স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষা দফতরের মধ্যে টানাটানি। আর তারই ফলশ্রুতিতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর সাত মাস পরেও পাঠ্যপুস্তক হাতে পায়নি পড়ুয়ারা।
মাড়গ্রাম থানার প্রতাপপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ৪৮ জন পড়ুয়া এখনও বাংলা, ইংরেজি, অঙ্কের সরকারি পাঠ্যপুস্তক পায়নি। পড়ুয়ারা তিন তিনটি আবশ্যিক পাঠ্য বই ছাড়াই স্কুলে আসছে, ক্লাস করছে। নানা অসুবিধার মধ্যে শিক্ষকেরাও ক্লাস নিচ্ছেন। কিন্তু, সমস্যার সমাধানের বদলে এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষা দফতর পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করেই সাত মাস কাটিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। গোটা ঘটনা ক্ষোভ বাড়িয়েছে অভিভাবক মহলের। ওই স্কুলের পড়ুয়াদের দুরবস্থার কথা শুনে ক্ষুব্ধ রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
স্কুল সূত্রের খবর, চলতি শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণিতে চারটি বিভাগে মোট ১৮৮ জন পড়ুয়া রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪০ জন পড়ুয়াকে স্কুল থেকে চলতিগত ১৩ জানুয়ারি বই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত নবম শ্রেণির ‘এ’ বিভাগের ৭ ছাত্র, ‘বি’-র ২ ছাত্রী, ‘সি’-র ১৯ ছাত্র এবং ‘ডি’ বিভাগের ২০ জন ছাত্রী ওই তিনটি পাঠ্যপুস্তক পায়নি। অর্থাৎ ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ২৬ জন ছাত্র ও ২২ জন ছাত্রী মিলিয়ে মোট ৪৮ জন পড়ুয়া এখনও তিনটি মূল পাঠ্য বই থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেগুলি পড়ার জন্য তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে বাকি সহপাঠীদের উপরেই।
এত জন পেল, ওরাই পেল না কেন? স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম মণ্ডল জানাচ্ছেন, বইগুলি সর্ব শিক্ষা দফতর থেকে জোগান দেওয়া হয়। দফতরের সংশ্লিষ্ট অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিস থেকে সেই বই স্কুলে স্কুলে বিলি করা হয়। কিন্তু, একাধিক বার শিক্ষা দফতর এবং সর্ব শিক্ষা দফতরকে জানিয়েও বই পাওয়া যায়নি। তাঁর দাবি, ‘‘সর্ব শিক্ষা দফতরে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, তারা বইয়ের জোগান যথারীতি দিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রামপুরহাট উত্তর চক্র অফিসে। কিন্তু ওই অফিস থেকে এখনও স্কুলে বই পৌঁছে দেওয়া হয়নি। এর ফলে পড়ুয়াদের পড়াশোনা করতে চরম অসুবিধা হচ্ছে। সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষকেরাও।’’ তাঁর অভিযোগ, মিশনের দফতরে এবং এসআই অফিস, দু’ জায়গাতেই মৌখিক ও লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েও সমস্যার সমাধান হয়নি।
স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক দেবরাজ ভট্টাচার্য, বাংলার শিক্ষক জীবন সূত্রধরদের বক্তব্য, পড়ুয়াদের কাছে তো বই-ই নেই! পড়া জিজ্ঞাসা করলে, উত্তর দেবে কী করে। তাঁদের দাবি, ‘‘চরম অসুবিধার মধ্যে ক্লাস নিতে হচ্ছে। পড়ুয়াদের কাছে বই না থাকার জন্য অনেক সময় আমাদের অনেক কথা শুনতে হয়। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়নি।’’ একই সমস্যার কথা শোনা গেল বই না পাওয়া পড়ুয়াদের মুখেও। তাদের অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘যাদের বই আছে, তাদের কাছ থেকে না হয় একটা বই চেয়ে নিয়ে পড়াশোনা করা যায়। কিন্তু, তিন তিনটে মূল বিষয়ের বই প্রতি দিন অন্যদের কাছ থেকে চেয়ে কি পড়াশোনা চালানো যায়?’’ ছেলেমেয়েরা আজও বই না পাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন অভিভাবকেরাও। জিতু লেট নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘কষ্ট করে মেয়েকে পড়াশোনা শেখাতে পাঠাই। আজ সাত মাস পেরিয়ে গেলেও মেয়ে এখনও বই পেল না। আর ক’দিন পরেই তো ফাইনাল পরীক্ষা। বই না থাকলে মেয়ে কী ভাবে পরীক্ষা দেবে!’’
গোটা ঘটনায় এখন অবশ্য প্রধান শিক্ষকের ঘাড়েই দোষ চাপাচ্ছেন স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্য তথা তৃণমূল প্রভাবিত মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি গৌরীশঙ্কর চক্রবর্তী। অন্য দিকে, প্রতাপপুর হাইস্কুলের এই পরিস্থিতির কথা জানা নেই বলে দাবি করেছেন সর্ব শিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক অনিন্দ্য মণ্ডল। এ ব্যাপারে স্কুলের তরফে কোনও অভিযোগের কথাও তাঁর স্মরণে নেই বলে জানিয়েছেন। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘সাত মাস বাদে স্কুল বলছে বই পাইনি! প্রধান শিক্ষক কি ঘুমোচ্ছিলেন? উনি তো জানতেন সর্ব শিক্ষা মিশন থেকে বই পাওয়া যায়।’’ তিনি জানান, শীঘ্রই প্রধান শিক্ষককে জেলা সর্ব শিক্ষা দফতরে এসে বই নিয়ে যেতে বলা হবে। স্কুলের তরফে কোনও অভিযোগ পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন শিক্ষা দফতরের রামপুরহাট উত্তর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক কিশোর মণ্ডলও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সার্কেলের অধীনে ৫৪টি প্রাথমিক স্কুল, ১৪টি হাইস্কুল আছে। কোথাও বই নিয়ে সমস্যা হল না। এত দিন বাদেও প্রতাপপুর হাইস্কুল কেন বই পায়নি, বুঝে উঠতে পারছি না।’’ আজ, সোমবার অফিস গিয়ে কোথায় কী সমস্যা আছে, দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy