সিউড়ি সদর হাসপাতালের দোতলায় শিশু বিভাগে ঢুকতেই ডানদিকের দেওয়ালে বিপজ্জনকভাবে দেওয়ালে ঝুলছে তার। খোলা ফিউজ বক্স।
সদর হাসপাতাল
বীরভূমের জেলা সদর সিউড়ি। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু সেই হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দেখলে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়। এ দিন হাসপাতালের মূল ভবনের এক তলা থেকে সংক্রমণ বিভাগের দিকে যাওয়ার সময় দেখা গেল, দু’ জায়গায় সুইচ বোর্ড খুলে পড়েছে। বিদ্যুতের তার বেরিয়ে রয়েছে। মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ড, ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে যাওয়ার রাস্তা, শিশু বিভাগ, এমনকী সিসিইউ কেবিনে ঢোকার পথে ডান দিকের দেওয়ালেও বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে বিদ্যুতের খোলা তার।
শুধু তারেও রক্ষা নেই। বন্ধ গেটের সামনে আগুন জ্বালিয়ে চলে চা বানানো। এই অবস্থায় যদি কোনও বিপদ ঘটে যায়, বেরিয়ে আসার অধিকাংশ রাস্তাই বন্ধ। হাসপাতালের মূল ভবনের পূর্ব দিকে ইমার্জেন্সি বিভাগে পাশেই রয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাওয়ার মূল বড় গেটটি। রোগীর পরিজনদের ভিড় ঠেকাতে সেটি তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। গেটের সামনে গ্যাস সিলিন্ডার বসিয়ে রমরমিয়ে চলছে চায়ের ব্যবসা। পশ্চিম দিকে আরও একটি ছোট গেট রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেল, দিনে তিন বার ঘণ্টা খানেকের জন্য সেটি খোলা রাখা হয়। তার সামনেও জ্বলছে কেরোসিনের স্টোভ। ফুটছে চায়ের জল।
দুমকার কুমরাবাদ থেকে হাসপাতালে এসেছিলেন লক্ষ্মী দেবী। তাঁর মেয়ে মিঠুন দাস চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সদাইপুর থানার লালমোহনপুরের তাহেবা বিবি। মুর্শিদাবাদের হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শোনার পর থেকে রীতিমতো আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।
হাসপাতালের সুপার শোভন দেবের অফিস বন্ধ ছিল। ফোনে তিনি বলেন, “দুর্ঘটনা তো বলে কয়ে আসে না। আমরা সতর্ক রয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া আছে।’’ কিন্তু মাথার উপরে খোলা তার যে ঝুলে রয়েছে? সুপার বলেন, ‘‘সব ডেড লাইন।’’
সদর হাসপাতালেরই একতলায় খোলা তার।
স্বাস্থ্য জেলা
রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এসএনসিইউ-তে বিদ্যুতের ‘অটো-কাট’ ব্যবস্থা থাকায় শর্ট-সার্কিটের ঝুঁকি অনেকটাই কম। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রতি বছর সেই ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে রাখা হয় বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। কিন্তু অসুস্থ নবজাতকদের চিকিৎসার ওই বিভাগটি বাদ দিলে হাসপাতালের মূল ভবনেই কোনও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার বালাই নেই। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ব্রজেশ্বর মজুমদার এবং রামপুরহাট হাসপাতালের সুপার সুবোধ মণ্ডল জানান, মুল ভবন-সহ পুরো হাসপাতালেই কেন্দ্রীয় ভাবে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন আসেনি। সেটি এলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাঁদের আশ্বাস। তবে ওই হাসপাতালে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য পৃথক একটি সিঁড়ি রয়েছে।
সিয়ান হাসপাতাল
বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল পুরুষদের ওয়ার্ড, মহিলাদের ওয়ার্ড এবং এনএনসিইউ চওড়া করিডোর দিয়ে বিচ্ছিন্ন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এর ফলে আগুন লাগলে চট করে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। হাসপাতালের মূল ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতির দাবি, নিয়মিত সেই যন্ত্রপাতিগুলি পরীক্ষা করে দেখা হয়। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার অমিত মজুমদার জানান, সম্প্রতি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ির নির্দেশে দমকল বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে মাটির নীচে জলের রিজার্ভার করার পরিকল্পনা হয়েছে। হাসপাতাল ভবন ঘিরে পাইপলাইন তৈরি করা হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে সেই ব্যবস্থা আগুন নেভাতে কাজে আসবে।
আপাৎকালীন পরিস্থিতিতে বেরোনোর জন্য মূল ভবনের দোতলা থেকে হাসপাতালে ঢোকার মুখ পর্যন্ত আলাদা একটি রাস্তা রয়েছে। সুপার স্পেশ্যালিটি ভবনেও একই ব্যবস্থা রয়েছে। লিফট এবং দু’টি সিঁড়ির পাশাপাশি ওই ভবনের পিছনের দিকে আপৎকালীন সিঁড়ি রয়েছে।
রামপুরহাট জেলা হাসপাতালে ঝুলছে তার।
অন্যান্য
ছ’ দশকেরও বেশি পুরনো বোলপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। খোলা মেলা জায়গায় হলেও সেখানে কোনও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নেই। তবে বোলপুরের বিএমওএইচ সব্যসাচী রায় বলেন, “অগ্নি নির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসানোর সুপারিশ করা হয়েছে।” সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, সেখানেও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। সাঁইথিয়ার বিএমওএইচ আশিস চন্দ্র জানান, প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের দমকল কেন্দ্রের উপর ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নির্ভরশীল। তুলনামূলক ভাবে ইলামবাজার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার ছবিটা ভাল। ইলামবাজারের বিএমওএইচ সুধীর রায়চৌধুরীর জানান, অগ্নি নির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। নিয়মিত নজরদারিও করা হয়। সুধীরবাবুদের কথাতেও অবশ্য তেমন আশ্বাস পাচ্ছেন না শনিবারের ঘটনার পরে রোগীদের কেউ কেউ! সদর থেকে সাঁইথিয়া অধিকাংশের দাবি, তার যা ঝুলছে তাতে হাসপাতাল নয় জতুগৃহ!
— ছবিগুলি তুলেছেন অনির্বাণ সেন, সব্যসাচী ইসলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy