Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Violence

Rampuhat Clash: থম মেরে পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া জনশূন্য, বোমা-আগুনের ক্ষত নিয়ে ত্রস্ত রামপুরহাট

গ্রামের মাঝ বরাবর রাস্তা। এক পাশে পূর্বপাড়া। পশ্চিমপাড়া অন্য পাশে। পূর্বপাড়াতেই বাড়ি ভাদুর। তাঁকে খুনে অভিযুক্তদের বাড়ি পশ্চিমপাড়ায়।

মঙ্গলবার সকাল, তখনও ধ্বসস্তূপ থেকে বেরোচ্ছে ধোঁয়া।

মঙ্গলবার সকাল, তখনও ধ্বসস্তূপ থেকে বেরোচ্ছে ধোঁয়া। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২২ ১৯:১২
Share: Save:

বগটুই। ছোট্ট একটা গ্রাম। গোটা গ্রামে শ’খানেক বাড়ি। বেশির ভাগই পাকা। কোনও বাড়ির সঙ্গে রয়েছে টিনের চালওয়ালা ঘর। মাটির ঘর রয়েছে কোনও কোনও বাড়ির লাগোয়া। রাতেই একটা খুন হয়েছে। কিন্তু সকাল হওয়ার আগেই যে গ্রামের আরও কয়েক জনকে এ ভাবে মারা যেতে হবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি রামপুরহাটের বগটুই। সব মিলিয়ে থমকে গিয়েছে গোটা গ্রাম। বগটুইয়ের এক পাড়ায় কারও মুখে কোনও কথা নেই। পরিস্থিতি থমথমে। আর এক পাড়া একেবারে জনশূন্য। পোড়া বাড়ির দগদগে ক্ষত। লোকজন কেউ কোত্থাও নেই। সকালে এই বাড়িগুলি থেকেই উঠছিল ধোঁয়ার কুণ্ডলী। গোটা গ্রাম এত পুলিশ, এত দমকলকর্মী, এত সাংবাদিক আগে কখনও দেখেনি।

সোমবার রাতে জাতীয় সড়কের বগটুই মোড়ে খুন হয়েছিলেন ভাদু শেখ। সে খবর রাতেই ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু সকাল থেকে অন্য খবর চাউর হয়। সারা রাত তাণ্ডব চলেছে বগটুইয়ের পশ্চিমপাড়ায়। বাড়ি, ঘরদোর, মানুষ পুড়ে গিয়েছে। মারা গিয়েছেন অনেকে। খবর পেয়ে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেন সাংবাদিকেরা। কিন্তু বগটুই মোড়েই তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। ওই মোড় থেকে বগটুই গ্রাম কিলোমিটার তিনেক দূরে। সোমবার রাতে এই মোড়েই বোমা ছুড়ে খুন করা হয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদুকে। সেই সময় একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন তিনি। মাঝরাতের হামলার খবর পেয়ে মঙ্গলবার ভোরে গ্রামে ঢোকে পুলিশ। পরে আসে আরও বাহিনী। তাদের সঙ্গে শেষমেশ গ্রামে ঢুকতে পারেন ওই সাংবাদিকেরাও।

বগটুই গ্রামের মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে রাস্তা। তার এক পাশে পূর্বপাড়া। পশ্চিমপাড়া অন্য পাশে। পূর্বপাড়াতেই বাড়ি ভাদুর। তাঁকে খুনে অভিযুক্তদের বাড়ি পশ্চিমপাড়ায়। সোমবার রাতে এই পশ্চিমপাড়ারই কয়েকটি বাড়ি আগুনে পুড়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার বেলার দিকে পূর্বপাড়ার বাড়িতে নিয়ে আসা হয় ভাদুর দেহ। তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানান আত্মীয়-পরিজন এবং প্রতিবেশীরা। যদিও সেই ভিড় ছিল থমথমে। কারও মুখে কোনও কথা নেই। শুধু আত্মীয়-পরিজনদের কান্না। পাড়াপ্রতিবেশীদের মুখে আতঙ্কের ছাপ।

ভোর থেকেই গ্রামে পুলিশি টহলদারি।

ভোর থেকেই গ্রামে পুলিশি টহলদারি। নিজস্ব চিত্র।

অন্য দিকে, পশ্চিমপাড়া একেবারেই জনশূন্য। আগুনে পুড়ে জখম হয়েছেন এ পাড়ারই কয়েক জন। তাঁরা ভর্তি রয়েছেন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে। বেশ কয়েক জন পলাতক। সেই তালিকায় রয়েছে ভাদুর খুনে অভিযুক্তেরা। পাড়ায় ঢুকলে, একের পর এক পুড়ে যাওয়া বাড়ি। পশ্চিমপাড়ায় শাহ আলম শেখের বাড়ি। গত রাতে কী হয়েছিল? শাহ আলম বলছেন, ‘‘রাতে অনেক ছেলে এসেছিল। আমরা তা দেখে ঘরে ঢুকে গিয়েছিলাম। আমার দরজাতেও দুটো বোমা মেরেছে। ভয়ে আর ঘর থেকে বেরোইনি।’’ এই ছেলেরা কারা? সে প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব না দিয়ে শাহ আলমের বক্তব্য, ‘‘দু’পক্ষ আগে এক দলেই ছিল। তবে পরে কী ঝামেলা হয়েছে জানি না। সোমবার ভাদু খুন হওয়ার জন্যেই এই হামলা হয়েছে। আমার তেমনটাই মনে হয়।’’

গত বছরের ৫ জানুয়ারি এই গ্রামেই খুন হয়েছিলেন ভাদুর ভাই বাবর শেখ। এ ছাড়া ছোটখাটো অশান্তি মাঝেমধ্যেই লেগে থাকত। তার মধ্যেই সোমবার রাতে খুন হন ভাদু। তার পর থেকে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় গ্রামে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলছিলেন, ‘‘ভাদু খুন হওয়ার পর গ্রামে যদি পুলিশি টহলদারির ব্যবস্থা করা হত তা হলে এমন কাণ্ড হয়তো ঘটত না।’’ গ্রামবাসীদের সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ভোরে গ্রামে প্রথম পা রাখে পুলিশ। আসেন দমকল কর্মীরাও। কিন্তু তত ক্ষণে সব যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বাড়িগুলি থেকে তখনও বেরোচ্ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী।

কয়েকটি বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ।

কয়েকটি বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ। নিজস্ব চিত্র।

ছোট্ট একটা গ্রামে রাতারাতি কয়েক জনের প্রাণ গেল নৃশংস ভাবে। এই ঘটনা বদলে দিয়েছে বগটুইকে। ছোট্ট এই গ্রাম এখন রাজ্য রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে। জাতীয় স্তরেও এই গ্রাম নিয়ে আলোচনা। মঙ্গলবার বিকেল চারটে নাগাদ ভাদুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ক্ষোভ, রাগ, আতঙ্ক, ভয়— নানা কিছুর মিশেলে সারা দিন কাটলেও রামপুরহাটের এই গ্রাম এখন শান্তির অপেক্ষায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Death Rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE