মাছ রাখার বাক্সে কুকুরছানার দেহ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
আটটি কুকুরছানার মৃতদেহ উদ্ধার হল সিউড়িতে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে শহরের টিনবাজার এলাকায়৷ বিষক্রিয়ার কারণে কুকুরছানাগুলির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হলেও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে সিউড়ির পশু চিকিৎসালয়ে বুধবার দুপুরে মৃত আট কুকুরছানার ময়নাতদন্ত করা হয়।
টিনবাজারের মাছবাজারের পাশেই মাছ রাখার থার্মোকলের বাক্সে প্রথমে পাঁচটি কুকুরছানার দেহ দেখতে পেয়েছিলেন স্থানীয়েরা। পাশে আরও চারটি ছানাকেও অসুস্থ অবস্থায় পড়েছিল। দ্রুত সিউড়ির একটি পশুপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের ফোন করা হয়। ঘটনাস্থলে এসেই অসুস্থ চার কুকুরছানার চিকিৎসা শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু, কিছুক্ষণের মধ্যেই আরও দুই ছানার মৃত্যু হয়৷ বাকি দু’টি ছানাকে সিউড়ির পশু চিকিৎসালয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে আরও একটি ছানার মৃত্যু হয়েছে।
সিউড়ির পশুপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক রাজর্ষি ঘোষ জানান, তাঁরা যখন খবর পেয়ে টিনবাজারে পৌঁছে দেখেন, ততক্ষণে পাঁচটি কুকুরছানা মারা গিয়েছে। বাকি চারটির অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ ছিল। প্রত্যেকের মুখ দিয়ে ফেনা বেরিয়ে আসছিল। যে একটিমাত্র কুকুরছানা চিকিৎসাধীন রয়েছে, তারও সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম বলে রাজর্ষি জানান। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বিশ্বাস, ইচ্ছাকৃত ভাবে ঠান্ডা মাথায় খাবারে বিষ মিশিয়ে এই কুকুরছানাগুলিকে খুন করা হয়েছে৷ যে বা যারা এই কাজ করেছে, তাদের মধ্যে ন্যূনতম মনুষ্যত্ব নেই। আমরা চাই দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।” ঘটনার পিছনে কারা, তা খতিয়ে দেখতে সিউড়ি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের নজরক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ন’টি কুকুরছানা মোট তিনটি মা কুকুরের সন্তান। প্রত্যেকেরই বয়স দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে। রাজর্ষি জানান, মঙ্গলবার রাতে কুকুরছানার দেহগুলিকে জিভ দিয়ে চেটে, শুঁকে অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছিল মা কুকুরগুলি। দেহ তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ে বাধাও দেয় তারা। রাজর্ষির কথায়, “প্রত্যেক সন্তানহারা মায়ের অনুভূতি একই রকম হয়। আমরা বারবার ওদের গিয়ে দেখে আসছি, বিষক্রিয়ার আশঙ্কায় ওষুধও দিয়েছি। কিন্তু সন্তান হারোনোর শোক থেকে ওরা এখনও উঠে আসেনি।’’
সিউড়ি হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জিষ্ণু ভট্টাচার্য বলেন, “চারপাশের সমাজে মানুষের উপরে যে নানাবিধ চাপ তৈরি হচ্ছে, তার ফলে কিছু মানুষের মধ্যে খিটখিটানি ভাব, হতাশা, চাপা ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে। সেই ক্ষোভের বা আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে নির্বলের উপরে। একে আমরা চিকিৎসা পরিভাষায় অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বলে থাকি।’’ তাঁর মতে, অনেকক্ষেত্রে এটি সদ্য ঘটা কোনও মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ হয়। কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের অপরাধ প্রবণতার পিছনে অতীতে ঘটা কোনও শারীরিক বা মানসিক অত্যাচারের ক্ষোভও জমে থাকতে পারে।
গত কয়েক মাসের মধ্যে এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে বীরভূমে। ২৫ নভেম্বর বোলপুর-শ্রীনিকেতন কৃষক বাজার এলাকায় পাঁচটি কুকুর ছানাকে থেঁতলে খুন করে দুই ব্যক্তি। এর পরে ১ ডিসেম্বর সিউড়ির কড়িধ্যায় একটি কুকুর এবং তার তিন ছানাকে লাঠিপেটা করার অভিযোগ ওঠে এক মহিলার বিরুদ্ধে। পরে একটি ছানা মারা যায়। মা কুকুরটি ওই মহিলার একটি মুরগির ছানা ধরে নিয়েছিল। এ বার সিউড়িতেও আট কুকুরছানার মৃত্যুর পিছনে রহস্য ঘনিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy