Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

সৌদিতে ‘আটকে’ যুবক, উদ্বেগে স্বজন

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির এক দালালের মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ টাকা খরচ করে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধে একটি খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ কারখানায় শ্রমিকের কাজে গিয়েছিলেন।

মল্লারপুরের মহম্মদ জহিরুদ্দিন, (ইনসেটে) ছেলে ফিরোজউদ্দিন। নিজস্ব চিত্র

মল্লারপুরের মহম্মদ জহিরুদ্দিন, (ইনসেটে) ছেলে ফিরোজউদ্দিন। নিজস্ব চিত্র

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
মল্লারপুর শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৪৬
Share: Save:

এলাকায় তেমন কাজ নেই। বাড়তি রোজগারের আশায় বাড়ির বড় ছেলেকে বছর চারেক আগে দালাল মারফত সৌদি আরবে প্রায় লক্ষ টাকা খরচ করে কাজে পাঠিয়েছিলেন বাবা। সেই যুবক সম্প্রতি পরিবারকে জানিয়েছেন, কাজের মেয়াদ ফুরনোর পরেও তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। ছেলেকে ফিরে পেতে রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রীর অফিস, বিদেশ মন্ত্রক থেকে এ দেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত, এমনকি, সৌদি আরবের শ্রম দফতরেও চিঠি লিখেছেন অসহায় বাবা। গত ৪ নভেম্বর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি লিখেছেন।

পেশায় রামপুরহাট আদালতের মুহুরি, মল্লারপুর থানার খরাশিনপুর গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ জহিরুদ্দিন জানান, তাঁর বড় ছেলে ফিরোজউদ্দিন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে আর পড়তে চাননি। এলাকায় সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার পরে ছেলেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির এক দালালের মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ টাকা খরচ করে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধে একটি খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ কারখানায় শ্রমিকের কাজের জন্য পাঠিয়েছিলেন। সেখানে দু’বছর কাজের চুক্তি ছিল। তাঁর অভিযোগ, চুক্তি শেষ হওয়ার পরেও ছেলেকে মালিকপক্ষ আটকে রেখেছে।

জহিরুদ্দিন বলেন, ‘‘ছেলের সঙ্গে প্রতিদিন ফোনে কথা হয়। দেড় বছর থেকে কাজ করিয়েও ঠিক মতো বেতন দিচ্ছে না। ও রোজই বলে, বাড়ি ফিরতে চাইছে। বাড়ি ফেরার জন্য ওর পাসপোর্ট রিনিউয়াল করাতে হবে। অথচ মালিকপক্ষ পাসপোর্ট আটকে রেখে দিয়েছে।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ছেলেকে বাড়ি ফেরানোর জন্য মাস পাঁচেক ধরে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, বিদেশ মন্ত্রকে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েও সদুত্তর পাচ্ছি না। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করেছি। রামপুরহাট মহকুমাশাসকের কাছেও আবেদন জানানো হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) শ্বেতা আগরওয়াল বলেছেন, ‘‘এমন কোনও আবেদন আমি এখনও পাইনি। কেউ আবেদন করেছেন কিনা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

জহিরুদ্দিনের অবশ্য দাবি, দু-তিন দিন আগেই মহকুমাশাসকের অফিসে তাঁরা আবেদন জমা দিয়েছেন। আবেদন যে গ্রহণ করা হয়েছে, তার ‘কপি’ তাঁদের কাছে আছেও। তার পরেও কেন মহকুমাশাসকের হাতে আবেদনপত্র পৌঁছল না, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। ফিরোজউদ্দিনের মা রৌশেনারা বিবি বলেন, ‘‘চার বছর হয়ে গেল ছেলে বাইরে গিয়েছে। ও বাড়ি ফিরতে চাইছে। অথচ ফিরতে পারছে না। গোটা পরিবার উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, সৌদি সরকার সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসুক।’’

রিয়াধে কর্মরত ফিরোজউদ্দিনের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার। তিনিও জানান, বাড়ি ফিরতে চাইলেও মালিকপক্ষ পাসপোর্ট তাদের হেফাজতে রেখে দিয়েছে। এক বছরের মজুরি পাওনা আছে। ফিরোজের কথায়, ‘‘পরিবারের লোক আপ্রাণ চেষ্টা করছে আমাকে বাড়ি ফেরানোর। বুঝতে পারছি। কিন্তু, কোনও সুরাহা হচ্ছে না। এই ভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে এখানে আর থাকতে পারছি না। জানি না, বাড়ি ফিরতে পারব কিনা।’’

ময়ূরেশ্বরের বিধায়ক অভিজিৎ রায় বলেন, ‘‘ওই পরিবার আমার কাছে আসেনি। জানালে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু ব্যবস্থা নিতাম।’’ ঘটনার কথা জেনে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর আশ্বাস, ‘‘ওই পরিবার আমার কাছে আবেদন করলে অবশ্যই তাঁদের সব রকম সহযোগিতা করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

UAE Rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy