সিউড়ি ১ ব্লকের হুসানাবাদের এক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে শুধু খিচুড়ি দেওয়া হচ্ছে। বুধবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
ডিম-আনাজের বরাদ্দ মেলেনি দু’মাস। তাই বুধবার থেকে সিউড়ি ১ ব্লকের ২১৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মা ও শিশুর পাতের আনাজ-ডিমে কোপ পড়ল। এ দিন শুধু খিচুড়ি দেওয়া হয়।
বাধ্য হয়ে এই রাস্তা নিতে হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সিউড়ি ১ ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা। মার্চ থেকে এই খাতে কোনও টাকা না-আসায় কারও কারও ধার ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, এর ফলে খাবারের জোগান দিতে হিমশিম হচ্ছিল। মুদিখানা দোকানও আর ধার দিতে চায়নি। ফলে আর পথ ছিল না। চাল, ডালের সরবরাহ রয়েছে বলে শুধু খিচুড়িটুকু দেওয়া হচ্ছে। টাকা এলে আগের মতো ডিম, আনাজ দেওয়া হবে।
এ দিন থেকে যে আনাজ-ডিম বাদ পড়তে চলেছে তা মঙ্গলবার সিডিপিওকে চিঠি লিখে জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতকেও। টাকা না-আসায় সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন সিউড়ি ১ ব্লকের সিডিপিও সঞ্জীবন বিশ্বাস এবং ওই ব্লকের এক সুপারভাইজর ঝর্ণা মজুমদার।
তবে ডিম-আনাজ দেওয়া বন্ধ না করলেও সমস্যা শুধু সিউড়ি ১ ব্লকে সীমাবদ্ধ নেই। গোটা জেলায় এক হাল। দফতর সূত্রে খবর, জেলার পাঁচ হাজারের বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের হাল মোটের উপর এক। আপাতত ধার, দেনা করে যাঁরা চালিয়ে নিচ্ছেন বা নিতে পারছেন তাঁরাই ডিম, অনাজ দিতে পারছেন। কোথাও কোথাও পরিদর্শন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। তবে জেলার কোনও কেন্দ্রে ওই খাতের টাকা ঢুকেছে বলে খবর নেই।
করোনা-পরিস্থিতি কিছু নিয়ন্ত্রণে আসার পরে পুরোদমে চালু হয়ে গিয়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি। অন্তঃসত্ত্বা, সদ্য মা হয়েছেন এমন মহিলা এবং শিশুদের দেওয়া হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার। করোনা-পর্বের আগে ওই কেন্দ্রগুলিতে শিশুদের সোম, বুধ ও শুক্রবার আধখানা করে ডিম দেওয়া হত। মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনিবার দেওয়া হত গোটা ডিম। মহিলাদের অবশ্য সপ্তাহের ছ’দিন গোটা ডিম দেওয়া হত। এখন শিশুদের ছ’দিন গোটা ডিম দেওয়া হয়। অন্য দিকে, সোম, বুধ ও শুক্রবার শিশু এবং মহিলাদের সবাইকে দেওয়া হয় ভাত এবং ডিম-আলুর ঝোল। মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনিবার দেওয়া হয় ডিমসেদ্ধ, খিচুড়ি, সয়াবিনের তরকারি এবং আনাজ। ডিম, সয়াবিন এবং আনাজ কর্মীদের বাজার থেকে কিনতে হয়। সেটা কিনতে গিয়েই দেখা দিয়েছে সমস্যা।
দুবরাজপুরের এক মুদিখানা দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই দোকান থেকে কয়েকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ডিম যেত। সেখানে ধার জমেছে আড়াই লক্ষ টাকা। ধার না শোধ করলে ডিম দেওয়া বন্ধ। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এমন ঘটনা ঘটছে। কর্মীদের কথায়, ‘‘মাস গেলে ৮ হাজার ৩০০ টাকা মাইনে পাই। এই টাকায় সংসার চালাব না ধার মেটাব।’’ মুরারই ব্লকের এক কর্মী জানাচ্ছেন, এমনও হয়েছে গয়না বন্ধক রেখে ডিম কিনতে হচ্ছে।
কেন এই সমস্যা? সিডিপিও (সিউড়ি ১) বলছেন, ‘‘এখন আগের নিয়ম বদলে সরাসরি কেন্দ্র থেকে পিএফএমএস করে টাকা ঢুকবে প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। সেই ব্যাপারে প্রশিক্ষণ হয়েছে মঙ্গলবার। আলাদা ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে দিন একটু সময় লাগছে। তার পর সকলে টাকা পেয়ে যাবেন।’’ একই বক্তব্য দুবরাজপুরের সিডিপিও প্রবীর বিশ্বাসের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy