ত্রস্ত: ‘হিরো’র মুখে। নিজস্ব চিত্র
ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহরের একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে দেখা মেলে তার। কখনও বা রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল, থানা মোড়-সহ বিভিন্ন জায়গায় শুয়ে বসে জিরিয়ে নিতেও দেখা যায়। তারপর ফের তাকে দেখা যায় দুলকি চালে। যেতে যেতে কারও দোকান থেকে ফলমূল, কারও দোকান থেকে আনাজপাতি ‘আদায় করে’ রীতিমতো ‘তোলাবাজির’ ঢংয়ে। থানা গেটের পাশের নার্সারি থেকে খোদ পুলিশের সামনেই আস্ত গাছ তুলে নিয়েও চলে যায়। লাঠিসোটা নিয়ে তেড়ে গেলেও পরোয়া করে না। উল্টে বীর বিক্রমে তেড়ে আসে। তখন সবার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। শহরের ‘হিরো’ বলে কথা। সেই ‘হিরো’ই এখন পুরসভার মাথাব্যথার কারণ।
‘হিরো’ নামের ওই ষাঁড় বছরখানেক হল সাঁইথিয়া শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তার দাপটে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী, স্থানীয় মানুষজন এমনকি পুর-প্রশাসনও। থানার সামনেই ফুলফলের চারার দোকান রয়েছে আশিস দাসের। নন্দিকেশরী তলার কাছে ফলের দোকান রয়েছে রমেশ পালের। তাঁরা বলছেন, ‘‘দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হিরোর যখন যা ইচ্ছে হয় মুখে তুলে নেয়। লাঠি নিয়ে তাড়াতে গেলে শিং উঁচিয়ে গুঁতোতে আসে। তখন প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসতে হয়। বেশি কিছু করাও যায় না, ধর্মের ষাঁড় বলে কথা!’’
শুধু এমন ‘তোলাবাজি’ই নয়, স্থানীয় বাসিন্দা-পথচারিদের প্রাণ সংশয়ের কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে হিরো। বাসিন্দাদের দাবি, যাঁড়ের গুঁতোয় পড়ে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে দয়া বিত্তার নামে এক মহিলার। সাঁইথিয়ার একটি হোটেলে কাজ করতেন বছর বত্রিশের ওই মহিলা। ঘটনার দিন তিনি বাসন ধোওয়ার কাজ করছিলেন। সেইসময় ষাঁড়টি তাঁকে পিছন থেকে গুঁতিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই মহিলা উল্টে পড়ে গেলে তাঁর উপর দিয়ে একটি গাড়ি চলে যায়। বর্ধমান মেডিক্যালে তাঁর মৃত্যু হয়। হিরোর আতঙ্কে পথ চলতেই অনেকে ভয় পান।
স্থানীয় সূত্রে দাবি, এ পর্যন্ত হিরোর গুঁতোয় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। তাঁদেরই অন্যতম, স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী আশিস সাহা, ফল ব্যবসায়ী যতীন দেবনাথরা বলছেন, ‘‘হিরোর গুঁতোয় আমাদের নাক মুখ ফেটে গিয়েছে। ফের আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে থাকি। পুরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি।’’ পুরসভার চেয়ারম্যান বিপ্লব দত্ত বলেন, ‘‘ষাঁড়টি আমাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে বন দফতর, পুলিশ, পশুপালন দফতরকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।’’
বন দফতরের সংশ্লিষ্ট সাঁইথিয়া বিভাগের রেঞ্জার পিনাকী চক্রবর্তীকে ফোনে পাওয়া যায়নি। পুলিশেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, হিরোকে নিয়ে কী করা যায় তা ভেবে পাচ্ছে না প্রশাসন। এক কর্তার কথায়, ‘‘হাজার হোক, ধর্মের ষাঁড় বলে কথা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy