Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রতিবেশীর মৃত্যুতে ডাইনি অপবাদ দিয়ে ভিটেছাড়া! তিন মাস পর বৃদ্ধকে ঘরে ফেরাল পুলিশ

গ্রামবাসীদের একাংশ ঝাড়খণ্ডের এক ওঝার কাছে যান। সেই ওঝা নাকি জানান, এই মৃত্যুর আসল কারণ গঙ্গানারায়ণ! তিনি ‘ডাইনি’। ঝাড়খণ্ড থেকে প্রতিবেশীরা ফিরতেই গ্রামে শুরু হয় অশান্তি।

পুলিশি ঘেরাটোপে শুক্রবার সপরিবার ঘরে ফেরেন গঙ্গানারায়ণ।

পুলিশি ঘেরাটোপে শুক্রবার সপরিবার ঘরে ফেরেন গঙ্গানারায়ণ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:২৮
Share: Save:

প্রতিবেশী মারা যাওয়ায় ডাইনি অপবাদ দিয়ে গ্রামছাড়া করা হয়েছিল। পুলিশি হস্তক্ষেপে তিন মাস পর বাড়ি ফিরল এক পরিবার। পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থানার ঘটনা।

পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থানার মাকপালি গ্রামের বাসিন্দা গঙ্গানারায়ণ বাস্কে। ডাইনি অপবাদ দিয়ে তাঁকে ৩ মাস আগে বাড়িছাড়া করেছিলেন প্রতিবেশীরা। নিজেদের আশ্রয় হারানোর ভয়ে প্রথমে কিচ্ছু বলতে পারেননি গঙ্গানারায়ণের পরিবার। ভয়ের চোটে তাঁরাও আত্মীয়ের বাড়িতে দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন! তাই কয়েক দিন আগেই বাড়ি ফিরতে চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছিল পরিবার। পুরুলিয়ার জেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছিলেন তাঁরা। অবশেষে শুক্রবার বাড়ি ফিরল পুরো পরিবার।

পুলিশি পাহারায় নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছে বান্দোয়ান থানার ওই বাসিন্দারা জানান, ঘটনার সূত্রপাত মাস কয়েক আগে। এক প্রতিবেশী দীর্ঘ দিন ধরে দুরারোগ্য অসুখে ভুগছিলেন। পরে মারাও যান। এর পরই গ্রামবাসীদের একাংশ ঝাড়খণ্ডের এক ওঝার কাছে যান। সেই ওঝা নাকি জানান, এই মৃত্যুর আসল কারণ গঙ্গানারায়ণ! তিনি ‘ডাইনি’। ঝাড়খণ্ড থেকে প্রতিবেশীরা ফিরতেই গ্রামে শুরু হয় অশান্তি। কোনও ভাবে গঙ্গানারায়ণকে গ্রামে রাখা যাবে না। এই দাবি নিয়ে শুরু হয় ঝামেলা। গঙ্গানারায়ণের পরিবারের অভিযোগ, কয়েক জন আবার এই সুযোগে জরিমানা করে বসেন। তাঁরা জানান, মোট ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা দিলে তবেই থাকা যাবে।

বাড়িতে থাকতে হবে। তাই জমি বন্ধক রেখে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু বাকি টাকা দিতে না পারায় শুরু হয় অত্যাচার। পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন গঙ্গানারায়ণরা। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ৪ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। কিন্তু বর্তমানে তাঁরা জামিনে মুক্ত। তাই ভীত পরিবার আর বাড়ি ফিরতে পারেনি।

শুক্রবার বাড়ি ফিরতে পেরে বেজায় খুশি গঙ্গানারায়ণ বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসনকে অনেক ধন্যবাদ। এত দিন বাড়িতে না থাকায় গবাদি পশু, চাষের সরঞ্জাম— সব চুরি হয়েছে। নির্ভয়ে যাতে বাড়ি ফিরতে পারি, সেই ব্যবস্থা করে দিতে পুলিশকে আবেদন করেছিলাম। অবশেষে বাড়ি ফিরেছি।’’

এই বিষয়ে পুরুলিয়া জেলার যুক্তিবাদী সমিতির জেলা সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো বলেন, ‘‘আজকের দিনেও যে কাউকে ডাইনি অপবাদে বাড়িছাড়া করা হয়, ভাবা যায় না। তবে পরিবারটিকে বাড়ি ফেরানোর ক্ষেত্রে পুলিশের এই দ্রুত উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’’ পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পরিবারটি বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল। তাদের নিরাপদে বাড়ি ফেরানো হয়েছে। এটা আমাদের দায়িত্ব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy