বিপত্তি: এই খেলনা কচ্ছপই আটকেছিল গলায়। (ইনসেট) সেই শিশু। —নিজস্ব চিত্র
মাস আটেকের শিশুর গলায় আটকে গিয়েছিল প্লাস্টিকের খেলনা কচ্ছপ। যন্ত্রণায় নেতিয়ে পড়ছিল শিশুটি। নীল হতে শুরু করেছিল ছোট্ট শরীর। শুরু হয়ে গিয়েছিল শ্বাসকষ্ট। মাথায় হাত পড়েছিল বাবা-মায়ের।
সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যে জেলা হাসপাতালে এমন অস্ত্রোপচার করা যায় কি না, এই নিয়ে যখন নানা কথা চলছে তখন সকলকে স্বস্তি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে শিশুর গলায় আটকে থাকা খেলনা বের করে আনলেন চিকিৎসকেরা। বুধবার এমন কাজই করেছেন সিউড়ি জেলা হাসপাতালের নাক, কান-গলা (ইএনটি) বিশেষজ্ঞ অর্ণব দত্ত। তবে অস্ত্রোপাচারের পরেও শিশুর অবস্থা ভাল ছিল না। সেই সময় পাশে দাঁড়ান হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞরা।
সিউড়ি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও শুভ মুর্মু নামে পড়শি ঝাড়খণ্ড থেকে আসা শিশুটি সুস্থ আছে। বিরল না হলেও ওই অস্ত্রোপচারে যে যথেষ্ট ঝুঁকি ছিল সে কথা মানছেন হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকেরা। ছোট্ট শিশুকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ায় চিকিৎসকের প্রতি কৃতজ্ঞ শুভর পরিবার।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভ নামে একরত্তি শিশুটির বাড়ি ঝড়খণ্ডের দুমকা থানার বেলুপতি জামা গ্রামে। প্রান্তিক আদিবাসী পরিবারের ওই শিশুটি বুধবার সকালে কোনও ভাবে হাতের নাগালে থাকা প্লাস্টিকের খেলনাটি গিলে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। ছেলের এমন অবস্থা দেখে বাবা জয় মুর্মু দুমকা সদর হাসপাতাল সহ চারটে হাসপাতাল ঘুরে ছেলেকে নিয়ে দুপুরে যখন সিউড়ি হাসপাতালে পৌঁছন, তখন ছেলের যায়-যায় অবস্থা। তার মধ্যে আবার আরও দূরের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু, প্রান্তিক পরিবার ও ছোট্ট শিশুর কষ্ট দেখে অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নেন ওই চিকিৎসক।
কেন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল?
জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ইএনটি বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘‘সিস্টারদের কাছে খবর পেয়ে যখন শিশুটিকে দেখি তত সময়ে খুবই খারাপ অবস্থা। গলায় আটকে তিন বাই চার সেমি মাপের প্লাস্টিকের খেলনা কচ্ছপ। ক্রমাগত গলায় আটকে থাকা খেলনাটি গিলে ফেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু, এমন ভাবে সেটা আটকে ছিল যে নড়ছেও না। শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীকে আটকে দিয়েছিল। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। দেহ নীল হতে শুরু করেছে।’’ এই অবস্থায় অ্যানাস্থেশিয়া করারও উপায় ছিল না। কারণ, টিউব ঢুকবে কোন দিকে। সেই সময় কাজে এল ‘আসিল ফরসেপ’ নামের একটি উপাদান। গলার মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে খানিকটা হাওয়া-বাতাস চলাচলের রাস্তা করে ওই যন্ত্রের মাধ্যমে আটকে থাকা খেলনা বের করা হয়। অর্ণববাবুর সংযোজন, ‘‘খেলনা বের করার পরেও শিশুটির খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। ভাবলাম এ বার বর্ধমানে রেফার করি। কিন্তু, শিশুর বাবা আমার হাত ধরে বললেন যা করার আপনিই করুন। ওঁদের হাতে তখন মাত্র ৩০ টাকা। সেই সময় জেলা হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সহ সকলে পাশে দাঁড়ান।’’
জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, ‘‘সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা ও জেলা হাসপাতাল নিয়ে অনেকেই অনেক সময় নানা অভিযোগ তোলেন। তবে এটাও সত্যি জেলা ও পড়শি রাজ্যের বহু মানুষ এই হাসপাতালের উপরে নির্ভর করে থাকেন। চিকিৎসকেরাও নিজেদের উজার করে দেন। এ দিনের ঘটনা সেই আস্থা আরও বাড়াল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy