খোকন ও তাঁর স্ত্রী সরস্বতী মান্ডি। নিজস্ব চিত্র।
বছরে এক লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ইটভাটা করতে জমি লিজে দিয়ে বিপাকে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার বালিগুমা গ্রামের এক আদিবাসী পরিবার। টাকা মেলেনি, উল্টে মার খেয়ে তারা দু’বছর ধরে ঘরছাড়া বলে তিন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিডিও, এসডিও এবং জেলাশাসকের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেছে ওই পরিবার। যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি, তাঁরা নিয়মিত টাকা দিচ্ছেন।
এসডিও (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘গুরুত্ব দিয়ে অভিযোগের তদন্ত হবে। বিষ্ণুপুরের ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং বিষ্ণুপুর থানার আইসি-কে দ্রুত ওই পরিবারকে নিরপত্তা দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে বলছি।’’ এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবউদ্দিন খান বলেন, ‘‘সবে দায়িত্ব নিয়েছি। ঘটনাটি সম্পর্কে জানি না। অভিযোগ সত্য হলে, দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’’
অভিযোগকারী খোকন মান্ডির দাবি, বাঁকাদহ পঞ্চায়েতের বালিগুমা গ্রামে তাঁদের পৈতৃক বাড়ি লাগোয়া চার একর ৪০ শতক পতিত জমি বিষ্ণুপুরের তিন ইট ব্যবসায়ী তপন আচার্য, সুধাময় নন্দী ও চণ্ডী পালকে ইটভাটার জন্য লিজে দিয়েছিলেন। ভাড়া বাবদ তাঁদের বছরে এক লক্ষ করে টাকা ভাগ করে প্রতি মাসে দেওয়ার জন্য চুক্তি হয়। ভাটা শুরু হয় ২০১৮ সালের জুন মাসে। গ্রামের বহু পরিবার সেখানে কাজ পান।
খোকনবাবুর অভিযোগ, ‘‘ভাটা শুরু হলেও ভাড়া পাইনি। উল্টে ওই জমি বেদখল করার মতলব তপনবাবু ভাটার কর্মচারীদের দিয়ে আমাকে মারধর করতে থাকেন। বাড়ি ছাড়া করারও হুমকি দিচ্ছিলেন। তাই ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে স্ত্রী ও এক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভিটে ছেড়ে দু’কিলোমিটার দূরে ভালুকা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিই।’’
তাঁ স্ত্রী সরস্বতী মান্ডি জানান, তাঁরা দিনমজুরি করে সংসার চালান। তা সত্ত্বেও কাজে যাওয়ার আগে রোজ বালিগুমা গ্রামে গিয়ে তাঁরা বাড়িটি দেখে আসেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাড়িতে না থাকলেও আমাদের যাতায়াত রয়েছে দেখে, ইদানীং ভাটা ব্যবসায়ীদের লোকজন ভালুকা গ্রামে এসে আমাদের খুনের হুমকি দিচ্ছে। এ ভাবে বেঁচে থাকা অসম্ভব। পড়শিদের পরামর্শে জেলাশাসক থেকে এসডিও, বিডিও-র কাছে সাহায্য চেয়ে আমরা আর্জি জানিয়েছি।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘পরিশ্রম করে ইটের গাঁথনির বাড়ি করেছিলাম। সেই বাড়িতে কি আর ফিরতে পারব না?’’
অভিযোগ ওঠা তিন ব্যবসায়ীর মধ্যে চণ্ডী পালের দাবি, ‘‘অংশীদারি ব্যবসায় আমি এখন আমি নেই।’’ ব্যবসায়ী তপন আচার্যের দাবি, ‘‘সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। ভাটার অংশীদার খোকন মান্ডি নিজেও। নিয়মিত তাঁকে ভাড়ার টাকা দিই। জমির খাজনার টাকাও মিটিয়েছি। খোকনবাবু ইচ্ছা করে শ্বশুরবাড়িতে আছেন।’’ আর এক ব্যবসায়ী সুধাময় নন্দীর দাবি, ‘‘অন্য কোনও ব্যবসায়ীর প্ররোচনায় মিথ্যা অভিযোগ করেছেন খোকনবাবু।’’ খোকনবাবুর বক্তব্য, ‘‘সত্য-মিথ্যা প্রশাসন বিচার করুক। কেউ কি সাধ করে ভিটে ছাড়ে?’’
বিষ্ণুপুর থানার আইসি শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ দিনই প্রথম এসডিও-র কাছে ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পারি। আমরা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy