শান্তিনিকেতনের এই কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেট নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বভারতী। নিজস্ব চিত্র ।
কিছুদিন আগেই শান্তিনিকেতনে থাকা কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেট সরানোর আবেদন জানিয়ে জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছিল বিশ্বভারতী। তার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের তরফে সম্প্রতি ওই জায়গাটি কী অবস্থায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মাঝে এ বার বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতোর বাড়ি বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের ‘বাফার জ়োন’-এর মধ্যে রয়েছে দাবি তুলে পাল্টা উপাচার্যকে চিঠি দিলেন কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন কর্মসচিব।
সব মিলিয়ে, বিশ্বভারতী এবং কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরও একবার সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। বোলপুর শান্তিনিকেতন রাস্তার উপরে থাকা ওই হস্তশিল্প মার্কেট তাঁদের জায়গা বলে দাবি করে এসেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাঁদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা বিশ্বভারতীর জায়গা জবরদখল করে বসে আছেন। সম্প্রতি বিশ্বভারতী ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব ওই মার্কেট সরিয়ে দেওয়ার জন্য জেলাশাসককে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন।
শুধু তাই নয়, দিন কয়েক আগে হস্তশিল্প মার্কেট চত্বরে পুরসভার উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তি বসানো নিয়েও আপত্তি জানায় বিশ্বভারতী। তাদের যুক্তি, ইউনেস্কো শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। যেখানে রবীন্দ্র-মূর্তি বসানো হয়েছে, সেটি হেরিটেজ বাফার জ়োনের মধ্যে রয়েছে।
এ ছাড়াও বিশ্বভারতীর কর্মসচিব বিবৃতি দিয়ে জানান, এই প্রতিষ্ঠান মূর্তিপুজো ও ব্যক্তিপুজো বিরোধী। এখানে আশ্রম প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ বা বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথের কোনও মূর্তি প্রকাশ্য স্থানে নেই। বিশ্বভারতী এই প্রশ্ন তোলার পরেই কবি-মূর্তি উন্মোচনের নির্ধারিত অনুষ্ঠান স্থগিত করে দেয় পুরসভা।
এ বার বিশ্বভারতীর যুক্তি সামনে রেখেই ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিবের বাড়ি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের বাফার জ়োনের মধ্যে রয়েছে দাবি তুলে বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের সদস্যরা। চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেছেন, ‘হেরিটেজ ধরে রাখার ও সুরক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব বাফার জ়োন নিয়ে অভিযোগ করেছেন। আমাদের অভিযোগ, তাঁর বাড়িটিও হেরিটেজ এলাকা থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে।’ চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘রক্ষক যদি ভক্ষক হয় এবং পদাধিকার বলে যদি তদন্ত না-করা হয়, তা হলে মানুষের কাছে ভুলবার্তা পৌঁছবে’।
কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের ব্যবসায়ীদের তরফে আমিনুল হুদা বলেন, “শান্তিনিকেতনে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ এ দিন আমরা উপাচার্যকে জানিয়েছি। উপযুক্ত তদন্তের আশায় রয়েছি।” তবে বিশ্বভারতীর কর্মী ও অধ্যাপকদের অনেকেই বলছেন, ‘‘হেরিটেজ ঘোষণা হওয়ার অনেক আগে থেকে কর্মী, অধ্যাপক থেকে শুরু করে অনেকেরই শান্তিনিকেতনে বাড়ি রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগ ঠিক নয়।” ভারপ্রাপ্ত কর্মসসচিব অশোক মাহাতো বলেন, ‘‘আমার বাড়ি নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা কুরুচিকর, বোকা বোকাও। আমার বাড়ি বাফার জ়োনের মধ্যে নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এ ভাবে কাউকে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আক্রমণ করা উচিত নয়।’’
অন্য দিকে, প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মার্কেট সরানোর যে অনুরোধ বিশ্বভারতী করেছে, তার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জেলার পূর্ত দফতর এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে মার্কেটটি কী অবস্থায় রয়েছে, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক আধিকারিক বলেন ,“এই বিষয়ে জেলা থেকে একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy