ফোন আসছে। কথা বলতে বলতেই মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। নোটবন্দির জেরে একের পর এক বুকিং বাতিল হওয়ায় এমনই অবস্থা হয়েছিল পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার হোটেল মালিকদের। ‘‘সেই ক্ষত এখনও শুকোয়নি। পর্যটন শিল্প মাঠে মারা গিয়েছে’’— বলছিলেন বিষ্ণুপুর হোটেল অ্যান্ড লজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েসনের সম্পাদক অসিত চন্দ্র। একই সুর পঞ্চকোটের একটি অতিথি নিবাসের ম্যানেজার বিকাশ মাহাতোরও। সেই ধাক্কা কি এ বার পর্যটনে কাটবে? এই প্রশ্ন নিয়ে মরসুমের মুখে অপেক্ষায় পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন।
পুজোর মুখ থেকে ধীরে ধীরে দুই জেলার পর্যটন স্থানগুলিতে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়। শীত পড়লে তা ব্যবসা জমাট বাঁধে। চলে দোল পর্যন্ত। কিন্তু গত বছর মরসুমের গোড়াতেই নোটবন্দি হওয়ায় বিপাকে পড়ে যায় পর্যটন-ব্যবসা। বিষ্ণুপুরের অসিতবাবু বলছিলেন, ‘‘শহরের ২৬ জন হোটেল মালিক আমাদের সংগঠনে রয়েছেন। নোটবন্দির খেসারত সবাইকে দিতে হয়েছে। কমবেশি ৩০ শতাংশ পর্যটক বুকিং বাতিল করেছিলেন। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদেরও অনেকে আবার মাসখানেক পরে হোটেল ভাড়ার টাকা পাঠিয়েছিলেন।’’
বিষ্ণুপুরের মানুষের মনে রয়েছে, বাতিল নোট বদল করার জন্য পর্যটকেরা কী ভাবে এ ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্যাঙ্কে দৌড়ে বেরিয়েছেন। এটিএম-র সামনে ব্যাগপত্তর নিয়ে লম্বা লাইন দিয়েছিলেন তাঁরা। অনেকে ওই ঘোষণা শুনে মন্দির দেখা ছেড়ে দিয়ে সাত তাড়াতাড়ি তল্পিতল্পা গুছিয়ে বাড়ি ফেরত গিয়েছিলেন।
বিষ্ণুপর ট্যুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েসনের সম্পাদক অঞ্জন লাহা বলেন, ‘‘বহু বিদেশি পর্যটক অথৈ জলে পড়ে গিয়েছিলেন। আমরা ব্যাঙ্কের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বিদেশিদের টাকা বদল করে দিয়েছিলাম। কারণ যাই হোক না কেন, ওঁরা তো আমাদের অতিথি।’’ কিন্তু পর্যটক কমে যাওয়ায় তাঁদের রোজগারে টান পড়েছিল।
বিষ্ণুপুরে বেড়াতে এলে দলমাদল রোড এলাকার টেরাকোটার জিনিসপত্র অনেকেই কিনে নিয়ে যান। সেখানকার দোকানদার সোমনাথ দত্ত , পিন্টু দাসেরা বলেন, ‘‘একশো টাকার জিনিস কিনে লোকে হাজার টাকার নোট ধরাচ্ছে। কত আর ক্রেতা ফেরানো যাবে? বাধ্য হয়ে সেই বাতিল টাকা নিয়েই পরে ব্যাঙ্কে লাইন দিতে হয়েছিল।’’ বুকিং বাতিলের কোপ পড়েছিল ভাড়াগাড়ির ব্যবসাতেও। সেই আক্ষেপ এখনও করেন বিষ্ণুপুরের ভাড়াগাড়ির মালিক তরুন ভট্টাচার্য।
পঞ্চকোটের একটি অতিথি নিবাসের ম্যানেজার বিকাশ মাহাতো জানান, ২০১৫ সালে এই পর্যটন কেন্দ্র শুরুর বছরে তাঁরা আশাতীত লাভ পেয়ে পরের বছরে আরও বিনিয়োগ করেন। কিন্তু নোটবন্দি তাঁদের আশায় জল ঢেলে দেয়। তাঁর দাবি, ‘‘নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত যত আগাম বুকিং ছিল, তার ৭০ শতাংশই বাতিল করে দিয়েছিলেন পর্যটকেরা। ক্ষতি এতই বেড়েছিল যে ব্যবসা এখনও ঘুরে দাঁড় করানো যায়নি।”
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় সরকার ডিজিটাল লেনদেন বাড়নোয় গুরুত্ব দিতে বললেও সে সময়ে এই এলাকায় মোবাইলের নেটওয়ার্কের গোলমাল থাকায় কার্ডের ভরসায় আসা পর্যটকেরাও বিপাকে পড়েন।
বিকাশবাবু বলেন, ‘‘গত বছর ডিসেম্বর মাসেই কলকাতা থেকে এক দম্পতি কার্ডে টাকা দিতে না পেরে শেষে বাড়ি ফিরে তাঁরা ব্যাঙ্ক থেকে আমাদের বকেয়া টাকা পাঠিয়েছিলেন।’’
হোটেল ব্যবসায়ী সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়ের পঞ্চকোট ও মুকুটমণিপুরে অতিথি নিবাস রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চকোটে গত বছর ডিসেম্বরেই অতিথি নিবাসের ব্যবসা চালু করি। শুরুতেই লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছিল। মুকুটমণিপুরেও বেশ ঙতি হয়েছে। প্রায় ৪০ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়।’’ জয়ণ্ডীর একটি রিসর্টের তরফেও দাবি করা হয়েছে, নোট বাতিলের জেরে তাঁদের গত বছর তিন মাসে প্রায় ৫০ শতাংশ বুকিং বাতিল হওয়ায় লক্ষাধিক টাকার লোকসান হয়েছে।
তাই বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক হোটেল মালিক সঞ্জয় দাসের আর্জি, ‘‘সত্যি বলছি খুব আতঙ্কে থাকি। বছরভর কয়েকটা মাস পর্যটকদের ভিড় হয়। সেই সময়েই ব্যবসায় কোপ পড়লে, সামলাব কী ভাবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy