বড়জোড়া কলেজের অফিসে ভাঙচুরের পরে। —নিজস্ব চিত্র
কলেজ-ফেস্টের দিনক্ষণ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই বড়জোড়া কলেজে টিএমসিপি-র ইউনিয়নের মধ্যে মতভেদ চলছিল। সেটাই বেআব্রু হল সোমবার। এ দিন দুপুরে প্রথমে কথা কাটাকাটি, অচিরেই একে অপরের উপরে চড়াও হয়। চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার ফেলে কলেজের অফিসে ভাঙচুরও চালানো হয়। টিএমসিপি-র ইউনিট সভাপতি স্নেহা মুখোপাধ্যায়ের দাবি, বহিরাগতরা কলেজে ঢুকে ছাত্রদের মেরেছে, ভাঙচুর করেছে। একই অভিযোগ সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্তেরও। কলেজের তরফেও নাম না করে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ হয়েছে। পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা জানান, রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
সোমবার দুপুরের এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় কলেজে। অধ্যক্ষ অরুণকুমার রায় এ দিন কলেজের কাজেই বর্ধমানে গিয়েছিলেন। তাঁর বদলে দায়িত্বে ছিলেন অমিতকুমার সেন। অমিতকুমারবাবু বলেন, “অচেনা কিছু ছেলে কলেজের অফিসে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে। থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।” একই অভিযোগ কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা বাঁকুড়া সদরের মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালার। তিনি বলেন, ‘‘আমি ফোনে পুলিশ সুপারকে ঘটনাটি জানিয়ে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’
এ দিনের ঘটনার জন্যে কারা দায়ী, খোঁজ নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী। জয়ার কথায়, ‘‘শিক্ষাঙ্গনে অশান্তি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।’’
কলেজ সূত্রে জানা যাচ্ছে, এ বছর কলেজ-ফেস্ট না হওয়ায় টিএমসিপি-র ছাত্রছাত্রীরা ক্ষুব্ধ। এ দিকে, নভেম্বরে নাকের দল এই কলেজ পরিদর্শনে আসছে। ফেস্ট নাক পরিদর্শনের আগে হবে, না পরে— তা নিয়ে দলের মধ্যেই বিরোধ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি কলেজে বৈঠক করে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক নিজে। তিনি বলেন, “বৈঠকেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল ফেস্ট হবে নাক পরিদর্শনের পরে। সকলেই এতে সহমত হয়েছিলেন।” টিএমসিপি নেত্রী স্নেহার সরাসরি অভিযোগ, “কলেজেরই কিছু প্রাক্তন ছাত্র এখনও কলেজের নানা বিষয়ে নাক গলায়। তারা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি।” স্নেহা বলতে না চাইলেও ইউনিয়নের অনেকেই মেনেছেন, এরাও সকলেই টিএমসিপি-র। এক ছাত্রের প্রশ্ন, ‘‘ফেস্ট নাক ঘুরে যাওয়ার পরে হলে তো কোনও ক্ষতি নেই। তা হলে শুধুশুধু বিবাদ কেন?’’
প্রত্যক্ষদর্শী কলেজ পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, এ দিন দুপুরে কলেজের মধ্যে ঢুকে কলেজের প্রাক্তনী তথা বহিরাগতেরা প্রথমে ফেস্ট পিছিয়ে দেওয়ার জন্যে কলেজের পড়ুয়াদের দায়ী করে। সেখান থেকেই এ দিনের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। বহিরাগতদের সঙ্গে কলেজের পড়ুয়াদের বচসা শুরু হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয় ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ। গোটা ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় কলেজের ভিতরে। কিছু বহিরাগত ছেলে কলেজের অফিসে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। অফিসের চেয়ার টেবিল, কম্পিউটার উল্টেপাল্টে দেয়। তারপরেই দ্রুত বহিরাগত টিএমসিপি-র ছেলেরা চলে যায় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এই ঘটনায় দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন জখম হয়। জখমরা বড়জোড়া ব্লক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করায়। মালিয়াড়ার বাসিন্দা বহিরাগত সুকমল দাসের চোট বেশি থাকায় তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের সভাপতি স্নেহার কথায়, “বহিরাগত ছেলেরা কলেজে ঢুকে কলেজের ছাত্রদের উপর মস্তানি করে। আমরা বারবার এ নিয়ে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু বহিরাগতদের ঢোকা বন্ধ হয়নি।” বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীমবাবুর আশ্বাস, “ওই কলেজে যাতে বহিরাগতদের ঢুকতে না দেওয়া হয় অধ্যক্ষকে তা দেখতে বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy