ডোকরার দুর্গা প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুজা এখনও ঢের দেরি। সবে খুঁটি পুজো শুরু হয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে। আর তার মাঝেই এ বার নজিরবিহীন ভাবে প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতার ডোকরার সপরিবার দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে সাড়া ফেলে দিলেন বাঁকুড়ার বিকনা শিল্পডাঙার ডোকরা শিল্পী হরেন্দ্রনাথ রানা। সাড়ে সাত লাখ টাকা মূল্যের মহার্ঘ এই দুর্গাপ্রতিমা শীঘ্রই পাড়ি দেবে কলকাতার এক গৃহস্থের মন্দিরের উদ্দেশে।
বাঁকুড়ার বিকনা শিল্পডাঙার ডোকরা শিল্পের বেশ নামডাক রয়েছে। শুধু দেশের বাজারে নয়, বিদেশের বাজারেও প্রসিদ্ধ বাঁকুড়ার এই প্রাচীন হস্তশিল্প। এত দিন ডোকরা শিল্পে যে মডেল, প্রতিমা বা অলঙ্কার তৈরি হত, তা ছিল আকারে বেশ ছোট। ডোকরার সপরিবার দুর্গা প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রেও এত দিন শিল্পীরা বেছে নিতেন সর্বোচ্চ এক থেকে আড়াই ফুট উচ্চতাকেই। কিন্তু এ বার সেই আকারই প্রায় দ্বিগুণ করে সাড়া ফেলে দিলেন শিল্পী হরেন্দ্রনাথ রানা। শিল্পীর দাবি, মাস কয়েক আগে কলকাতার এক ব্যক্তি শিল্পডাঙায় এসে ডোকরার সামগ্রী দেখেন। তাঁর পছন্দ হয় আড়াই ফুট উচ্চতার একটি সপরিবার দুর্গা প্রতিমা। এর পর সেই প্রতিমার আদলেই পাঁচ ফুট উচ্চতা ও সাড়ে চার ফুট চওড়া সপরিবার দুর্গা প্রতিমা তৈরির বরাত দেন। বরাত মিলতেই কাজে হাত লাগান শিল্পী ও তাঁর সহযোগীরা। শিল্পী হরেন্দ্রনাথ রানা বলেন, ‘‘প্রতিমাটি তৈরি করতে মোট ছ’জন সহযোগী শিল্পীর সাহায্য নিয়ে মোট আড়াই মাস সময় লেগেছে। প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে আড়াই থেকে তিন কুইন্ট্যাল পিতল। কাঁচামাল, শিল্পীদের মজুরি ও নামমাত্র লাভ রেখে প্রতিমাটির দাম পড়ছে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা।”
প্রতিমাটির বিশেষত্বের কথা নিজেই জানিয়েছেন শিল্পী হরেন্দ্রনাথ। তিনি বলেন, ‘‘যে হেতু ডোকরা শিল্পে এত বড় আকারের প্রতিমা তৈরির কাজ এই প্রথম হচ্ছে, তাই বিশেষ যত্ন নিয়ে অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে প্রতিমাটি তৈরি করা হয়েছে। দুর্গা ছাড়াও গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী-সহ প্রতিটি দেবদেবীর মুখের আদলে দৈবিক ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। মহিষাসুর-সহ প্রতিটি দেবদেবীর বাহন ও অস্ত্রসস্ত্রগুলিও তৈরি করা হয়েছে প্রতিমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। প্রতিমার চালায় তৈরি করা হয়েছে বিশেষ নকশা। আর এ সবই করা হয়েছে ডোকরা শিল্প সামগ্রী তৈরির মৌলিক পদ্ধতিকে অক্ষুণ্ণ রেখে।’’
ডোকরার সাড়ে সাত লাখি এই দুর্গাপ্রতিমা তৈরি হতেই তা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়। অনেকেই অসাধারণ এই প্রতিমা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন বিকনা শিল্পডাঙায়। প্রতিমা দেখে শিল্পীর প্রশংসাও করছেন শিল্পরসিকরা। দিল্লি থেকে বাঁকুড়ায় বেড়াতে এসে বিকনা শিল্পডাঙায় ঐতিহ্যবাহী ডোকরা শিল্পের কাজ দেখতে ঢুকে পড়েছিলেন তানিয়া হালদার। তিনি বলেন, ‘‘ডোকরা মানেই দেবদেবীর ছোট ছোট মুর্তি বা প্রতিমা, এমনটাই আমাদের ধারণা ছিল। এই প্রতিমা দেখে আমাদের ধারণাটাই বদলে গেল। প্রতিমাটির আকার বেশ বড় হলেও তার নিজস্বতা রয়েছে। আমরা অভিভূত।’’ শিল্পী হরেন্দ্রনাথ রানা বলেন, ‘‘যারা দেখছেন, তাঁরাই প্রতিমাটির সুনাম করছেন। শিল্পী হিসাবে এটাই আমার বড় পাওনা। আগামী দিনে বরাত পেলে এমন প্রতিমা আবার তৈরি করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy