিয়েছেন, তা মানছেন ভিড়ের হিসেব রাখার দায়িত্বে থাকা পুলিশ-আধিকারিকেরাও।
সারদা-নারদা থেকে উন্নয়নের ফিরিস্তি— সব মশলাই ছিল দুই নেতার বক্তব্যে। কখনও সখনও তাঁরা একে অপরকে বিঁধতেও ছাড়েননি। তাতে কড়া রোদে শুকিয়ে যাওয়া কর্মীদের মুখে হাসি ফিরেছে, অনেকে হাততালি দিয়ে উঠেছেন। যেমন অভিষেক দুপুরে বোরোর সভায় স্বীকারই করে নিয়েছেন, ‘‘সিপিএমের আমলেও দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু ওরা এ পর্যন্ত ক’টা নেতা বা জনপ্রতিনিধিকে জেলে ঢুকিয়েছে? আমরা কিন্তু জনপ্রতিনিধিদেরও ছাড়িনি। তাঁকে জেলে ঢুকিয়েছি। দল থেকে বহিষ্কারও করেছি।’’ যদিও কাকে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর নাম খোলসা করেননি।
এর ঘণ্টাখানেক পরে সন্ধ্যায় মানবাজারে যেন সে কথাই সূত্র ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে পাল্টা কটাক্ষ শোনা গিয়েছে সূর্যবাবুর গলায়। তিনি বলেন, ‘‘উনি তো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কথা বলেন। কিন্তু তাঁর দলের নেত-কর্মীরা তো আকন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে বসে আছেন। ইনি কোন মুখে স্বচ্ছতার বড়াই করেন। আমাদের দলের একজন নেতা-কর্মীকেও উনি গ্রেফতার করতে পারেননি। বরং তাঁ দলেরই সাংসদ, মন্ত্রী এখন জেলের ভাত খাচ্ছেন।’’ এরপরেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনি এ সবের জন্য সত্যিই এক নম্বরে। আপনাকে গোল্ড মেডেল দেওয়া দরকার।’’
ঠিক সেই সময়েই পুরুলিয়ার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে সভা করছিলেন অভিষেক। সেখানে তিনি পাল্টা সূর্যবাবুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সুর্যবাবুর আপনার শনির দশা চলছে। কলঙ্কিত মুখে উন্নয়ন-বিরোধী কথা বলবেন না। আপনি নিজেই ৪০ হাজারের ভোটে হারবেন। এ বার আপনাকে প্রাক্তন বিধায়কের প্যাড ছাপাতে হবে।’’
তৃণমূল বিরোধী জোটকে বিঁধতে অভিষেকের মুখে এ কথাও শোনা গিয়েছে— সিপিএম-কংগ্রেসের বিয়ে হয়েছে। এই সম্পর্ক বিবাহ অবধি সীমাবদ্ধ থাক। আপনাদের দেখতে হবে কলঙ্কিত সন্তান যেন জন্ম নিতে না পারে। এ সব শুনে তৃণমূলের কর্মীরা বেশ আমোদ পেয়েছেন। আবার সূর্যবাবুর বক্তৃতার মধ্যেও তৃণমূলকে বিঁধতে দেখে মজা পেয়েছেন বামফ্রন্টের কর্মীরাও।
মানবাজার, বান্দোয়ান থেকে পুরুলিয়া কেন্দ্র— গত লোকসভা ভোটের নিরিখে তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও এ দিন ওই সব এলাকায় অভিষেকের সভার থেকে বেশি ভিড় হয়েছে সূর্যবাবুর সভায়। সেখানে কংগ্রেসের পতাকার সঙ্গে গা ঘেঁষে উড়তে দেখা গিয়েছে সিপিএমের লাল ঝান্ডাও। যা দেখে সূর্যবাবু দাবি করেছেন, ‘‘আপনারা দেখে নেবেন, পুরুলিয়ার ন’টি কেন্দ্রেই এ বার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।’’
যদিও অভিষেক মমতার সুরেই বলেন, রাজ্যের প্রতিটি কেন্দ্রেই মমতাই প্রার্থী। তা দেখেই যেন সবাই মমতাকেই ঘাস ফুলে ভোটটা দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy