এই পার্কটি নিয়েই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। নিজস্ব চিত্র
কখনও উড়ে এসে পড়ছে সিরাপের শিশিতে ভরা মদ, আবার কখনও মোবাইল ফোন। গাঁজার প্যাকেটও আকাশ থেকে নেমে আসছে। বাঁকুড়া জেলা সংশোধনাগারে এ ভাবেই ঢুকে পড়ছে প্যাকেটে মোড়া মোবাইল ফোন-সহ নেশার সামগ্রী। কখনও সখনও তা সেলের বাইরে থাকা কয়েদিদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে, কখনও কারারক্ষীরা সে সব আটক করছেন।
খড়্গপুরের রেলমাফিয়া শ্রীনু নাইডু খুনে অন্যতম অভিযুক্ত সঞ্জয় প্রসাদকে সম্প্রতি বাঁকুড়া জেল থেকে সাগরেদদের ফোন করার কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। খোঁজ করতে গেলে জেল কর্তৃপক্ষ থেকে কারারক্ষীরা দাবি করছেন, জেলের বাইরে থেকে কয়েদিদের সঙ্গীরা ওই সব জিনিস ছুড়ে দিচ্ছে। এ জন্য জেল সংলগ্ন এলাকার কিছু নির্মাণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন বাঁকুড়া সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ।
বাঁকুড়া জেলের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, জেলের ভিতর মোবাইলের ব্যবহার বা মাদক সেবনের বিষয়টি নতুন নয়। নানা ভাবে বন্ধ করার চেষ্টা চলে। কিন্তু নানা ফিকিরে সঙ্গীরা কয়েদিদের হাতে এ সব পৌঁছে দিচ্ছে।
সঞ্জয় প্রসাদের ঘটনার তদন্ত শুরু হওয়ার পরে জানা যায়, সে ২ নম্বর সেলে তার সঙ্গে থাকা আর এক কয়েদি মুলুকচাঁদ সেনের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে বাইরে যোগাযোগ করত। মুলুকচাঁদ কোথা থেকে মোবাইল পেয়েছে, তা নিয়ে আলাদা ভাবে তদন্তে নেমেছে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। ওই ঘটনার পরে জেলের বিভিন্ন সেলে তল্লাশি চালানো হয়। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাথরুম থেকে পাওয়া যায় আরও দু’টি মোবাইল ফোন। সেই ফোনগুলি কোন কয়েদির তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জেলের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, জেলে ঢোকানোর সময়ে কয়েদিদের দেহে ভাল করে তল্লাশি চালানো হয়। তার পরেও নানা ফন্দিতে নানা জিনিস নিয়ে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছে ওরা। বাঁকুড়া আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার সময়ে তল্লাশিতে এক কয়েদির মলদ্বার থেকে গাঁজার প্যাকেট পাওয়া গিয়েছিল। আদালতে কোনও সুযোগে কেউ তাকে গাঁজা দিয়েছিল। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে অদ্ভূত উপায়ে তা জেলে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল সে।
তবে জেল কর্তৃপক্ষকে বেশি ভাবাচ্ছে, উঁচু পাঁচিলের ওপার থেকে থার্মোকলের প্যাকেটে ফোন ও নেশার সামগ্রী ছুড়ে দেওয়ার ঘটনা। মাঝে মধ্যেই কারারক্ষীরা জেলের পাঁচিল লাগোয়া এলাকায় গিয়ে ওই সব জিনিসের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখেছেন। কারারক্ষীরা জানাচ্ছেন, কয়েদিরা ওয়ার্ডের ভিতরে থাকলেও দিনের নির্দিষ্ট সময়ে তাঁদের জেলের ভিতরে ফাঁকা জায়গায় ঘোরাঘুরি করার সুযোগ দেওয়া হয়। রক্ষীরা তাঁদের পাহারায় থাকলেও সেই সময়ে ওই সব জিনিসপত্র ছোড়া হয়। কোনও ভাবে রক্ষীদের নজর এড়িয়ে গেলে কয়েদিদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। রক্ষীরা জানাচ্ছেন, আগে থেকেই তাঁদের সঙ্গীরা কবে, জেলের কোন জায়গায় ওই সব জিনিস ছুড়বে, তা কোনও ভাবে জানিয়ে দেন। নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে অপেক্ষায় থাকেন কয়েদি।
বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? জেল কর্তৃপক্ষ মূলত জেলের বাইরে রক্ষীর অভাবের কথা তুলছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা জানাচ্ছেন, জেলের পাশেই পুরসভা পার্ক করায় সেখানে নানা ধরনের লোকজনের আনাগোনা বেড়েছে। জেলের বাইরে অন্য এলাকায় সন্দেহজনক লোক দেখলে সরিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু পার্কে কেউ বসে থাকলেও কিছু বলা যায় না। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সুযোগ বুঝে ভিতরে জিনিসপত্র ছুড়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া কাছেপিঠে এমন কিছু বহুতল তৈরি হয়েছে, যেখান থেকে জেলের ভিতরে নজর রাখাও অসম্ভব কিছু নয় বলে দাবি করছেন কারারক্ষীরা। পুরসভার দাবি, লোকজন আবর্জনা ফেলত ও শৌচকর্ম করত। তা বন্ধ করতেই পার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের দাবি, ‘‘পার্কটি উদ্বোধন হলেও পুরোদমে চালু হয়নি। তবে জেল কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তোলায় এবং বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলাজনিত হওয়ায় পুরোদমে পার্ক চালুর আগে জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসব।’’ জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘ওই পার্কের জন্য যদি কোনও সমস্যা হয়, তবে পুরসভার সঙ্গে কথা বলব।’’
সে জন্য জেলের বাইরে নজরদারি বাড়ানো সবার আগে দরকার বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের। তবে বর্তমানে জেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে যত পুলিশ কর্মী রয়েছেন, তা দিয়ে বাইরের নিরাপত্তা আঁটোসাটো করা সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছেন আধিকারিকদের বড় অংশ। এই সমস্যার কথা পুলিশকে জানানো হয়েছে সংশোধনাগারের তরফে।
জেল সুপার বিশ্বরূপ বিশ্বাস বলেন, “পুলিশ সুপারের কাছে আমরা কিছু সিভিক ভলান্টিয়ার চেয়েছি। নিরাপত্তা কর্মী বাড়ানো হলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে।” আশ্বাস দিয়েছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy