আগামী এক বছরের মধ্যে মহকুমার সমস্ত পঞ্চায়েতকে নির্মল পঞ্চায়েত হিসাবে গড়ে তোলার শপথ নিল রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন। এটা যে শুধু কথার কথা নয়, তা বোঝাতে একগুচ্ছ কর্মসূচিও নিয়েছে তারা।
সোমবার, স্বাধীনতা দিবসে অন্য অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সমস্ত ব্লক ও পঞ্চায়েতে নির্মল বাংলা মিশনের বিশেষ প্রচার অভিযানও চলে। নির্মল বাংলা গড়ার শপথ নিয়ে মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা রঘুনাথপুর শহর পরিক্রমা করে। সেখানে ছিলেন মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায়-সহ মহকুমা প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিকরা। দেবময়বাবুর শপথ, ‘‘আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা মহকুমার পঞ্চায়েতগুলিকে নির্মল করে দেখিয়ে দেব। তখন বিজয় মিছিলও করব।’’
ঘটনা হল, মহকুমার ৪৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে এখনও পর্যন্ত সাঁতুরির কৃষ্ণপুর গ্রাম সংসদ ছাড়া অন্য কোনও এলাকাকে নির্মল পঞ্চায়েত বা নির্মল সংসদ এলাকা হিসাবে গড়ে তুলতে পারেনি প্রশাসন। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে এক বছরের মধ্যে সমস্ত পঞ্চায়েতকে নির্মল পঞ্চায়েত হিসাবে গড়ে তোলার কাজ আদৌ করা যাবে তো?
প্রশাসনের একটি অংশ সংশয় গোপন না করলেও মহকুমা প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা সেই কঠিন কাজটাই করে দেখিয়ে দিতে চান। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে শৌচালয়ের উপকারিতা বুঝিয়ে লক্ষ্যপূরণ করা যাবে বলে মত তাঁদের। মহকুমা প্রশাসনের পদস্থ এক কর্তার কথায়, ‘‘এক বছরের মধ্যে সমস্ত পঞ্চায়েতকে নির্মল করে তোলাটা সহজ নয়। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে নামলে কাজটা অসম্ভবও নয়। আমরা পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতি সকলেরই কাছে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিতে চাইছি। যাতে নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্যে নিয়ে সকলে মিলে কাজ করে।”
কী ভাবে এগোনো হবে?
প্রাথমিক ভাবে তার ছক তৈরি হয়েছে। এত দিন উন্নয়নমূলক সভাগুলিতে একশো দিনের কাজের প্রকল্প, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারে বিভিন্ন তহবিলের অর্থ খরচ— এই ধরনের আলোচনার পরে সময় থাকলে নির্মল বাংলা মিশনের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হত। এ বার থেকে আলোচনার প্রথমেই থাকবে নির্মল বাংলা মিশনের অগ্রগতি। একশো দিনের কাজের প্রকল্পেও শৌচালয় তৈরি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শৌচালয় ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, সেটা দেখবে সংসদস্তরের নজরদারি কমিটি।
মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রতিটি সংসদে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তি, স্কুল শিক্ষকদের নিয়ে নজরদারি কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। এই কমিটি নজরে রাখবে থাকা সত্ত্বেও কারা শৌচালয় ব্যবহার করছেন না। সেই মতো পরিবারগুলির কাছে গিয়ে শৌচালয় ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে বোঝাবেন তারা। অন্য দিকে, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের অভিভাবকদের কাছে শৌচালয় তৈরি-সহ তা ব্যবহার করার অঙ্গীকার পত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। সব মিলিয়ে এক বছরের মধ্যে লক্ষ্যপূরণে সার্বিক ভাবে ঝাঁপাতে চাইছে মহকুমা প্রশাসন।
রঘুনাথপুর ১ ব্লকের আড়রা পঞ্চায়েত বা কাশীপুর ব্লকের বেকো পঞ্চায়েত— আদ্রা রেলশহর ঘেঁষা এই দুই পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের বুঝিয়ে শৌচালয় তৈরির অভ্যাস তৈরি করা অন্য এলাকার চাইতে সহজ। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, এই দুই পঞ্চায়েতকে নির্মল পঞ্চায়েত হিসাবে গড়ে তুলতেই এখনও পঞ্চাশ শতাংশ বাড়িতে শৌচালয় তৈরি করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রশাসনের শপথকে আশির্বাদ হিসেবেই দেখছেন আড়রার প্রধান মধুসূদন দাস বা বেকোর প্রধান কাজল ভট্টাচার্যেরা। দু’জনেই বলেন, ‘‘তহবিলের অভাব আর সচেতনতার অভাব— মূলত দুটি কারণেই নির্মল বাংলা মিশনের কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য বেঁধে দিলে কাজে গতি আসবে।”
নির্মল পঞ্চায়েত সমিতি হিসাবে ইতিমধ্যেই অনেকটা কাজ এগিয়ে রেখেছে কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতি। কাশীপুরের সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার মতে, ‘‘সব সময়েই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজে নামলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। সোমবার স্বাধীনতা দিবসের দিনে প্রশাসন একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে। আমরা আগামী বছরের মধ্যে ১৩টি পঞ্চায়েতেই নির্মল পঞ্চায়েত হিসাবে তৈরি করতে নেমে পড়েছি।”
প্রশাসনের তথ্য বলছে, মহকুমার ছ’টি ব্লকে এখনও পর্যন্ত শৌচালয় তৈরি হয়েছে ৩০ শতাংশ। যে ৭০ শতাংশ এখনও বাকি রয়েছে, তার অধিকাংশই রয়েছে প্রত্যন্ত এলাকায়। অনেকের মতে, পুরুলিয়ার মতো প্রত্যন্ত ও পিছিয়ে পড়া জেলায় বাসিন্দাদের বুঝিয়ে শৌচালয় তৈরি করিয়ে তার অভ্যাস গড়ে তোলা মোটেও সহজ কাজ নয়। সে কারণেই এখনও পর্যন্ত মহকুমার ৪৬টি পঞ্চায়েতে গড়ে ৩০ শতাংশ শৌচালয় তৈরি করতে পেরেছে পঞ্চায়েত সমিতি বা পঞ্চায়েতগুলি।
এ বার চাকা ঘুরবে, আশা প্রশাসনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy