Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Ilambazar

ধানের গোলা আজও জোগায় পুজোর খরচ

উৎপাদিত ধান এসে গোলায় জমা হবে। সেই ধান থেকেই চলবে পুজোর খরচ। এখনও সেই রেওয়াজ চালু। করোনা আবহেও সেই রীতির কোনও পরিবর্তন হয়নি।

সরায় আঁকা লক্ষ্মীর বিকিকিনি। সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

সরায় আঁকা লক্ষ্মীর বিকিকিনি। সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

দয়াল সেনগুপ্ত 
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ০০:২০
Share: Save:

লক্ষ্মী শস্যের দেবী। গোলাভরা ধান—গ্রাম বাংলায় প্রচলিত এই কথাটি শুনলেই কল্পনায় লক্ষ্মীর ছবি ভেসে উঠে। মনে করিয়ে দেয় গৃহস্থের সমৃদ্ধির কথা। ইলামবাজারের শীর্ষা গ্রামে নায়কদের দুর্গা মন্দিরে যাওয়ার পথে বিশাল গোলাটি যেন তারই প্রকৃত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে। আজও।

দোতলা গোলাটির গঠন শৈলীতে ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্যের চিহ্ন স্পষ্ট। সবচেয়ে যেটা আকর্ষণীয়, সেটা হল গোলার উপরে সিমেন্ট ও কলি চুন দিয়ে তৈরি একটি দুধ সাদা লক্ষ্মী মূর্তি। যা রানি ভিক্টোরিয়ার আদলে গড়া। নায়কবাড়ির বর্তমান বংশধরেরা জানাচ্ছেন, পারিবারিক দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো থেকে জয়দেব মেলার সময় আখড়ার খরচ— সবই এখনও চলে গোলার ধান থেকেই। অতীতের সাক্ষ্য বহনকারী অনেক কিছুই ছড়িয়ে রয়েছে এই শীর্ষা গ্রামটিতে। সেগুলির অন্যতম, নায়কপরিবারে ধানের মস্ত গোলাটি। এক সময় কয়েক হাজার বিঘা সম্পত্তির মালিক নায়কদের জমিদারি আর নেই। তবে এক হাজার বস্তা ধান রাখার ক্ষমতা সম্পন্ন গোলা আজও জমিদার বাড়ির অতীত প্রতিপত্তির সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে।

পরিবারের প্রবীণ সদস্য রথীন নায়ক জানালেন, অজয় নদ ঘেঁষা শীর্ষা গ্রাম প্রসিদ্ধ ছিল লোহার সামগ্রী তৈরির জন্যে। অজয় পেরিয়ে যা পৌঁছে যেত বর্ধমান হয়ে কলকাতায়। নায়কদের পূর্বপুরুষেরাও যুক্ত ছিলেন সেই ব্যবসায়।

অবস্থা ফিরেছিল তাতেই। পূর্বপুরুষ রামকল্প নায়ক ও তাঁর পাঁচ ছেলের আমলেই প্রভাব প্রতিপত্তি। প্রায় তিন হাজার বিঘের সম্পত্তির মালিক হন তাঁরা। শুরু হয় পারিবারিক দুর্গাপুজো, লক্ষ্মী পুজো। তৈরি হয় দুর্গামন্দির, শিব মন্দির এবং বিখ্যাত সেই ধানের গোলা।

পুজো চালাতে যাতে বেগ না পেতে হয়, সেই কারণেই তৈরি হয়েছিল গোলাটি। বর্ধমান থেকে আইনের লোক আনিয়ে গঠিত হয় ট্রাস্ট। উদ্দেশ্য, উৎপাদিত ধান এসে গোলায় জমা হবে। সেই ধান থেকেই চলবে পুজোর খরচ। এখনও সেই রেওয়াজ চালু। করোনা আবহেও সেই রীতির কোনও পরিবর্তন হয়নি।

নায়কদের পারিবারিক ইতিহাস বলছে, রামকল্পের পাঁচ ছেলে দক্ষিণেশ্বর, রজনীকান্ত, শৈলজাকান্ত, পশুপতি ও রামহরি। প্রথম দু’জন অপুত্রক ছিলেন। বাকিদের বংশধরেরাই এখন নায়ক পরিবারের বর্তমান সদস্য। শরিক সংখ্যা ১২ জন। পারিবারিক সদস্য সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়েছে। বর্তমান শরিকেরা বলছেন, ধানের গোলায় এখন ট্রাস্টের নামে থাকা প্রায় ১০০ বিঘা জমির ধান এসে জমা হয়। সেখান থেকেই চলে খরচ। পকেটের একটি পয়সাও খরচ হয় না। দুর্গাপুজো যথেষ্ট জাঁক করে হয়। দুর্গা মন্দিরেই প্রতিমা গড়ে হয় লক্ষ্মীপুজো। এ বারও হবে। বুধবারই মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ার কাজ শেষ পর্যায়ে। রং হয়ে হয়ে গিয়েছে। এখন অপেক্ষা দেবীকে সাজিয়ে তোলার। শরিকরা জানালেন, অন্যান্য বার লক্ষ্মীপুজোর সময়ে ঘটা করে প্রসাদ খাওয়ানোর চল আছে। করোনা আবহে সেটা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হবে।

পরিবারের বধূ উমা নায়ক, ঝুমা নায়ক, রুম্পা নায়ক বা মেয়ে সীমা উপাধ্যায়রা বলছেন, ‘‘দুর্গাপুজো থেকে লক্ষ্মীপুজো কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে কাটে। করোনা নিয়ে কিছুটা জড়তা থাকলেও আনন্দে কোনও খামতি হবে না। সব কিছুর মূলে লক্ষ্মীর ওই ধানের গোলা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ilambazar Laxmi Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy