তৃণমূল নেতা খুনের জেরে নতুন করে গোষ্ঠী কোন্দলের গুঞ্জন উঠতে শুরু করেছে নানুরে। শামসুলের স্ত্রী আমাতুল্লা বিবির দাবি, তাঁর স্বামীকে খুন করেছে কিছু প্রাক্তন সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। গদাধর হাজরা তাদের দলে ঢুকিয়ে গ্রামে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। তৃণমূলেরই একাংশ মনে করছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই দলের ব্লক কমিটির সদস্য সামসুল হোদা ওরফে ফুলুকে খুন হতে হয়েছে। তাঁরা বলছেন, নানুরে এখন জেলা যুব সভাপতি গদাধর হাজরার সঙ্গে ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য অনুগামীদের গোষ্ঠী বিবাদ মাথা চাড়া দিয়েছে। পুলিশও ওই তত্ত্ব উড়িয়ে দিচ্ছে না। দু’পক্ষই অভিযোগ মানেননি।
নানুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী বিবাদ দীর্ঘ দিনের। জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের সঙ্গে বিবাদ ছিল তৎকালীন বিধায়ক গদাধর এবং যুব নেতা কাজল সেখের জুটির। পরে এলাকার কর্তৃত্ব কায়েমকে কেন্দ্র করে কাজলের সঙ্গে গদাধরের দূরত্ব তৈরি হয়। গদাধর নাম লেখান অনুব্রত শিবিরে। সেই আক্রোশে গদাধরের প্রার্থীপদ আটকানোর মরিয়া চেষ্টা চালান কাজল। কিন্তু কোনও কাজ না হওয়ায় গোপনে হাত মেলান সিপিএমের সঙ্গে। সেইসময় কাজলের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার জন্য পাপুড়ি লাগোয়া বোলপুরের বাহিরী গ্রামে নানুরের বিভিন্ন গ্রামের সিপিএম আশ্রিত ঘর ছাড়া দুষ্কৃতীদের গদাধর আশ্রয় দেন। নির্বাচনের পরে তাদের গ্রামে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের কাজেও লাগোনা হয় বলে অভিযোগ। অবশ্য পাপুড়িতে বার কয়েক চেষ্টা করেও কাউকে ঘরে ফেরানো সম্ভব হয়নি।
গদাধরের সিপিএমের গ্রামছাড়া ওইসব দুষ্কৃতীদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টা মেনে নিতে পারেনি আদি তৃণমূল এবং অন্য দল থেকে আসা কর্মী-সমর্থকরা। কারণ সিপিএম ক্ষমতায় থাকার সময় ওইসব দুষ্কৃতীদের জন্যই দিনের পর দিন গ্রাম ছাড়া হয়ে থাকতে হয়েছে তাঁদের। তাই ফের ঘরছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় তারা গদাধরের ওই উদ্যোগের প্রতিবাদ করেন। মেনে নিতে পারেননি সুব্রতবাবুও। গদাধরের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েই তাই সুব্রতবাবুর গোষ্ঠীভুক্ত হন তাঁরা। সামসুলও ছিলেন সেই দলে। গদাধরের মদতে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রাক্তন সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওই গ্রাম দখলের চেষ্টা চালাচ্ছিল বলে তৃণমূলেরই একটি সূত্র জানিয়েছে। তারই জেরে সামসুল খুন হতে পারে বলে মনে করেছে পুলিশও।
একই অভিযোগ করেছেন শামসুলের স্ত্রী আমাতুল্লা বিবিও। এ দিন তিনি ফোনে বলেন, ‘‘আমার স্বামীকে খুন করেছে কিছু প্রাক্তন সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। গদাধর হাজরা ওদের দলে ঢুকিয়ে গ্রামে ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। স্বামী মেনে নিতে পারেননি বলেই ওকে খুন করা হল। এ বার তো গ্রামে ঢুকে ওরা আমাদেরই ঘরছাড়া করে দেবে।’’ গদাধর হাজরা এবং সুব্রত অবশ্য কেউই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ মানেননি। গদাধর হাজরা বলেন, ‘‘অন্য কোনও গ্রামে নয়, পাপুড়িতে ঘরছাড়াদের ফেরানোর জন্য বাহিরীতে আশ্রয় দিয়ে রাখা হয়েছিল। কারণ তারা আমাদের দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে কাজ করেছে। শামসুলের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ভালো ছিল। খুনের আগের দিনও বিভিন্ন বিষয়ে ফোনে কথা হয়েছে। পুলিশই তদন্ত করে বলতে পারবে কি কারণে ওই খুন।’’ সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়, গ্রাম্য বিবাদের কারণেই ওই খুন।’’
শনিবার বিকালে স্থানীয় বন্দর থেকে পিলখুন্ডির সাব্বার মণ্ডল নামে আরও এক অভিযুক্তকে ধরেছে পুলিশ। এ দিন বোলপুর মহকুমা আদালতে তাঁকে হাজির করানো হলে ৬ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ জানায়, বাকি অভিযুক্তদেরও খোঁজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy