Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

গৃহপ্রকল্পে রাজ্য-শীর্ষে পুরুলিয়া

রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীন স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সুডা) সম্প্রতি পুরুলিয়া পুরকর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

প্রকল্পের কাজের তদারকি করছেন পুরসভার কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

প্রকল্পের কাজের তদারকি করছেন পুরসভার কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৮ ০০:১৩
Share: Save:

সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে এই জেলার এগিয়ে থাকার নজির বেশি নেই। সেই প্রচলিত ধারণা ভেঙে এ বার একটি প্রকল্পে রাজ্যের বাকি পুরসভাগুলিকে পিছনে ফেলে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে পুরুলিয়া পুরসভা।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতাধীন ‘সকলের জন্য বাড়ি’ প্রকল্পে পুরুলিয়া পুরসভা উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। এই প্রকল্পে কাজের অগ্রগতিতে এই মুহূর্তে নদিয়ার কৃষ্ণনগর পুরসভার সঙ্গে যুগ্ম ভাবে শীর্ষস্থানে রয়েছে পুরুলিয়া। রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীন স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সুডা) সম্প্রতি পুরুলিয়া পুরকর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

পুরসভার একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, সংশয় নিয়েই এই প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল পুরুলিয়ায়। ২০১৫ সালে যখন এই প্রকল্পের কাজ রাজ্যে শুরু হয়, তখন পুরুলিয়াতে এই প্রকল্প শুরু করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল পুরসভার অন্দরেই। পুরুলিয়ার প্রাক্তন বিধায়ক কেপি সিংহদেও তখন পুরপ্রধানের দায়িত্বে। বর্তমান পুরপ্রধান সামিমদাদ খান তখন একই সঙ্গে উপপুরপ্রধান ও উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বে। তিনি জানান, সে বার পুজোর আগে পুরসভার কাছে এই প্রকল্প সম্পর্কে খবর আসে। কাঁচা বা আধপাকা বাড়িতে যাঁরা বসবাস করেন তাঁদের জন্যই এই প্রকল্প। উপভোক্তাদের বাড়ি ভেঙে ফেলার পর যদি পরবর্তী বরাদ্দ না আসে, তাহলে ঝামেলায় পড়তে হবে পুরসভাকেই— এই আশঙ্কায় প্রায় সকলেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘এক প্রকার জোর করেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয় তখন।’’

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠিক করা হয়েছিল এই প্রকল্পে যাঁদের উপভোক্তা নির্বাচন করা হবে, তাঁদের নূন্যতম ৩৬০ বর্গফুট ফাঁকা জমি রয়েছে কি না প্রাথমিক ভাবে তা দেখা হবে। পুরসভার এই প্রকল্পের নোডাল অফিসার রাজীব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা স্বনির্ভর দলের সদস্যদের দিয়ে শহরের ২৩টি ওয়ার্ডেই সমীক্ষা করাই। সেই সমীক্ষায় উঠে আসে ৫,৬৯৩টি বাড়ি করতে হবে। যেহেতু এই প্রকল্পটি ২০২২ সাল পর্যন্ত চলবে, তাই মোট উপভোক্তাকে আমরা সাত বছরে ভাগ করি। প্রথম বছরে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৭৬৯।’’

তিনি জানান, কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ প্রকল্পে প্রতিটি বাড়ির জন্য বরাদ্দ তিন লক্ষ ৬৭ হাজার ৮৫৪ টাকা। যার মধ্যে দেড় লক্ষ টাকা কেন্দ্রীয় সরকার, এক লক্ষ ৯২ হাজার ৮৫৪ টাকা রাজ্য সরকার এবং ২৫ হাজার টাকা উপভোক্তাকে দিতে হবে। উপভোক্তা নিজের খরচ ভিত খোঁড়ার কাজ শুরু করলে, তবেই প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। মোট পাঁচটি কিস্তিতে উপভোক্তাকে তাঁর প্রাপ্য টাকা দেওয়া হয় এই প্রকল্পে। এ ছাড়া ভিত খোঁড়া থেকে বাড়ি নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে নির্মীয়মাণ বাড়ির ছবি ‘ভুবন’ নামে অ্যাপসে আপলোড করতে হয়।

রাজীববাবু জানান, ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে অর্থাৎ প্রকল্পের গোড়ায় তখন ৭৬৯টি বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও নানা কারণে ৬৮টি বাড়ির উপভোক্তারাই নির্মাণে রাজি হননি। তাই লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছিল ৭০১টিতে। এই আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত ৯৪ শতাংশের বেশি কাজ হয়ে গিয়েছে। পরের আর্থিক বছরে বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল ৯১৫টি। এই অর্থিক বছরে অগ্রগতির পরিমাণও সন্তোষজনক।

পুরপ্রধান জানাচ্ছেন, কাজের অগ্রগতির নিরিখে পুরুলিয়া পুরসভা শীর্ষে রয়েছে এটা তাঁদের টিমওয়ার্কের ফল। তিনি বলেন, ‘‘আমি কর্মীদের বলেছিলাম যে সকলে মিলে চেষ্টা করলে আমরা সফল হতে পারি। আমাদের তো পিছিয়ে পড়া জেলার তকমা রয়েছে। এই প্রকল্পের অগ্রগতির হাত ধরে সেই দুর্নাম ঘোচাতে পেরেছি।

অন্য বিষয়গুলি:

house project Purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE