মোড়ক: পলিব্যাগে ঢাকা কাটা তরমুজ। পুরুলিয়ায়। ছবি: সুজিত মাহাতো
প্লাস্টিক দূষণে জেরবার শহর। গত মাসেই পথে নামতে হয়েছে পুরসভাকে। কিন্তু তাতে যে শহরের বাসিন্দাদের বিশেষ হেলদোল নেই, সেই ছবিটাই দেখা গেল বিভিন্ন বাজারে ঘুরে।
শহরের বিভিন্ন বাজারে এখনও দিব্যি চলছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার। প্লাস্টিকের কাপে চা বা প্লাস্টিকের গ্লাসে ঠান্ডা পানীয় ঘুরছে হাতে হাতে। পুরুলিয়া স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে এক যাত্রী জানান, প্লাস্টিকের কাপে গরম পানীয় খাওয়া ক্ষতিকর শুনে কাগজের কাপে চা চেয়েছিলেন দোকানে। মেলেনি।
প্লাস্টিকের ব্যাগে বিক্রেতারা ভরে দিচ্ছেন ফল, আনাজ, মাছ। চকবাজারের ফল বিক্রেতা শেখ শাহরুখ এবং শেখ মনিরের কথায়, ‘‘খদ্দেররা পলিব্যাগ চাইছেন। সবাই দিচ্ছেও। পিছিয়ে পড়ার ভয়ে আমরাও বাধ্য হচ্ছি।’’ ওই এলাকারই এক চায়ের দোকানদারের কথায়, ‘‘মাটির ভাঁড় বা কাগজের কাপের দাম অনেকটাই বেশি। ফলে প্লাস্টিকের কাপের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে।’’
এই পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের সচেতনতার উপরেই মূলত জোর দিচ্ছেন পুরসভার কর্মীরা। বাজার করতে বেরোনোর সময়ে সঙ্গে ব্যাগ বা কাপড়ের থলি সঙ্গে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। শহরের বাসিন্দা, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী অনুপম চৌধুরী বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত ব্যবহার চলবেই। নাহলে দূষণ ঠেকানো যাবে না।’’
পেশায় চিকিৎসক তথা জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি যে পাড়ায় থাকি সেই পাড়ায় অল্প বৃষ্টি হলেই রাস্তার উপর দিয়ে নর্দমার নোংরা জল বয়ে যায়। বর্জ্য প্লাস্টিকে নিকাশি নালা প্রায় বুজে গিয়েছে। কেউ বুঝছেন না এই ক্ষতি কতটা সুদূরপ্রসারী।’’
সচেতনতার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন নিস্তারিণী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষা ইন্দ্রাণী দেবও। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের গোটা কলেজ চত্বর প্লাস্টিক মুক্ত করা হয়েছে। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের সমস্যায় সরাসরি জেরবার হচ্ছেন শহরের বাসিন্দারা। নিজেরাই প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে এগিয়ে না এলে এই সমস্যা মিটবে না। পাশাপাশি পুরসভারও বর্জ্য প্লাস্টিকের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত করতে উদ্যোগী হওয়া দরকার।’’
পুরসভার সাফাই বিভাগের দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল কৃষ্ণেন্দু মাহালি জানান, বর্তমানে বর্জ্য প্লাস্টিক নিয়েই তাঁদের মূল মাথাব্যথা। প্লাস্টিক ও থার্মোকলের বর্জ্যে নিকাশি নালাগুলি প্রায় বুজে গিয়েছে। জল জমে থাকলে মশার লার্ভা জন্মাবে। আগামী দিনে ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে সেটা বড় চ্যালেঞ্জ।
কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘আমরা মানুষের কাছে আবেদন করেছি। প্রতিটি দোকানে দোকানে যাব। কাজ না হলে জরিমানার রাস্তায় হাঁটতে আমরা বাধ্য হব।’’
তাতে টনক নড়ে কি না সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy