Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

পুলিশের বিরুদ্ধে ফুঁসছে ঠিবা

কেউ বললেন, ‘‘রাতে গোলাগুলির চোটে বাড়িতে ঘুমোতে পারছি না।’’ কেউ বললেন, ‘‘বিপদের আশঙ্কায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পর্যন্ত পাঠাতে পারছি না।’’ আবার কোনও অশান্তিই নেই বললেন কেউ কেউ।

অত্যাচারের বর্ণনা দিচ্ছেন ঠিবা গ্রামের মহিলারা। (ডান দিকে) ভাঙচুরের পরে। শুক্রবার সকালে ছবিগুলি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

অত্যাচারের বর্ণনা দিচ্ছেন ঠিবা গ্রামের মহিলারা। (ডান দিকে) ভাঙচুরের পরে। শুক্রবার সকালে ছবিগুলি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৫
Share: Save:

কেউ বললেন, ‘‘রাতে গোলাগুলির চোটে বাড়িতে ঘুমোতে পারছি না।’’ কেউ বললেন, ‘‘বিপদের আশঙ্কায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পর্যন্ত পাঠাতে পারছি না।’’ আবার কোনও অশান্তিই নেই বললেন কেউ কেউ। তবে তা যে শেখানো কথা তা বুঝে গেলেন প্রশাসন থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। ঘটনাস্থল লাভপুরের ঠিবা। কার্যত ভোটের মুখে পুলিশি অত্যাচারে ফুঁসছে ঠিবা।

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি মিরিটিও ওই পঞ্চায়েতেরই অধীন। তল্লাশির নামে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের পুলিশি তাণ্ডবের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এ দিন অতিরিক্ত জেলাশাসক নিবিল ঈশ্বারারি, লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর একদল জওয়ান সকাল ১০ টা নাগাদ ওই গ্রামে যায়। গ্রাম ঢোকার মুখে প্রথমেই তাঁরা যান মহাদেব মণ্ডলের বাড়ি।

বাহিনী গ্রামের এক পড়শির বাড়িতে ঢুকেছে দেখে এলাকার মানুষ অবাকই হয়। একটু পরেই বুঝতে পারেন গ্রামের হাল জানতে বাহিনী ঢুকেছে। সেখান থেকে তমালকৃষ্ণ মণ্ডলের বাড়ি হয়ে হাজির হন পশ্চিমপাড়ার জয়মা তারা ক্লাবে। ক্লাবের সামনে তখন হাজির ছিলেন মনোতোষ সাহা নামে এক যুবক। প্রশাসনিক কর্তারা কেউ তাঁদের ভয় দেখাচ্ছে কিনা জাতীয় প্রশ্ন করতেই সকলেই প্রায় এক সুরে জানিয়ে দেন, তাঁদের কোনও সমস্যা নেই। তাঁরা যে শেখানো কথা বলছেন তা টের পাওয়া যায় লাগোয়া মাঝপাড়ায় গিয়ে। সেখানেই তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুকান্ত পালের বাড়ি। তখন তাঁর বাড়িতেই হাজির ছিলেন ওই গ্রামেরই তৃণমূলের আর এক পঞ্চায়েত সদস্য কাকলি বাগদি-সহ জনা চল্লিশ পুরুষ মহিলা। তাঁরা এক যোগে অভিযোগ জানান, সিপিএমের দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে বোমা বন্দুক নিয়ে ঘুরছে। আর ভোটের দিন বাইরে বের হলে প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এমনকী দুষ্কৃতীদের হুমকি থেকে বাঁচতে ওই দুই পঞ্চায়েত সদস্য ইস্তফা দেওয়ার কথাও জানান বিডিও-কে।

দোলের দিন দলীয় পতাকা টাঙানোকে কেন্দ্র করে এলাকায় সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের ঝামেলা বাঁধে। সানোতোষ বাগদি নামে এক তৃণমূল কর্মীর মাথা ফাটানোর অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। শ্যামাপদ বাগদি, প্রভাস বাগদি, পূর্ণচন্দ্র বাগদিদের বাড়িতে চাল, আটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এলোমেলো হয়ে রয়েছে ঘরের আসবাবপত্র।

আরাধনা বাগদি, লতিকা বাগদি, আশালতা বাগদিরা বলেন, ‘‘আমরা সিপিএম করি বলেই পুরুষদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। আর তাদের ধরার জন্য রাতে পুলিশ বাড়িতে এসে ভাঙচুরই শুধু করেনি, আমাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজও করেছে। এলাকার দখল নিতে ওরা রাতে পুলিশ পাঠাচ্ছে। আর দিনের বেলা বোমা-বন্দুক নিয়ে শাসিয়ে বেড়াচ্ছে।’’ তাঁদের দাবি, এসবই লাভপুরের বড়বাবুর নেতৃত্বে হচ্ছে। পাল্টা অভিযোগ করেছেন এলাকার বাসিন্দা নমিতা বাগদি, সোনামুখী বাগদিরা। তাঁদের দাবি, তাঁরা তৃণমূল করেন। সিপিএমের দুষ্কৃতীরা বোমা বন্দুক নিয়ে গ্রাম টহল দিচ্ছে। বাহিনী গ্রামে আসার খবর পেলেই মাঠ কিংবা নদীর ধারে গা ঢাকা দিচ্ছে। ভয়ে আমরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পর্যন্ত পাঠাতে পারছি না।

‌ঘটনা হল, ঠিবা গ্রামটি একসময় ছিল সিপিএম তথা বামেদের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। ওই গ্রাম থেকেই একাধিকবার বিধায়ক হয়েছেন রাধানাথ চট্টোরাজ, সুনীল মজুমদারেরা। সুনীলবাবু সিপিএমের জেলা সম্পাদক এবং মন্ত্রীও হয়েছিলেন। ওই পঞ্চায়েতেরই কল্যাণপুরের আয়ুব সেখ বিডিও অফিসে রেশন কাণ্ডে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান। তারপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাড়িতে যান। কার্যত তারপর থেকেই ওই এলাকায় তৃণমূলের প্রভাব বাড়ে। বিনা প্রতিন্দ্বন্দিতায় পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। তারপরই এলাকায় সিপিএম কার্যত ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এবারে অবশ্য ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল দেওয়াল লিখন থেকে ফ্লেক্স, ফেস্টুনে সমানে টক্কর দিচ্ছে। ‘সিপিএম করি’ বলার মতো লোকের সংখ্যাও কম নেই। ওই আবহেই এখন পঞ্চায়েত সদস্যদেরও ইস্তফা দেওয়ার কথা বলতে হচ্ছে। স্বভাবতই শাসক দলের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। তার উপরে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন কিছু বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীও। মরিয়া সিপিএমও। কারণ সবাই জেনে গিয়েছেন, ভোটার নয়, এলাকার দখল যার ভোট তার।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy