গত অর্থবর্ষে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ খরচে ‘ব্যর্থ’ হয়েছে জেলা পরিষদ। বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরুর মধ্যেই জেলা পরিষদের সদস্য, কর্মাধ্যক্ষ এমনকি সভাধিপতির কাজকর্ম নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, জেলা পরিষদের কাজকর্ম নিয়ে জেলা নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই মতো পদক্ষেপ শুরু করেছেন জেলা নেতৃত্ব।
পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ প্রায় ৫১ কোটি টাকা পেয়েছিল। পড়ে প্রায় অর্ধেকই। সেই অর্থ ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের জেলার এক শীর্ষ নেতা জানান, বছর ঘুরলেই বিধানসভা ভোট। মূলত উন্নয়নমূলক কাজকে ভিত্তি করে নির্বাচনে যাবে দল। তার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই নেতার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী বরাদ্দ অর্থ যথাযথ ভাবে এলাকার উন্নয়নে খরচের নির্দেশ দেওয়ার পরেও বড় অঙ্কের অর্থ জেলা পরিষদ খরচই করতে পারেনি। বিষয়টি নজরে এসেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।”
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বিশদ তথ্য জানতে জেলা সভাপতির অফিস থেকে ফোন যাচ্ছে জেলা পরিষদের নানা স্তরের সদস্যদের কাছে। বরাদ্দ খরচে কেন ব্যর্থ হয়েছে জেলা পরিষদ, সে ক্ষেত্রে কোন কর্মধ্যক্ষের কী ভূমিকা ছিল, দলের সদস্যদেরই বা ভূমিকা কী ছিল, প্রকল্প রূপায়ণে দরপত্র ডাকা নিয়ে বেনিয়ম হয়েছে কি না, সেখানে কোনও কর্মাধ্যক্ষ প্রভাব খাটিয়েছেন কি না, এমন নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দলের বিশেষ সূত্রে খবর, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা গিয়েছে, জেলা পরিষদে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় বেশি কাজ করিয়েছেন। বরাদ্দের সমবণ্টন হয়নি। কিছু সদস্য তাঁদের এলাকায় হওয়া উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে থাকার অভিযোগও তুলেছেন জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত, বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির রূপরেখা স্থির করতে এই রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। জেলা পরিষদের সদস্যদের কাজ বিবেচনা করে নির্বাচনে কাকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করানো হবে, তা-ও স্থির করতে পারেন তাঁরা। জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের কাজকর্ম, বিশেষ করে অর্থ খরচ নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন নেতৃত্ব। জেলা পরিষদের কাজকর্ম পরিচালনায় কী সমস্যা হচ্ছে, কোন কর্মাধ্যক্ষের কী ভূমিকা, সদস্যদের সক্রিয়তা কতটা—সব দিক খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেওয়া হবে।”
ঘটনায় কটাক্ষ ছুড়েছে বিরোধী শিবিরও। বিজেপির জেলা পরিষদের সদস্য সমীর বাউরি বলেন, ”তৃণমূলের সদস্য ও কর্মাধ্যক্ষদের ব্যর্থতা, দুর্নীতির জন্য জেলায় জলকষ্টের সমস্যা মেটাতে বরাদ্দ অর্থ জেলা পরিষদ খরচ করতে পারেনি। এর দায় তাঁদেরই নিতে হবে।”
সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতোর দাবি, “জেলা পরিষদের কাজকর্ম নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের রিপোর্ট চাওয়ার বিষয়টি জানা নেই। তা ছাড়া, এটি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে জেলা পরিষদের কাজকর্ম পরিচালনায় কোনও গাফিলতি হয়নি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)