Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Murder at Housing

আবাসনে ‘খুন’, প্রশ্নে সুরক্ষার ফাঁক

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের বুকে যত্রতত্র আবাসন নির্মাণ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে নির্মীয়মাণ আবাসনগুলিতে দিনের বেলায় কোনও নিরাপত্তা কর্মী থাকেন না।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় 
রামপুরহাট  শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৪ ০৭:০৭
Share: Save:

শহরের আনাচে কানাচে গজে উঠছে বহুতল আবাসন। কিন্তু নির্মীয়মাণ থাকা অবস্থায় ওই সমস্ত আবাসনে যথাযথ নিরাপত্তা আছে কি? শনিবার রাতে শহরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় এমনই এক নির্মীয়মাণ আবাসনে এক মহিলাকে খুনের অভিযোগের পর সেই প্রশ্ন জোরদার হয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, নির্মীয়মাণ আবাসনের উপর নজরদারি বাড়াক প্রশাসন।

শনিবার গভীর রাতে রামপুরহাট দুমকা জাতীয় সড়কের উপর ওই আবাসন থেকে এক মহিলাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রামপুরহাট মেডিক্যালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।খুনের ঘটনায় ধৃত ভানু মালকে সোমবার রামপুরহাট আদালতে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন চেয়ে পাঠানো হয়। আদালত ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর করেছে। কিন্তু কী করে এক মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে নির্মীয়মাণ আবাসনে ঢুকে তাকে খুন করল অভিযুক্ত, সেই প্রশ্নই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে শহরবাসীর।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের বুকে যত্রতত্র আবাসন নির্মাণ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে নির্মীয়মাণ আবাসনগুলিতে দিনের বেলায় কোনও নিরাপত্তা কর্মী থাকেন না। রাতের দিকে নজরদারির জন্য একজন মাত্র পাহারাদার নিযুক্ত থাকেন। তাঁর একার পক্ষে বিশাল আবাসনের সব দিক নজর রাখাও সম্ভব নয়। শহরবাসীর অনেকেরই ক্ষোভ, শহরের বিভিন্ন আবাসন নির্মাণের সময় অনেক সময় দীর্ঘদিন ধরে একতলা বা দোতলা নির্মাণ করে রেখে দেওয়া হয়েছে। সেগুলিতে কেবলমাত্র রাতে পাহারাদার থাকে।

অনেক আবাসনে নজরদারি ক্যামেরা লাগানো না থাকার ফলে অপরাধ ঘটলেও তা কিনারা করা মুশকিল হয়ে পড়ে বলে জানাচ্ছে পুলিশ সূত্রই। পুলিশ সূত্রের দাবি, আবাসন নির্মাণের কাজে যুক্ত শ্রমিকদের পরিচয়পত্র অনেক সময়ই আবাসন নির্মাণকারী সংস্থা বা ঠিকাদারেরা সংগ্রহ করেন না। এর ফলে কোনও শ্রমিক অপরাধ করলেও তাকে চিহ্নিত করে খুঁজে বের করাটাও মুশকিল হয়ে পড়ে।

নিশ্চিন্তপুরের ওই নির্মীয়মাণ আবাসনে অবশ্য নজরদারি ক্যামেরা লাগানো ছিল। তবে তার মধ্যেই ওই আবাসনে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে যাওয়া একজন শ্রমিক পূর্ব পরিচিত একজন মহিলাকে নিয়ে আবাসনে প্রবেশ করেছিল। অভিযোগ, মহিলাকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ওই যুবক। কিন্তু আবাসন নির্মাণের কাজে জড়িত অন্য কর্মীদের তৎপরতায় অভিযুক্ত ধরা পড়ে যায়।

নির্মীয়মাণ ওই আবাসনটির ঠিকাদার কৃষ্ণেন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নজরদারি ক্যামেরা ছিল বলে ওই যুবকটিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, আবাসনে যারা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন তাঁদের প্রত্যেকের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা আছে। তাঁর কথায়, ‘‘আবাসন নির্মাণে কোনও মহিলা শ্রমিক এখনও কাজ করেননি। রাতে আবাসনে প্রহরা রয়েছে।’’

শহরের অনেক আবাসন নির্মাণকারীরাই জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই আবাসনের নির্মাণের জন্য ইট, সিমেন্ট, লোহার রড, পাথর, বালি পড়ে থাকে। সেই সমস্ত সামগ্রী চুরির ভয় থাকে। সেই কারণে অধিকাংশ নির্মীয়মান আবাসনেই রাতে পাহারাদার নিযুক্ত থাকেন। দিনের বেলায় শ্রমিকরা কাজ করেন এবং সেখানে ঠিকাদারেরা উপস্থিত থাকার জন্য নিরাপত্তাকর্মী থাকেন না। তবে অনেক আবাসনেই নির্মীয়মান অবস্থায় নজরদারি ক্যামেরা থাকে না।

শহরে আবাসন নির্মাণকারী সংস্থার সংগঠন রামপুরহাট ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আব্দুল রহমান জামাল বলেন, ‘‘শহরে অনেক নির্মাতা আমাদের সংস্থার মধ্যে নেই। আমাদের সংস্থার যাঁরা সদস্য তাঁরা প্রত্যেককে তাঁদের নির্মীয়মাণ আবাসনে রাতের ডিউটিতে নাইটগার্ড রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে। নিজেদের স্বার্থে সকলেই রক্ষী রেখেছেনও।’’ তবে নজরদারি ক্যামেরা সর্বত্র নেই বলেও মেনেছেন তিনি। শনিবার রাতের ঘটনায় তাঁরা আরও বেশি সতর্ক হবেন বলে দাবি করেন তিনি।

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, শহরের আবাসন নির্মাণকারী সংস্থাগুলি যাতে তাদের আবাসন নির্মাণের কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে রাখে এবং সঠিক নজরদারির ব্যবস্থা করে তার জন্য সতর্ক করা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Rampurhat Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy