চেনা ব্যস্ততার ছবিটা উধাও। সুনসান বাঁকুড়া আদালত চত্বর। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।
তীব্র গরমের জন্য স্কুলে ছুটির মেয়াদ বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। বাঁকুড়া জেলা আদালতের আইনজীবীরা অবশ্য নিজেদের কর্মবিরতির মেয়াদ নিজেরাই বাড়িয়ে নিয়েছেন। যুক্তিটা সেই গরমেরই!
তীব্র গরমের কারণ দেখিয়ে দু’সপ্তাহ আগে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন বাঁকুড়া আদালতের আইনজীবীরা। প্রথমে ঠিক ছিল সাত দিনের জন্য কর্মবিরতি হবে। কিন্তু সাত দিন পরে ফের বৈঠক ডেকে কর্মবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই বৈঠকে ঠিক হয়, এ দিন থেকেই আইনজীবীরা স্বাভাবিক নিয়মে কাজ শুরু করবেন আদালতে। গত দু’সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা বাঁকুড়া আদালতের আইনজীবীদের কর্মবিরতি শেষ হওয়ার কথা ছিল সোমবারই। এ দিন আদালতে কাজেও যোগ দিয়েছিলেন আইনজীবীরা। কিন্তু, আদালত বন্ধ হওয়ার পরে বৈঠক করে কর্মবিরতির মেয়াদ ফের শুক্রবার পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল বাঁকুড়া বার অ্যাসোসিয়েশন। বিষ্ণুপুর ও খাতড়া এসিজেএম আদালতেও কর্মবিরতির মেয়াদ বাড়িয়েছে সেখানকার বার অ্যাসোসিয়েশন।
এক দিকে আইনজীবীরা গরমের কারণে কর্মবিরতি শুরু করেছেন, অন্য দিকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। কেউ পুলিশ ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন, কেউ আবার জেলে বসে জামিনের জন্য ছটফট করছেন। উদ্বিগ ছড়িয়েছে বিচারপ্রার্থীদের পরিবারেও। বাঁকুড়া সদর থানার একটি গ্রামে স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির ছ’জনের বিরুদ্ধে। জামিন অযোগ্য ধারায় বাঁকুড়া মহিলা থানায় মামলা দায়ের করেছে বধূর বাপের বাড়ি। ঘটনার পর থেকেই পুলিশের ভয়ে ঘরছাড়া অভিযুক্তেরা। তাঁরা বাঁকুড়া জেলা আদালতে জামিনের আবেদনও করেছেন। শুক্রবার এই মামলার শুনানি। কিন্তু আইনজীবীদের কর্মবিরতির জেরে ওই দিন শুনানি হবে না। অভিযুক্ত ছ’জন তীব্র দাবদাহের মধ্যে এ-দিক ও-দিক লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন! তাঁদেরই এক জনের ক্ষোভ, “আদালত শুনানির দিন ঘোষণা করেছে। কিন্তু স্রেফ উকিলদের কর্মবিরতির জন্য শুনানি হবে না। এ দিকে পুলিশের হাতে এক বার ধরা পড়লে আমরা আর জামিনও পাব না। আর কত দিন এ ভাবে এর তার ঘরে লুকিয়ে বেড়াবো?’’ এই ঘটনায় অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্যার কথা মেনে নিয়েও বলছেন, “বিচারপ্রার্থীদের অসুবিধা হচ্ছে আমরা জানি। কিন্তু বার অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা তো যেতে পারি না।’’
আদালত সূত্রে জানা যাচ্ছে, জামিনযোগ্য মামলায় ধৃতদের ক্ষেত্রে পি আর বন্ডে জামিন দিচ্ছে আদালত। তবে, জেল হেফাজতে বহু বিচারপ্রার্থী রয়েছেন, যাঁরা জামিন পেতে পারতেন। কিন্তু, কোনও মামলার শুনানিই তো হচ্ছে না! এক আইনজীবীর কথায়, “আমার মক্কেল এক বৃদ্ধার সম্পত্তি জোর করে দখল নেওয়া হচ্ছে। তিনি আদালতের দারস্থ হতে চান। কিন্তু এই পরিস্থিতির জন্য তাঁকে আইনজীবীদের কর্মবিরতি ওঠার অপেক্ষায় দিন গুনতে হচ্ছে।’’ ঘটনা হল, বাঁকুড়া বার অ্যাসোসিয়েশনের এই কর্মবিরতির মেয়াদ বারবার বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবীদেরই একাংশ। তাঁদের যুক্তি, এর ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি আইনজীবীদেরও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাঁকুড়া আদালতের এক আইনজীবী বলেন, “আদালত জরুরি পরিষেবার জায়গা। এখানে সমস্ত স্তরে একসঙ্গে কর্মবিরতি করাটা ঠিক নয়।’’
যদিও বাঁকুড়া বার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি তাপস চৌধুরীর দাবি, “কর্মবিরতিতে সায় দিয়েছেন সমস্ত আইনজীবীই। আমরা তাঁদের মতামত নিয়েই পদক্ষেপ করেছি।’’ তাঁর যুক্তি, বাঁকুড়া আদালতে একটি কোর্ট রুম থেকে আর একটি কোর্ট রুমের দূরত্ব অনেকটা। গরমের জন্য একটি রুম থেকে অন্য রুমে যেতে সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া পানীয় জলেরও সমস্যা রয়েছে আদালত চত্বরে।
তাঁর আরও দাবি, “তীব্র গরমে শুধু আইনজীবী নয়, বিচারপ্রার্থীদেরও দূর-দূরান্ত থেকে আদালতে আসা যাওয়া করা সমস্যার। তাই কর্মবিরতিতে তাঁদেরও লাভ হচ্ছে।’’ যদিও বিচারপ্রার্থীদের বেশির ভাগের গলাতেই শোনা যাচ্ছে উল্টো সুর। দ্রুত কর্মবিরতি তুলে আদালত ফের কবে সচল হয়, সে দিকেই তাকিয়ে সবাই। অথচ এ ব্যাপারে তাঁরা পুরোপুরি অসহায়। তাপসবাবুর আশ্বাস, “আগামী সোমবার থেকেই আমরা কাজে যোগ দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy