শিল্পতালুক ঘেরার কাজ চলছে জোরকদমে। ছবি: সুজিত মাহাতো
পুরুলিয়া জেলায় এত পতিত জমি থাকা থাকতে আঘরপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ডুংরি লাগোয়া জমিই কেন শিল্পতালুকের জন্য বেছে নেওয়া হল? এই প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিবাদীরা।
প্রশাসন জানাচ্ছে, রঘুনাথপুরকে ঘিরে ভারী ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠলেও জেলার অন্য প্রান্তে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়, এমন সুযোগ নেই। এ দিকে, ঝাড়খণ্ডের বিনিয়োগকারীরা পুরুলিয়া-বোকারো ৩২ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া জায়গাতেই শিল্পস্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
সে কারণে বছরখানেক আগে প্রথমে ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের অদূরে পুরুলিয়া মফস্সল থানার ছড়রায় পরিত্যক্ত এয়ারস্ট্রিপ লাগোয়া সরকারি জমিতেই মাঝারি, ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্পের পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়। কারণ রাজ্য সরকার শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরোধী। তাই পড়ে থাকা সরকারি জমিতেই শিল্প স্থাপনে তোড়জোড় শুরু করে প্রশাসন।
কিন্তু ওই পরিত্যক্ত এয়ারস্ট্রিপ পুনরায় চালুর সম্ভাবনা তৈরি হতেই পরিবর্ত জমির খোঁজ শুরু হয়। তখনই আঘরপুর ডুংরি লাগোয়া সরকারি জমি প্রশাসনের নজর পড়ে।
জেলার এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, ‘‘আঘরপুরে ২২ একর সরকারি জমির পাশে জাতীয় সড়ক এবং পুরুলিয়া-রাঁচী রেলপথ থাকায় শিল্পের আদর্শ পরিকাঠামো রয়েছে। সে কারণে সেখানেই শিল্পতালুক গড়ার কথা ভাবা হয়।’’
কিন্তু শিল্পতালুকের সীমানা নির্ধারিত করতে মাপজোক শুরু হতেই গ্রামবাসীরা বেঁকে বসেন। কলকারখানা হলে ডুংরিকে ঘিরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হবে, গ্রামের শ্মশান নষ্ট হবে, গোচারণের বিস্তৃত জমি হারাবে, মেলার মাঠ থাকবে না, সবার ব্যবহারের জলাশয় নষ্ট হবে— এমনই নানা প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। প্রতিবাদ শুরু হয়। এরপরে জয়পুর ব্লক অফিসে প্রশাসন গ্রামবাসীদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠকে বসে। গ্রামবাসীরা ওই জমি ছেড়ে অন্যত্র শিল্পস্থাপনের দাবি জানাতে থাকেন। শেষে গ্রামবাসীর দাবি বিবেচনা করে পাঁচ একর জায়গা ছেড়ে ১৭.৩৯ একর জমির উপরে শিল্পতালুক তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
২০২২ সালের গোড়ার দিকে আঘরপুরে শিল্পতালুক গড়ে তোলার প্রস্তাব মাঝারি, ছোট, ক্ষুদ্রশিল্প ও বস্ত্র দফতরের কাছে পাঠানো হয়। প্রকল্পের অনুমোদন দেয় রাজ্য সরকার। জমি সমতলীকরণ এবং সীমানা প্রাচীর তোলার জন্য ৬ কোটি ১১ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, কী ধরনের শিল্প এখানে গড়ে উঠবে, তা নিয়ে অন্ধকারে রেখেছে প্রশাসন। জেলা শিল্পকেন্দ্র সূত্রের খবর, মূলত মাঝারি, ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্পের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।
পুরুলিয়া জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার জয়ন্ত আচার্য বলেন, ‘‘সীমানা প্রাচীর তুলে শিল্পতালুকের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, আলো, নিকাশি ইত্যাদি পরিকাঠামো গড়ে দেওয়া হবে।’’
কিন্তু বাসিন্দাদের প্রশ্ন, শিল্পতালুকে স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের কি আদৌ কর্মসংস্থান হবে? কত জন কাজ পাবেন? শ্মশান ও গোচারণ ভূমি শিল্পতালুকের ভিতরে চলে যাচ্ছে। দৈনন্দিন ব্যবহারের পুকুর শিল্পতালুকের বাইরে থাকলেও তার জল কি ব্যবহারযোগ্য থাকবে? কী ভাবে এর মোকাবিলা করবে প্রশাসন?
আঘরপুর গ্রামের বাসিন্দা তথা জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ঋষিপদ গোপ বলেন, ‘‘শিল্পতালুক গড়ে ওঠার আগেই অপপ্রচার শুরু করেছেন কিছু লোক। সমস্যা যদি কিছু হয়, আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধানও খুঁজতে হবে। পাশেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়ে উঠেছে। সেখানেও গ্রামের কিছু মানুষ কাজ পেয়েছেন।’’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘কিছু লোক বিরোধিতা করছেন ঠিকই। তবে দলের তরফে আমরা বোঝাতে নামব।’’
প্রশাসনও যে আঘরপুরেই শিল্পতালুক তৈরি করতে অনড়, তা স্পষ্ট প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথাতেও। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয়দের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকে বসা হয়েছে। মন্দির, মেলা— এ সব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশ কিছু পরিমাণ জমি ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। তারপরেও বলছে করতে দেওয়া হবে না। অথচ জমি সরকারের। তাহলে কেন করতে দেবে না? তার কোনও সদুত্তর নেই।
কথার তাপ-উত্তাপ যতই ছড়াক, প্রশাসন কিন্তু এক মাসের মধ্যে নীরবে পাঁচিল দিয়ে শিল্পতালুক ঘেরার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে।
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy