হুড়ার জবড়রা স্কুলে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা। নিজস্ব চিত্র।
দিন দিন পুরুলিয়া জেলায় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করাতে আগ্রহ বিশেষ দেখা যাচ্ছে না। যা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগে স্বাস্থ্য দফতর।
পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজের থ্যালাসেমিয়া ইউনিট থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এই জেলায় ২০২১ সালে ১৮১৮ জনের থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে ৩৩৮ জন ওই রোগের বাহক এবং ১১০ জন আক্রান্ত। ২০২২ সালে ৩৫২২ জনের পরীক্ষায় দেখা যায় ৪১২ জন বাহক। ৮৩ আক্রান্ত হন। চলতি বছরের অগস্ট মাস পর্যন্ত পরীক্ষা করিয়েছেন ৫০৬৩ জন। তাঁদের মধ্যে বাহক ৪৮০ জন। আক্রান্ত ৬১ জন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ১১১৩ জনের। যার মধ্যে ১২৬ জন বাহক ও ১৫ জন আক্রান্ত রয়েছেন।
পরীক্ষা করানোর সংখ্যা বাড়লেও তাঁদের অধিকাংশ চিকিৎসকের পরামর্শেই বাধ্য হয়ে পরীক্ষা করাতে আসছেন। স্বেচ্ছায় পরীক্ষা করাতে আসা লোকজনের সংখ্যা অতি নগন্য।
পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজের থ্যালাসেমিয়া ইউনিটের মেডিক্যাল অফিসার বিকাশ সিংহানিয়া জানান, পুরুলিয়া জেলায় ৩০০ জন কম বয়েসি ছেলেমেয়ে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তাদের চাহিদা অনুযায়ী রক্তের জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না সব সময়। তবু এই রোগ প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি।
তিনি বলেন, ‘‘নিজে থেকে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করাতে লোকজন বিশেষ আসেন না। গর্ভবতীদের অন্যান্য পরীক্ষার সময় আমরাই রক্ত সংগ্রহ করে থ্যালাসেমিয়ার পরীক্ষা করি। এ ছাড়া পরিবারের কেউ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বলে জানা গেলে তখন বাকিরা পরীক্ষা করাতে আসেন। কিন্তু অনেকেই সেটা গোপন রাখতে চান। বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানোর সংখ্যা খুবই কম।’’
পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে রয়েছে ‘ডে কেয়ার ইউনিট’। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আক্রান্তদের সেখানে রক্ত ও ওষুধ দেওয়া হয়। ঝাড়খণ্ড থেকেও অনেক পরিবার ওষুধ নিতে আসে। চিকিৎসকেরা জানান, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের সম্পূর্ণ সুস্থ করার জন্য অস্থি-মজ্জা প্রতিস্থাপন করতে হয়। কিন্তু সে সুবিধা জেলায় নেই।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দু’জন বাহকের মধ্যে বিয়ে হলে তাঁদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বিয়ের আগেই থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানো উচিত। সে জন্য পড়ুয়াদের সচেতন করতে স্কুল-কলেজে শিবির করা হয় মাঝে মধ্যে। কিন্তু পরীক্ষার ব্যাপারে অনীহা কাটেনি। সবাইকে তাই পরীক্ষা করাতে আহ্বান জানান বিকাশবাবু।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত এক বছরে বিজ্ঞান মঞ্চ ও পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজের যৌথ উদ্যোগে বেশ কয়েকটি থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ের শিবির হয়েছে। প্রতি ক্ষেত্রে প্রায় ১০০ জনের পরীক্ষা হয়। সব ক্ষেত্রেই ৫-৬ জন বাহক মিলছে। তাদের আমরা আলাদা করে কাউন্সেলিং করেছি। আগামী দিনেও শিবির করা হবে।’’
থ্যালাসেমিয়ায় অসুস্থদের পাশে থাকা এবং রক্তদান শিবির নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের তরফে জয়দেব সিং বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় এই পরীক্ষা করা হয়। বেসরকারি ভাবেও এই পরীক্ষা করানো যায়। কিন্তু এ নিয়ে গ্রামাঞ্চলে সচেতনতার অভাব রয়েছে। কিন্তু সরকারি অনুদান না পাওয়ায় আমাদের মতো আগ্রহী সংগঠনগুলি শিবির করতে পাচ্ছি না।’’ অন্য একটি সংগঠনের সদস্য রাকেশ রোশন পরিডা বলেন, ‘‘আমরা কিছু কিছু স্কুলে এ নিয়ে পড়ুয়াদের সচেতন করতে অভিযান চালাই ঠিকই। তবে এখনও থ্যালাসেমিয়া নিয়ে প্রচারের ও সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy