হেতমপুর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজের। কলেজের চত্বরের অ্যান্টি র্যাগিং অ্যন্টি র্য্যাগিং হেল্প লাইন নম্বর দিয়ে পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনে র্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। যাদবপুরের ঘটনার পরে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ ও গুরুদাস কলেজেও র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে বীরভূমের বহু কলেজেই র্যাগিং বিরোধী নির্দেশিকা মানার ক্ষেত্রে কতটা কড়াকড়ি রয়েছে, সেই প্রশ্ন উঠছে।
২০০৯-এর এপ্রিল মাসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) র্যাগিং বিরোধী নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল রাজ্যের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। জেলার সিউড়ি মহকুমার সরকারি কয়েকটি কলেজ ঘুরে দেখা গেল, যাদবপুর কাণ্ডের পর কিছুটা সম্বিত ফিরলেও সেই নির্দেশিকা মানার ক্ষেত্রে অধিকাংশ কলেজই ঢিলেঢালা মনোভাব নিয়ে চলছে।
জেলার অনেক কলেজের শিক্ষকেরাই আড়ালে মানছেন, কাগজে কলমে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি আছে ঠিকই, কিন্তু কলেজে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের এ বিষয়ে সচেতন করার জন্য এবং সমস্যায় পড়লে ঠিক কী করণীয় সেটা জানাতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিতে পারেনি অধিকাংশ কলেজই। সে ভাবে প্রচার নেই কলেজ চত্বরেও। ছাত্রাবাসের ছবিও তার থেকে আলাদা কিছু নয়।
সিউড়ি বিদ্যাসাগর চত্বরে একটি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রীনিবাসে ৪০ জন ছাত্রী আছেন। কিন্তু তাঁদের দেখভালের দায়িত্বে আছেন মাত্র একজন মেট্রন। আরেক জন ছিলেন, তবে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টা ধরে এক জনের পক্ষে যে গোটা হস্টেলে নজর রাখা অসম্ভব, তা মানছেন কলেজ কর্তৃপক্ষই।
চলতি বছরেই নতুন করে খুলতে চলেছে ওই কলেজের ছাত্রাবাস। সেই ছাত্রাবাসে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য আলাদা ব্লক থাকবে কি না তা স্পষ্ট নয়। ব্যাপক আকারে প্রচার চালানোর কথা বলা থাকলেও কলেজ চত্বরে মাত্র এক জায়গায় অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির ফোন নম্বর নজরে এসেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ তপন কুমার পরিচ্ছা অবশ্য বলছেন, ‘‘ইউজিসির নির্দেশিকা মেনে একাধিক পোস্টার লাগানো হয়েছিল। সেটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে ছাত্রীদের কোনও সমস্যা নেই। র্যাগিং নিয়ে তেমন কোনও অভিযোগও নেই। বছর কয়েক আগে একটি অভিযোগ পেয়ে জার্নালিজম এবং মাস কমিউনিকেশনের এক পড়ুয়াকে ১৫ দিন সাসপেন্ড করা হয়েছিল।’’ অধ্যক্ষ জানান, ইউজিসির নির্দেশ মেনে কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের র্যাগিং বিরোধী মুচলেকা দিতে হচ্ছে।
অন্য দিকে, সিউড়ি মহাবিদ্যালয়ে খাতায় কলমে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি থাকলেও সেই কমিটির প্রধানের নাম ফোন নম্বর দিয়ে কলেজে সেভাবে প্রচার নেই। অধ্যক্ষ পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘গ্রামীণ কলেজে র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে না। তবে যাদবপুর কাণ্ডের পর সতর্কতা বাড়ানো হচ্ছে।’’ জানা গিয়েছে, কলেজে একটি ছাত্রী নিবাস থাকলেও সেখানে কোনও আবাসিক থাকেন না।
সাঁইথিয়া অভেদানন্দ মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে ১০০ আসন থাকলেও এখন জনা ১৫ পড়ুয়া থাকেন। কিন্তু সেখানেও কলেজের তরফে র্যাগিং বিরোধী প্রচার তেমন চোখে পড়েনি। খাতায় কলমে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি থাকলেও সেভাবে প্রচার নেই কলেজ চত্বরেও। অধ্যক্ষ গৌতম সেন বলছেন, ‘‘ছাত্রাবাসে খুব কম সংখ্যক পড়ুয়া থাকে। তাদের সমস্যা হলে সেটা আমরা জানতে পারি। কলেজের ক্ষেত্রেও তাই। তবে নতুন পড়ুয়াদের থেকে মুচলেকা নেওয়া হবে।’’ প্রত্যন্ত এলাকায় খয়রাশোল শৈলজা ফাল্গুনী মহাবিদ্যালয়ের ছবিটাও আলাদা নয়।
অথচ দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ যে সব পড়ুয়ারা কলেজে ভর্তি হবেন, ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু থেকেই তাঁদের র্যাগিং নিয়ে সচেতন করার কথা যে ইউজিসি বলেছে তা জানাচ্ছেন শিক্ষকদেরই একাংশ। কলেজের ছাত্রাবাসে, ক্যাম্পাসে ও ক্যান্টিন-সহ যে কোনও জায়গায় অন্যের দ্বারা শারীরিক, মানসিক ও যৌন হেনস্থার শিকার হলে সেই পড়ুয়া কার কাছে নালিশ জানাবেন সেই বিষয়ক লিফলেটও দিতে বলা হয়েছে বলে নির্দেশিকায় রয়েছে। তবে সে সব চোখে পড়ছে না অধিকাংশ কলেজেই।
তুলনায় কিছুটা ভদ্রস্থ ছবি হেতমুপর কৃষ্ণচন্দ্র কলেজের। কলেজ চত্বরের বিভিন্ন এলাকায় অ্যন্টি র্যাগিং হেল্প লাইন, যৌন হেনস্থা বা কোনও অভিযোগ থাকলে কোথায় জানাতে পারবেন পড়ুয়ারা সে বিষয়ে প্রচার চালিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য পৃথক হস্টেল থাকলেও সেখানে কেউ থাকে না। তবে কলেজ ক্যাম্পাসে ইউজিসির গাইড লাইন মেনেই কাজ হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy