Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ডুবল উঠোন, ভাসল কজওয়ে

ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে কোথাও নিচুএলাকা জলমগ্ন হয়ে গেল। কোথাও ডুবে গেল কজওয়ে। শাক-সব্জিও জলে নষ্ট হতে শুরু করেছে। এ দিকে জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় শনিবার সকাল ১০টা থেকে মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে কংসাবতী নদীতে পাঁচ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু করেছে।

ক’দিনের বৃষ্টিতে ভরন্ত মুকুটমণিপুর জলাধারের ছাড়া জলে ভাসল খাতড়া-রানিবাঁধ রাস্তার কেচোন্দাঘাটের কজওয়ে। ব্যারিকেড করে থাকল পুলিশ। বন্ধ যাতায়াত।

ক’দিনের বৃষ্টিতে ভরন্ত মুকুটমণিপুর জলাধারের ছাড়া জলে ভাসল খাতড়া-রানিবাঁধ রাস্তার কেচোন্দাঘাটের কজওয়ে। ব্যারিকেড করে থাকল পুলিশ। বন্ধ যাতায়াত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৬
Share: Save:

ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে কোথাও নিচুএলাকা জলমগ্ন হয়ে গেল। কোথাও ডুবে গেল কজওয়ে। শাক-সব্জিও জলে নষ্ট হতে শুরু করেছে। এ দিকে জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় শনিবার সকাল ১০টা থেকে মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে কংসাবতী নদীতে পাঁচ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু করেছে। তবে এই জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণ বাঁকুড়ার কোনও ব্লকেই প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে দাবি প্রশাসনের।

কংসাবতী সেচ দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার (১) বিশ্বনাথ কুমার জানান, গত কয়েকদিনে তুমুল বৃষ্টিতে কংসাবতী ও কুমারী নদীতে জল বেড়েছে। সেই জল কংসাবতীর মুকুটমণিপুর জলাধারে জমা হয়েছে। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “কংসাবতীর মুকুটমণিপুর জলাধারে সর্বোচ্চ জলধারণ ক্ষমতা ৪৪১ ফুট। এ দিন দুপুর পর্যন্ত জলাধারে ৪২৩ ফুট জল মজুত রয়েছে (বিপদসীমা ৪৩৪ ফুট)। তাই পাঁচ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে।” তিনি জানান, এতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হবে না। কোনও এলাকা প্লাবিতও হবে না।

এ দিকে, কংসাবতীর জল রানিবাঁধের আকখুটা মোড়ের কাছে, কেচোন্দা ঘাটে নিচু সেতুর উপর দিয়ে বইতে থাকায় খাতড়া-রানিবাঁধ রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খাতড়া থেকে মুকুটমণিপুর, অম্বিকানগর হয়ে ঘুরপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে বাস, ট্রেকার-সহ সব গাড়িকে। এতে চরম সমস্যায় পড়েছেন নদীর দুই পাড়ে খাতড়া ও রানিবাঁধ ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা। কেচোন্দা ঘাটে কজওয়ের উপর দিয়ে জল বইতে শুরু করায় এ দিন রীতিমতো ব্যারিকেড করে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে খাতড়া ও রানিবাঁধ থানার পুলিশ।


বিষ্ণুপুরের প্রগতিপল্লিতে নিকাশির অভাবে ফি বছরের মতো এ বারও জল জমল।

যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, জলাধার থেকে যে নদীতে জল ছাড়া হচ্ছে তা আগাম জানানো হয়নি। এর ফলে খাতড়া থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে কেচোন্দা ঘাটে গিয়ে অনেক মোটরবাইক আরোহী, গাড়ি চালকদের ফিরে আসতে হয়েছে। ফলে ক্ষুব্ধ ওই রাস্তায় যাতায়াতকারী গাড়ি চালক ও বাইক আরোহীরা। রানিবাঁধের দেউলি শুক্লা হাইস্কুলের শিক্ষক সম্পদ খাঁড়াৎ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “খাতড়া থেকে প্রতিদিন মোটরবাইকে কেচোন্দা ঘাটের কজওয়ের উপর দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করি। এ দিনও যাচ্ছিলাম। কেচোন্দাঘাটে পুলিশকর্মীরা আমাদের আটকে ফিরে যেতে বলেন। কংসাবতী সেচ দফতর ও প্রশাসনের তরফে আগাম কিছু না জানানোয় এতটা পথ গিয়ে আমাদের ফিরে আসতে হল। এতে সময় নষ্ট হল।’’ তাঁদের দাবি, দেন্দুয়া মোড়ে ব্যারিকেড করে এটা জানানো হলে ভাল হতো। কংসাবতী সেচ দফতরের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, জল ছাড়ার বিষয়টি আগাম জানানো হয়েছে। খাতড়া ও রানিবাঁধ থানার টহলদারি পুলিশ নদীর দু’পাড়েই মোতায়েন রয়েছে। পুলিশের তরফে এ জন্য ব্যারিকেড করা হয়েছে। খাতড়া মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “যে পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে তাতে আশঙ্কার কিছু নেই। তবু আমরা সতর্ক রয়েছি।”


ওন্দার বাঁকি গ্রামে বৃষ্টিতে পচন ধরেছে পটলের ফুলে।

শুক্রবার রাত ও শনিবার সারাদিনের বৃষ্টিতে পুরুলিয়া জেলায় কংসাবতী, কুমারী ও টটকো নদীতে জলস্ফীতি ঘটেছে। মানবাজার ১ বিডিও সায়ক দেব বলেন, ‘‘টানা বৃষ্টিতে নদীগুলিতে জলস্ফীতি ঘটলেও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি। তবে জরুরি প্রয়োজনের জন্য জেলা থেকে আগাম ত্রিপল আনা হয়েছে।’’ মানবাজার ব্লকের বামনি থেকে কামতা যাওয়ার রাস্তায় একটি কজওয়ে গতবছরের বৃষ্টিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ওই রাস্তা আরও খারাপ হয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। বিডিও জানান, সরজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানবাজার ২ ব্লকের বোরো থেকে জয়পুর যাওয়ার রাস্তায় জয়পুরের কজওয়েতে জল উঠেছে। তবে শনিবার লোকজন ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করেন। বাসিন্দাদের আশঙ্কা বৃষ্টি না ধরলে ওই রাস্তায় যে কোনও সময় যাতায়াত বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এ দিকে, প্রবল বর্ষণে জল ঢুকল বিষ্ণুপুর শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রগতিপল্লি এলাকায়। এ দিন দুপুর পর্যন্ত জল না সরায় সমস্যায় পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের ক্ষোভ, নিকাশি নালা তৈরির জন্য বারবার পুরসভায় জানিয়েও কাজ হয়নি। ফলে প্রতিবছর বর্ষাকালে জল জমে। বাড়িতে জল ঢুকে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকার বাসিন্দা দীপক সরকার বলেন, “প্রতি বর্ষায় এই সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের। পুরসভার নজরদারির বালাই নেই।” বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই এলাকাটি নিচু বলেই সহজে জল জমে। আমরা পাম্প চালিয়ে জমা জল সরাবার চেষ্টা চালাচ্ছি।” স্থানীয় কাউন্সিলর রাজীবকান্তি রায় বলেন, “নিকাশি নালার কাজও শুরু হয়েছে।”

শনিবার ছবিগুলি তুলেছেন উমাকান্ত ধর, শুভ্র মিত্র ও অভিজিৎ সিংহ।

অন্য বিষয়গুলি:

Bishnupur Situation rain water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE