জোড়াতালি: চলছে পুরনো সেতু সংস্কারের কাজ।—ফাইল চিত্র।
এমন সেতু গোটা দেশে রয়েছে আর মাত্র একটিই। যে প্রযুক্তিতে নির্মিত, তা বর্তমানে অচল হওয়ায় জীর্ণ সেতুটিকে সারিয়ে স্থায়ী সমাধানে যাওয়ার রাস্তাও খোলা ছিল না। পরিস্থিতি বুঝে অবশেষে দাবি মতো ইলামবাজারে অজয় নদে একটি নতুন সেতুতে সায় দিল নবান্ন।
শুক্রবার মন্ত্রিসভায় আলোচনার পরে তিন লেনের ওই নতুন সেতুর জন্য ১০২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। বীরভূম ও বর্ধমানবাসীর জন্য সুখবর দিয়ে এ দিনই ওই মর্মে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে নবান্ন। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, ইলামবাজারে অজয়ের উপর পুরনো সেতুটির পূর্ব দিকে (নদের ‘ডাউন স্ট্রিমে’) ৪৫ মিটার দূরত্বে তৈরি হতে যাচ্ছে নতুন সেতু।
প্রশ্ন হল, একটি সেতু থাকা সত্ত্বেও কেন দ্বিতীয় সেতুর প্রয়োজন পড়ল? দফতরের ইঞ্জিনিয়রেরা বেশ কিছু যুক্তি দিচ্ছেন। প্রথমত, যে ‘ক্যান্টিলিভার ব্যালান্স ব্রিজ’ প্রযুক্তিতে সেতুটি তৈরি, সেই প্রযুক্তি এখন অচল। দুই, ওই সেতুর উপর দিনকে দিন যান চলাচলের চাপ বাড়ায় প্রাচীন সেতুটির বর্তমান অবস্থা জীর্ণ। তিন, গত বছর এবং তার আগের বছর অজয় সেতুতে দু’দফায় সংস্কারের কাজ হলেও প্রযুক্তিগত করাণেই সেতুটিকে আগের শক্তিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অবশ্য দ্বিতীয় দফায় গত জুন-জুলাইয়ে সংস্কারের পরে ওই সেতুর উপর ভারী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তার পরেও স্থায়ী সমাধানের জন্য ইঞ্জিনিয়রদের কাছে বিকল্প একটিই পথ খোলা ছিল— অজয় নদে নতুন সেতু তৈরি করা।
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, ১৯৬২ সালের ১৭ জুন রাজ্য সড়কে অজয় নদের উপরে ইলামবাজারে বর্ধমান-বীরভূম সংযোগকারী ওই সেতুর নির্মিত হয়। বীরভূম-সহ আশপাশের কিছু জেলা তো বটেই এবং একাধিক রাজ্যের সঙ্গে কলকাতার অন্যতম যোগাযোগের মাধ্যম এই সেতু। কিন্তু, এত দিনের পুরনো সেতুটির প্রযুক্তি বর্তমানে প্রায় অচল। যে ঠিকাদার সংস্থা এবং ইঞ্জিনিয়রেরা সেটি তৈরি করেছিলেন, তাঁরা কেউ-ই আর নেই। দেশে বর্তমানে এমন সেতুর সংখ্যা মাত্র দু’টি। এই কারণে ৫৩৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটির রক্ষণবেক্ষণ এবং সংস্কারে যথেষ্ট সমস্যাজনক।
প্রায় দু’দশক আগে এই রাস্তাটি খোলনলচে বদলে পানাগড়–মোরগ্রাম হাইওয়ের তকমা পাওয়ার পরে সেতুর উপর যানবাহন বেড়ে গিয়েছিল কয়েকশো গুণ। বর্তমানে রাস্তাটি ১৪ নম্বর রাজ্য সড়কে পরিবর্তিত হয়ে দুবরাজপুর থেকে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে গিয়ে মিশছে। কিন্তু যানবাহন চলাচলের সংখ্যা কমেনি। দিনের পর দিন ক্ষমতার বাইরে ওই সেতু দিয়ে হাজারও পণ্যবাহী গাড়ি যাতায়াত করেছে। ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে সেতু। তারই সঙ্গে দোসর হয়েছে সেতু নদের সেতু লাগোয়া অংশ থেকে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বালি তোলা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, নতুন সেতু তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বহু আগেই। কোন খানে সেতু হবে (পূর্ত দফতরের হাতে থাকা জমি), তার রূপরেখা, মাটি পরীক্ষা, সেতুর নকশাও তৈরি ছিল। গত জানুয়ারি মাসে পিডব্লুউডি-র প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ইন্দিবর পাণ্ডে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকও করেন। সেতুর অনুমোদন নিয়ে তখনই কথা হয়। বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, ‘‘ইন্দিবরবাবু এলাকা পরিদর্শন করে সেতু তৈরি সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে গিয়েছিলেন। তাঁর দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই রাজ্য সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। নতুন সেতু হলে অনেক উপকার হবে।’’
ঠিক কতটা?
বাসিন্দাদের মতে, নতুন সেতু পেলে শুধু বীরভূম-বর্ধমানের মানুষই নন, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থাও উন্নত হবে। ভেদিয়া হয়ে বা পাণ্ডবেশ্বরের কাছে অজয় সেতু দিয়ে বীরভূমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা সম্ভব হলেও এই রাস্তাটির গুরুত্ব অপরিসীম। সামরিক দিক থেকেও এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, পানাগড় থেকে অদূর ভবিষ্যতে রাস্তাটি চার লেনের হচ্ছে। অন্য দিকে, দুবরাজপুরে এসে মেশা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের অংশটিও চার লেন হবে। তার আগে অজয়ের উপরে উন্নতমানের সেতু জরুরি ছিল।
তাই নতুন সেতুর ঘোষণা অত্যম্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ বলেই মনে করছে দক্ষিণবঙ্গের এই দুই জেলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy