Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আধাসেনা চাই, বিক্ষোভ ভোটকর্মীদের

মহকুমাশাসক (খাতড়া) রাজু মিশ্র জানান, ভোটকর্মীদের আবেদনপত্র তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। মানসবাবু বলেন, ‘‘বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার এক্তিয়ার আমার নেই। তবে নির্বাচন কমিশন নিশ্চই এ নিয়ে ভাবছে।’’ নিবির্ঘ্নেই এ দিনের প্রশিক্ষণ শেষ হয়।

ক্ষোভ: প্রশিক্ষণের আগে বিষ্ণুপুরে ভোটকর্মীরা। ছবি: শুভ্র মিত্র

ক্ষোভ: প্রশিক্ষণের আগে বিষ্ণুপুরে ভোটকর্মীরা। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর ও খাতড়া শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৪৬
Share: Save:

প্রতিটি বুথে আধাসেনা চাই। এই দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ শুরু করেছেন ভোটকর্মীরা। সেই ঢেউ এসে পড়ল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ও খাতড়ায়। শনিবার প্রশিক্ষণের আগে প্রিসাইডিং অফিসারদের একাংশ ‘আধাসেনা দিন, আমাদের ভোটে নিন’ লেখা ব্যানার সামনে নিয়ে বিষ্ণুপুর শহরে মিছিল করলেন। সেই সঙ্গে স্লোগান দিলেন— ‘আধা সেনা মোতায়েন না করলে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাওয়া যাবে না’।

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাঁর সামনেই বিক্ষোভকারীদের একাংশ অভিযোগ করেন, ‘‘আমরা রাজ্য পুলিশ চাই না। তাদের উপরে আমাদের ভরসা নেই। কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোট হবে না।’’ একই দাবিতে খাতড়া মহকুমা এলাকার ভোটকর্মীদেরও একাংশ এ দিন খাতড়া আদিবাসী মহাবিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে সকালে বিক্ষোভ দেখান। স্লোগান তুলে কলেজ চত্বরে তাঁরা মিছিল করেন। পরে দুই জায়গাতেই মহকুমাশাসদের হাতে গণস্বাক্ষর করা স্মারকিপি জমা দেন বিক্ষোভকারীরা।

মহকুমাশাসক (খাতড়া) রাজু মিশ্র জানান, ভোটকর্মীদের আবেদনপত্র তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। মানসবাবু বলেন, ‘‘বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার এক্তিয়ার আমার নেই। তবে নির্বাচন কমিশন নিশ্চই এ নিয়ে ভাবছে।’’ নিবির্ঘ্নেই এ দিনের প্রশিক্ষণ শেষ হয়।

এ দিন সারা বাঁকুড়া জেলা জুড়ে ভোটকর্মীদের (অধিকাংশ শিক্ষক) দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ছিল। বিষ্ণুপুর মহকুমার ১০৫০ জন প্রিসাইডিং অফিসারকে প্রশিক্ষণের জন্য ডাকা হয়েছিল বিষ্ণুপুর হাইস্কুলে। প্রশিক্ষণ শুরুর আগে এ দিন সকাল সাড়ে আটটার সময় প্রিসাইডিং অফিসারদের একাংশ রাস্তায় মিছিল করে স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দিকে। প্রত্যেকের বুকে সাঁটা ছিল নিরাপত্তার দাবিতে লেখা প্ল্যাকার্ড। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের সদস্য বলে পরিচিত। যদিও তাঁরা অরাজনৈতিক ভাবে এই দাবিদাওয়া জানাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তাঁরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দরজার সামনে জমায়েত করে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, বাঁকুড়ার প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখতে হবে। তা নাহলে প্রশিক্ষণ নিয়েও ভোট কেন্দ্রে যাবেন না তাঁরা।

দিন পনেরো আগে প্রিসাইডিং অফিসারদের প্রথম পর্যায়ের প্রশিক্ষণ শিবিরে একই দাবি তুলেছিলেন এক শিক্ষক। তিনি অন্য শিক্ষকদের ওই দাবিতে আবেদনপত্র বিলি করছিলেন। তাতে কিছুটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। শেষে ওই শিক্ষককে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পুলিশ আটক করে রাখে বলে অভিযোগ ওঠে। এ দিন অবশ্য মহকুমাশাসক বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের প্রশিক্ষণ নিতে পাঠান।

গত বছর ভোট নিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান উত্তর দিনাজপুরের শিক্ষক রাজকুমার রায়। পরে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহ পাওয়া যায়। অভিযোগ ওঠে তাঁকে খুন করা হয়েছে। তারপর থেকেই ভোটকর্মীদের একাংশ ভোটের সময় উপযুক্ত নিরাপত্তা চেয়ে দাবিদাওয়া জানিয়ে আসছেন। লোকসভা ভোটের মুখে সেই দাবি কার্যত আন্দোলনের চেহারা নিয়েছে।

ভোটকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার দাবি নিয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি দীনবন্ধু ভূষণ বলেন, “বিক্ষোভকারী শিক্ষকদের দাবি যুক্তিসঙ্গত। ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার।’’ নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির বিষ্ণুপুর জোনাল সম্পাদক কৃষ্ণপদ বাগের অভিযোগ, ‘‘গত কয়েক বছরে ভোটগ্রহণের যা ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া ভোট নিতে যাওয়ার কথা ভাবা যায় না। রাজ্য পুলিশের উপর কোনও আস্থা নেই ভোটকর্মীদের।’’ ভোটকর্মীর বাড়ি ফেরা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব নিতে হবে দাবি জানান তিনি।

যদিও তৃণমূলের মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি গৌতম দাসের অভিযোগ, ‘‘বামফ্রন্ট সরকারের আমালে তো লাঠিধারী হোমগার্ড দিয়ে ভোট করানো হত। এখন তো বন্দুকধারী পুলিশ থাকে। তাহলে অসুবিধা কোথায়? মুষ্টিমেয় বিজেপি ও সিপিএম মনোভাবাপন্ন শিক্ষকেরা এ ভাবে
বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Protest CRPF Vote Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE