বোলপুর শহরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহ। নিজস্ব চিত্র।
শহর এ বারেও মুখ ফিরিয়েছে। কিন্তু, গ্রাম সহায় হয়েছে তৃণমূলের। এ বছর লোকসভা নির্বাচনে বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণ করে উঠে আসছে এই তথ্যই।
ঘটনা হল, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রে যা ব্যবধান ছিল, তার থেকে এ বার ব্যবধান অনেকটাই বাড়িয়েছেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল। একই ভাবে ২০১৯ সালে বোলপুর বিধানসভায় যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিল বিজেপি, তার থেকে এ বার তাদের ঝুলিতে অনেকটাই কম ভোট। বিধানসভা এলাকায় সার্বিক উন্নয়ন এবং শক্তিশালী সংগঠনের কারণেই এই ভোট বৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের। অন্য দিকে, দক্ষ নেতৃত্বের অভাব এবং যোগ্য প্রার্থী না-দেওয়ার ফলেই এমন ফলাফল হয়েছে বলে মনে করছেন বিজেপি-র নিচুতলার কর্মীরা।
তবে, বোলপুর বিধানসভা এলাকায় সামগ্রিক ভাবে ভোট বাড়লেও ঘাসফুল শিবিরে কাঁটা বোলপুর পুরসভার ফলাফল। এমনকি, অনুব্রত মণ্ডল ও রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ-সহ বোলপুর পুরসভার অনেক পুর-প্রতিনিধির নিজের বুথ ও ওয়ার্ডের ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। যা চিন্তায় রেখেছে তৃণমূলকে। তাই, বিপুল জয়ের উচ্ছ্বাসের মধ্যেও শাসক-শিবিরে কাটাছেঁড়া চলছে শহরে লিড না-পাওয়া নিয়ে। যদিও পুরসভা এলাকার ভোটের ঘাটতি পূরণ করে প্রায় ৫০ হাজার তৃণমূল প্রার্থীকে বোলপুর বিধানসভা আশনে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ‘লিড’ দেওয়ার পিছনে রয়েছে গ্রামীণ এলাকা। বোলপুর ব্লকের পঞ্চায়েত এলাকা এবং গোটা ইলামবাজার ব্লক এ বারেও ঢেলে ভোট দিয়েছে শাসকদলকে—এমনটাই সামনে আসছে ফলাফল থেকে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত লোকসভা নির্বাচনে বোলপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল জয় পেলেও বোলপুর বিধানসভা এলাকায় তিনি ১৫ হাজার ৬১২টি ভোটে বিজেপি প্রার্থী রামপ্রসাদ দাসের থেকে এগিয়েছিলেন। তবে, এ বছর বোলপুর বিধানসভা এলাকায় বিজেপি প্রার্থীকে অনেকটাই পিছনে ফেলে ৫৬.২৮ শতাংশ ভোট অর্থাৎ ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৪৬২টি ভোট নিজের ঝুলিতে টেনেছেন তৃণমূল প্রার্থী। পাঁচ বছর আগের তুলনায় ‘লিড’ তিন গুণেরও বেশি বাড়িয়ে ৪৮ হাজার ৩৪৭ ভোটে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বোলপুর থেকে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিং জয়ী হয়েছিলেন ২২ হাজার ২৮০ ভোটের ব্যবধানে।
সেই তুলনায় এ বার বোলপুর বিধানসভা এলাকাতেই প্রায় পাঁচ শতাংশ ভোটবৃদ্ধি অনেকটা স্বস্তি দিয়েছে তৃণমূলকে। পাশাপাশি অনুব্রতহীন অবস্থাতেও সংগঠনকে ধরে রাখতে দল সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করছেন অসিত মাল। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাকে কেন্দ্রীয় সরকারের একের পর এক বঞ্চনা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জোয়ার এবং নিচুতলা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের কর্মী-সমর্থকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই এই জয় সম্ভব হয়েছে।” বোলপুর কেন্দ্রের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী পিয়া সাহার দাবি, “২০২১-এর পর থেকে মানুষের মনে একটা ভয় কাজ করেছে। যার জন্য অনেকেই ভোটে শামিল নেননি। তবে, এটাও ঠিক, আগে যে-ভাবে সংগঠন ছিল, তা রাজ্যের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি বোলপুরেও অনেক খামতি থেকেছ। যার কারণে নির্বাচনে বিজেপির এই ফলাফল এবং তৃণমূলের ভোটবৃদ্ধি।”
অন্য দিকে, ভোট-প্রাপ্তির নিরিখে ছবিটা আশাব্যঞ্জক নয় বাম ও কংগ্রেসে কাছেও। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেস আলাদা ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বোলপুর বিধানসভা এলাকায় যা ভোট পেয়েছিল, এ বারের নির্বাচনে তারা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে লড়েও খুব একটা উন্নতি হয়নি। বরং ২০১৯-এর তুলনায় কিছুটা হলেও ভোট কমেছে। বোলপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী শ্যামলী প্রধান বলেন, “সর্বত্র বিনা বাধায় প্রচার করতে না-পারায় আমাদের ফল কিছুটা খারাপ হয়েছে। তবে, স্বস্তির বিষয় হঠাৎ করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা বিজেপির ভোট অনেকটাই কমেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy