পিকনিকের পরে এমনই অবস্থা হয় কাঁসাইয়ের চরের। ফাইল চিত্র
দৃশ্য ১— নীল জলাধার ঘিরে পিকনিকে আসা বাচ্চারা খেলাধুলো করছে। বয়স্করা খোসগল্পে মেতে। হঠাৎ পিকনিকে আসা অন্য একটি দল সাউন্ডবক্স নামিয়ে তারস্বরে গান শুরু করে দিল। গানের গুঁতোয় উড়ে গেল, পিকনিকের আনন্দ। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে অন্য দলগুলিও গান বাজাতে শুরু করায় চটপট খাওয়াদাওয়া সেরে অনেকেই সাত সাততাড়াতাড়ি পাততাড়ি গুঁটিয়ে বাড়ির পথ ধরলেন। গত বছর হুড়ার ফুটিয়ারি জলাধারে পিকনিকে এমন দৃশ্যই দেখা গিয়েছিল।
দৃশ্য ২— শীত পড়লেই পিকনিকে আসা মানুষজনের ফেলে যাওয়া থার্মোকলের পাতা, গ্লাস আর প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে ওঠে পুরুলিয়ার অনেক দর্শনীয় স্থান। অযোধ্যাপাহাড়তলির জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের লোয়ার ড্যামের কাছাকাছি এলাকা থেকে জেলার প্রায় সব পর্যটন কেন্দ্রই এই দূষণের শিকার।
বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমা প্রশাসন গত বছরেই মুকুটমণিপুরকে সুন্দর রাখতে একগুচ্ছ নির্দেশ জারি করেছিল। এ বার পর্যটন মরসুমের গোড়ায় পুরুলিয়ার সৌন্দর্য অটুট রাখতে তেমনই কিছু পদক্ষেপ নিতে চলেছে জেলা প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বিভিন্ন জলাধার, পাহাড়, টিলা, নদীতট, জঙ্গল, ইতিহাস বিজড়িত পর্যটনক্ষেত্র-সহ বেড়াতে যাওয়ার জায়গা নোংরা করা হলে এ বার ২০১৬ সালের ‘প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুল ও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যে সমস্ত জায়গায় বিধি নিষেধ
। পুরুলিয়া সদর ।
• আড়শার দেউলঘাটা আর তিলাইটাঁড় জলাধার।
• বলরামপুরের কানা পাহাড়, কুমারী জলাধার, হনুমাতা জলাধার।
• হুড়ার ফুটিয়ারি জলাধার।
• পুরুলিয়া ১ ব্লকের তেলেডি পিকনিক স্পট।
। ঝালদা ।
• বাঘমুণ্ডির পারডি জলাধার, পাখি পাহাড়, দুয়ারি খাল, টুরগা ফলস, টুরগা জলাধার, বামনি ফলস, মার্বেল জলাধার, ময়ূর পাহাড়, সীতাকুণ্ড, চা বাগান, সূর্যোদয় পয়েন্ট, অযোধ্যা পাহাড়ের আপার জলধার, লোয়ার জলাধার, শিবমন্দির, ইকো-রিসর্ট, কয়রাবেড়া জলাধার, দুয়ারসিনি জলাধার।
• ঝালদা ১ ব্লকের নরহারা জলাধার, বাগবিন্ধ্যা জলাধার, কপিলা পাহাড়, মডেল গ্রাম, পুরনো ঝালদা আশ্রম, বানসা পাহাড়, শিকারা পাহাড়, পাঁড়রি জলাধার, জারগো পাহাড় লাগোয়া জলাশয়, বুধাই দাবির, সুবর্ণরেখা, টুপাই, শালদহ এবং দামোহানি নদীতটের পিকনিক স্পট, পলাশবন, স্বর্ণরেখা মন্দির, ভানসিং থান পাহাড়।
• ঝালদা ২ ব্লকের মুরগুমা।
। রঘুনাথপুর ।
• কাশীপুরের রাজবাড়ি, বারনি চেতনা কেন্দ্র (রবীন্দ্র উদ্যান), কালীদহ জলাধার, রঞ্জনডি যোগমায়া সরোবর, কাপিষ্টা পাম্প হাউস, জোড়সা জলাধার, লিয়া জলাধার।
• নিতুড়িয়ার গাংটিকুলি দ্বীপ, গড়পঞ্চকোট পাহাড়, পাঞ্চেত জলাধার।
• রঘুনাথপুর ১ ব্লকের জয়চণ্ডী পাহাড়, বেড়ো চণ্ডী পাহাড়, বড়ন্তি জলাধার।
। মানবাজার ।
• বান্দোয়ানের পারগেলা জলাধার, দুয়ারসিনি জলাধার, যমুনা সেতু।
• বরাবাজারের রাইডি এবং লালডি।
• মানবাজার ১ ব্লকের দোলাডাঙা, ট্যুসামা (কংসাবতী নদীতীর), শালডি, দোলদেড়িয়া।
• মানবাজার ২ ব্লকের ঘাট।
• পুঞ্চার পাকবিড়রা ভৈরবস্থান, সৌরাং, ডোঙাবেড়া।
জানানো হয়েছে, ৫০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ও সেই সঙ্গে থার্মোকলের থালা, বাটি, মদের বোতল ইত্যাদি যা প্রকৃতির সঙ্গে মেশে না, তেমন জিনিসপত্র নিয়ে পুরুলিয়া পিকনিকে যাওয়া যাবে না। একই সঙ্গে প্রকাশ্যে মদ্যপান করা, চড়া শব্দে গান বাজানো, ডিজে সাউন্ড বক্সের ব্যবহার করে পর্যটনকেন্দ্রের নীরবতা নষ্ট করলেও জরিমানা করা হবে। প্রয়োজনে মামলাও করা হবে। বাস, ছোটগাড়ি-সহ বিভিন্ন যানবাহনের জন্যও পর্যটকদের কাছ থেকে মাসুল নেওয়া হবে। বাস, লরি, ম্যাটাডোরের জন্য ২০০ টাকা, ছোটগাড়ির জন্য ১০০ টাকা, অটো ও টোটোর জন্য ৫০ টাকা এবং মোটরবাইক, স্কুটারের জন্য ৩০ টাকা ধার্য করা হয়েছে।
বস্তুত, গত বছরেই জেলা প্রশাসন বিভিন্ন জায়গায় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে পর্যটকদের সচেতন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, তাতে অনেকেরই সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বার চাই কিছুটা কড়া হচ্ছে প্রশাসন।
জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় জানান, ‘‘আমরা পর্যটকদের অবশ্যই পুরুলিয়ায় স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এ বার পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের উপরে গুরুত্ব দিচ্ছি। পর্যটন ক্ষেত্রগুলির পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। কেউ নির্দেশ ভাঙছেন কি না তা সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন ও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা নজরদারির মধ্যে রাখবেন। যিনি দায়িত্বে থাকবেন, তাঁকে পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। প্রয়োজনে তিনি রসিদ দিয়ে ‘স্পট ফাইন’ করবেন। পুলিশও থাকবে।’’ তিনি জানান, এলাকায় শালপাতা, মাটির গ্লাস ইত্যাদি বিক্রি করা হবে। প্রতিটি জিনিসের দাম সাইনবোর্ডে লেখা থাকবে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পর্যটকদের একাংশের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অনেক পর্যটকই অসুবিধায় পড়েন। সবাই যাতে সুস্থ পরিবেশে পুরুলিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, সে জন্যই এই পদক্ষেপ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy