Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
রামপুরহাট হাসপাতালে ইসিজি করছেন চিকিৎসক

টেকনিশিয়ান কম, ধুঁকছে সিসিইউ

জনগণের করের টাকায় বিপুল খরচ করে হাসপাতালে পরিকাঠামো গড়া হল। অথচ সেই পরিকাঠামো যাঁরা চালাবেন, সেই টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ না করেই ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করে দেওয়া হল গোটা ইউনিটটির! ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৭
Share: Save:

জনগণের করের টাকায় বিপুল খরচ করে হাসপাতালে পরিকাঠামো গড়া হল। অথচ সেই পরিকাঠামো যাঁরা চালাবেন, সেই টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ না করেই ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করে দেওয়া হল গোটা ইউনিটটির! ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। ছ’জনের বদলে মাত্র এক জন টেকনিশিয়ানের উপর নির্ভর করে কোনও রকমে চলছে রামপুরহাট হাসপাতালের ‘ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট’। ওই পরিকাঠামো রোগীদের তেমন কাজেই আসছে না।

গুরুত্বপূর্ণ ওই ইউনিট নিয়ে এমনই নানা অভিযোগের শেষ নেই রোগী থেকে পরিজনদের মধ্যে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সেখানে কোনও সমস্যা নেই। চিকিৎসক ও নার্সদের দিয়েই নাকি তাঁরা প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিচ্ছেন। যা শুনে চিকিৎসক মহলের অনেকেই বলছেন, ‘‘ওই হাসপাতালে এমনিতেই প্রয়োজনের তুলনায় কম চিকিৎসক ও নার্স কম রয়েছেন। সেখানে রোগীর ভিড় সামলে তাঁদের দায়িত্বের অতিরিক্ত কাজের দিকে ঠেলে দেওয়াটা কতটা বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।’’ এর ফলে হাসপাতালের সার্বিক পরিষেবার মান কমাটাই স্বাভাবিক বলে দাবি তাঁদের।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, বছর দেড়েক আগে ১২ শয্যার ওই ইউনিটের উদ্বোধন হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় পাঁচ জন টেকনিশান নিয়োগ না হওয়ায় প্রথম থেকেই সমস্যায় ভুগছে ওই ইউনিট। তার জেরে এক জন মাত্র টেকনিশিয়ানকে নিয়ে চলতে সকলকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, ভেন্টিলেশন যন্ত্র চালানো, হার্টের জটিল সমস্যায় ভর্তি থাকা রোগীদের ইলেকট্রিক শক দেওয়া, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত এবিজি মেশিন— সবেতেই হাত লাগাতে হয় চিকিৎসক এবং নার্সদের। এমনকী, টেকনিশিয়ানের অভাবে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য ইউনিটের এইচডিইউ শয্যায় কম রোগী রাখা হতো। এর ফলে দীর্ঘ দিন ধরে এই ইউনিটের সমস্ত শয্যা ব্যবহার করা যেত না বলেই অভিযোগ।

পরবর্তী ক্ষেত্রে ইউনিটে ৭ জন চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়। নিযুক্ত হন ৮ জন (৭টি এখনও ফাঁকা) নার্সও। কিন্তু টেকনিশিয়ান, সেই এক জনই। এর পর থেকেই ইউনিটে চার জন করে রোগী ভর্তি হতে থাকেন। ভেন্টিলেশনে থাকার পরে রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে ইউনিটের মধ্যে থাকা এইচডিইউ ইউনিটের ৮টি শয্যাও ব্যবহৃত হতে থাকে। হাসপাতালের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মীর কথায়, ‘‘এর পরেও সমস্যা রয়েই যায়। কারণ, গোড়াতেই গলদ ছিল। টেকনিশিয়ানের অভাবে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। এমনকী, এমনওন ঘটেছে যে, পরিস্থিতি সামাল দিতেচিকিৎসকদেরও রোগীর ইসিজি করতে হয়েছে!’’ টেকনিশিয়ান না থাকায় একই ভাবে ইউনিটে থাকা রক্তের নানা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার দামী অ্যালাইজা যন্ত্রটি বর্তমানে হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

যদিও কোনও অভিযোগই মানতে চাননি হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের প্রধান রামকৃষ্ণ কর্মকার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সারা রাজ্যে যখন টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা হবে, তখন এই হাসপাতালেও নিয়োগ করা হবে। তবে, এই ইউনিটকে ভাল ভাবে পরিচালনার জন্য চিকিৎসকেরা টেকনিশিয়ানদের কাজগুলি করে নিচ্ছেন। এর জন্য কোনও অসুবিধা হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না।” আর হাসপাতালের সুপার সুবোধকুমার মণ্ডল জানাচ্ছেন, টেকনিশিয়ানের অভাবের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, ‘‘টেকনিশিয়ানের কেমন অভাব রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

CCU hospital Rampurhat Technician
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE