পরিচর্যা। লাভপুরের কাজিপাড়া গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
অধিকাংশের স্বামী দিনমজুর। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর হাল। শতছিন্ন সেই সংসারে ছাগল পালন করেই বাড়তি আয়ের আশা দেখছেন রশি দা বিবি, মায়া খাতুনরা।
লাভপুরের কাজিপাড়া গ্রামে রসিদাদের অভাবের সংসার। স্বামীর দিনমজুরি থেকে ভাল ভাবে সংসার চলে না। সংসারে একটু স্বাচ্ছন্দ্য আনতে স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ছাগল পালনের ব্যবসা শুরু করেন তাঁরা। শেড তৈরি করে, লোক রেখে এখন রীতিমতো রমরমিয়ে ব্যবসা চলছে তাঁদের। মাস পাঁচেকের মধ্যেই মোটা অঙ্কের লাভের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
বছর তিনেক আগে রসিদারা বারো জনে মিলে তৈরি করেন ‘মা, মাটি স্ব-নির্ভর গোষ্ঠী’। গত বছরের ডিসেম্বরে কাজীপাড়া উপসঙ্ঘ এবং ‘কম্প্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন’এর থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছাগল পালনের ব্যবসা শুরু করেন। ৭০ হাজার টাকা খরচ করে বিনা-শর্তে ১৫ বছরের জন্য লিজ নেওয়া একটি জায়গায় তৈরি করেন শেড। কেনা হয় ২২টি ছাগল। মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে দেখভালের জন্য নিয়োগ করা হয় এক কর্মীকেও। ইতিমধ্যেই বাচ্চা হয়ে ছাগলের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৫। গোষ্ঠীর সদস্যদের দাবি, সব মিলিয়ে ছাগলের দাম এখন আড়াই লক্ষেরও বেশি। ঋণ এবং কর্মীর বেতন-সহ অন্য খরচ মিটিয়েও লাভ বাবদ অন্তত এক লক্ষ টাকা হাতে থাকবে। শেড তো রয়েইছে। আগামী বছর ওই শেডে কাজ চলে যাবে। সেই হিসাবে লাভের পরিমাণও বাড়বে।
ওই হিসেবেই আশা দেখছেন গোষ্ঠীর সদস্যরা। স্বামী মইনুদ্দিনের দিন-মজুরির আয়ে কোনওরকমে চলে মায়া খাতুনের সংসার। তাঁদের এক মাসের মেয়ে রয়েছে। চিকিৎসক পুষ্টিকর খাবার খেতে বলেছেন। কিন্তু সামর্থ্য কই? একই অবস্থা রশিদা বিবিরও। তাঁর স্বামী ফিরোজ কাজীও দিনমজুর। সেই মজুরির আয়েই চলে সংসার-সহ তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনা। টাকাপয়সার অভাবে কোনও গৃহশিক্ষক রাখতে পারেননি। তাঁরা বলেন, ‘‘এত দিন টাকার অভাবে অনেক ইচ্ছেই অপূর্ণ থেকেছে। ছাগল পালন করেই এ বার সে সব ইচ্ছাপূরণ হবে।’’
গোষ্ঠীর দলনেত্রী নুরসিয়া বিবি, সহ দলনেত্রী তাহেরা খাতুনরা জানান, লাভের একটা অংশ প্রথম বছরে ব্যবসায় লাগাবেন। তা হলে পরের বার লাভের পরিমাণও বাড়বে। সেই টাকা থেকে যাতে প্রতিটি সদস্য মাসে নিয়মিত কিছু করে টাকা পান তা নিশ্চিত করা হবে। ঠিবা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মিঠুন কাজী জানান, বাড়িতে ছাগল পালন করেই অনেকের সংসার চলে যায়। কারণ ছাগল পালন যথেষ্ট লাভজনক। একটি ছাগল থেকেই বছরে গড়ে ছ’টি বাচ্চা মেলে। খাওয়ানোর খরচও বিশেষ নেই। মাঠের ঘাস আর গাছের পাতা খাইয়েই পালন করা যায়। মিঠুনের কথায়, ‘‘ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা উন্নত প্রথায় উন্নত প্রজাতির ছাগল পালন করছেন। তাই তাঁদের লাভের পরিমাণও ভাল হবে।’’ এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘আর্থ-সামাজিক স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে ওই গোষ্ঠী অন্যদের অনুপ্রেরণা দেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy