প্রার্থী তালিকায় নাম ঘোষণার পরে অনুব্রতর সঙ্গে ওমর।—নিজস্ব চিত্র।
গত বৃহস্পতিবার, পুলিশ পেটানোয় চার্জশিটে নাম থাকা শেখ ওমর আত্মসমর্পণ করার পরই বিরোধী শিবির যে অনুমান করেছিল, সত্যি হল তাই। অভিযুক্ত ওমরকেই পুরভোটে প্রার্থী করল তৃণমূল। রবিবার তৃণমূল জেলার তাদের চারটি পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলে, দেখা যায় প্রার্থী তালিকায় নাম রয়েছে, ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত সুদীপ্ত ঘোষের স্ত্রীরও। ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতে নতুন মুখ থাকলেও দলের সচিবের দাবি নসাত্ করে প্রার্থী হয়েছেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ।
রবিবার বিকেলে শাসক দল বোলপুরে তাদের দলীয় কার্যালয়ে কার্যত বিরোধীদের অনুমানকেই শিলমোহর দিল। পুরভোটের দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা শেষে, বোলপুর পুরসভার দলীয় প্রার্থী হিসেবে আট নম্বার ওয়ার্ড থেকে শেখ ওমর এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে অভিযুক্ত প্রাক্তন যুব নেতা সুদীপ্ত ঘোষের স্ত্রী পর্ণা ঘোষকে প্রার্থী করল। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার ওই সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। পাশে ছিলেন মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ সিংহ, বিধায়ক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। সাসপেন্ড হওয়া দলীয় বিধায়ক স্বপন ঘোষ প্রসঙ্গ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি অনুব্রত। নানা ঘটনায় অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের নিয়ে এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেন তিনি।
বৃহস্পতিবারই নিজের এক সঙ্গী সহ বোলপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন পুলিশ পেটানোয় অভিযুক্ত শাসকদলের সংখ্যালঘু সেলের বীরভূম জেলা সভাপতি শেখ ওমর। সে দিনই জেলার বিজেপি এবং সিপিএম নেতৃত্ব আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, ছ’মাস পর্যন্ত শহরে হাটে-বাজারে ঘুরে বেরিয়ে প্রকাশ্যে সভা সমিতি করলেও, শাসকদলের নেতা-কর্মী বলে পুলিশ অভিযুক্তদের টিকি ছুতে পারেনি। তাঁদের অনুমান ছিল, “তৃণমূল এবং পুলিশ যোগসাজশ করে পুরভোটের আগে এমন নাটক করছে। ঘটনার দিন দুয়েকের মধ্যই এই ঘটনায় পুলিশ চার্জশিট পেশ করবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। তখন ছাড়া পেয়ে, পুরভোটে দাঁড়াবে এবং দলীয় প্রার্থীদের সহায়তা করার অভিযুক্তরা।”
বিরোধীদের সেই আশঙ্কা সত্যি হয়, পুলিশ আদালতে চার্জশিট পেশ করায় এবং অভিযুক্তেরা জামিন পাওয়ায়। এখন সুদীপ্ত ঘোষ এবং তাঁর শাগরেদরাও জামিনে ছাড়া পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁরা। ঘটনা হল, সুদীপ্তর স্ত্রী এবং শেখ ওমর যে এ বার প্রার্থী হচ্ছেন, তার খবর রটেছিল অনেক আগেই। সেখ ওমর যে ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়েছেন, সেই ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর দেওয়াল লিখনও হয়ে গিয়েছিল আত্মসমর্পণের আগেই। দলের অন্দরের খবর, সুদীপ্ত অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই তাঁর স্ত্রীকে প্রার্থী করেছে দল।
এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য অভিযুক্তদের নাম এবং তাঁদের নিকট আত্মীয়দের নাম প্রার্থী তালিকায় থাকা প্রসঙ্গে অনুব্রতবাবু বলেন, “ওঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তবে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। সবাই তো আর দোষী সব্যস্ত হননি।” সিউড়ি পুরসভায় দলের সাসপেন্ড বিধায়ক স্বপন ঘোষ সরব হয়েছেন দুর্নীতি নিয়ে। পুরভোটে তার প্রভাব নিয়ে অনুব্রতবাবু বলেন, “ও পাগল। পাগল কি না বলে, ছাগল কি না খায়ে।” পরে তাঁর সংযোজন, “উন্নয়ন শেষ কথা বলবে। উন্নয়নই আমাদের হাতিয়ার। সবক’টি পুরসভার বোর্ড দখল করবো আমরা।”
প্রাক্তন এবং প্রাক্তনদের পরিবার ও সাংগঠনিক নেতাদের প্রার্থী করেছে তৃণমূল। সিউড়ি পুরসভার জন্য বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী, রামপুরহাট পুরসভার জন্য মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, সাঁইথিয়া পুরসভার জন্য বিধায়ক মনিরুল ইসলাম এবং বোলপুর পুরসভার জন্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকে দলীয় নির্বাচনী সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন অনুব্রত। তৃণমূলের একটা বড় অংশ মনে করছে, এ দিন দুধকুমার মণ্ডল জেলা বিজেপির সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেবার পর পুরভোটে তাঁদের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সুবিধাই করে দিল। অনুব্রতবাবুও এ দিন জানিয়ে দেন পুরভোটে তিনি বিজেপিকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবতে নারাজ। তিনি বলেন, “বিজেপি বলে কিছুই নয়। সিপিএম আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী।” বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল তৃণমূলে আসতে চাইলে?
অনুব্রতর উত্তর, “বিষয়টি দলের আলোচ্য। কমিটিতে আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy