Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

জিম্মি ছাড়লেও ক্ষতি নেই, দাবি কংগ্রেসের

বিরোধী শিবিরের কয়েক জন নেতার কটাক্ষ ছিল— ‘জেলায় কংগ্রেসকে দূরবীণ দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে।’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৮:১১
Share: Save:

‘ভাঙন’ শুরূ হয়েছিল বছর দশেক আগে।

নলহাটির পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝা সহ ৮ পুরপ্রতিনিধি কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন তৃণমূলে। তার পরে একের পর এক রাজগ্রাম থেকে দুবরাজপুর, মল্লারপুর থেকে নলহাটি—কংগ্রেসের অনেক নেতাই শামিল হন তৃণমূলে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মল্লারপুরের ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নলহাটির আসাদুজ্জামান, রামপুরহাটের ত্রিদিব ভট্টাচার্য, সাঁইথিয়ার বাপি দত্ত, দুবরাজপুরের পীযূষ পাণ্ডে। দলবদলের তালিকায় ছিল মুরারইয়ের আব্দুর রহমান, বাবলু ভকত, বিনয় ঘোষ, আসরফ আলি, নলহাটির অতুলচন্দ্র দাস, এমদাদুল হক-ও। বিরোধী শিবিরের কয়েক জন নেতার কটাক্ষ ছিল— ‘জেলায় কংগ্রেসকে দূরবীণ দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে।’

এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ২০১১ সালে নলহাটি, হাঁসন বিধানসভায় জিতেছিল কংগ্রেস। পরে অবশ্য উপ-নি:বাচনে নলহাটি আসন হারায় তারা। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কংগ্রেস আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে কংগ্রেস ছেড়ে হাঁসন কেন্দ্রের পাঁচ বারের বিধায়ক অসিত মাল যোগ দেন তৃণমূলে।

জেলায় তখন কংগ্রেসের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। দলের অন্দরমহলের খবর, অন্য দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি কংগ্রেসের অভ্যন্তরের ‘সমস্যা’ সামলানোর কাজও করতে হয়েছে তাঁকে। ছ’বারের রামপুরহাট পুরসভার জনপ্রতিনিধি, তিন বারের পুরপ্রধান জিম্মি তখন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি। টানা ৮ বছর তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থীও হন। পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৮৪ ভোট। ২০১৬ সালে রামপুরহাট বিধানসভা কেন্দ্রে লড়েন জোটের প্রার্থী হয়ে। তার আগে ২০১৫ সালে রামপুরহাট পুরসভা ভোটে প্রথম বার পরাজয়ের মুখে পড়েন তিনি। জিম্মি হারলেও রামপুরহাট পুরসভার ১ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থীরা জয়ী হন। পরে অবশ্য ওই দুই কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধিও তৃণমূলে যোগ দেন।

এ বার সেই জিম্মিও শামিল হলেন তৃণমূলে। কংগ্রেসের সঙ্গে ৩৮ বছরের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করে। রাজনৈতিক মহলের কানাঘুষো, এতে জেলায় আরও ‘দুর্বল’ হল কংগ্রেস। তবে জেলার কংগ্রেস নেতার অবশ্য প্রকাশ্যে তা মানতে নারাজ।

জেলার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক, জিম্মির ‘ছায়াসঙ্গী’ হিসেবে পরিচিত মিল্টন রশিদ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘যা ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করার ক্ষমতা কংগ্রেস কর্মীদের রয়েছে।’’

দলের অন্দরমহলের খবর, সম্প্রতি জেলা কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে জিম্মিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই দায়িত্ব পান সঞ্জয় অধিকারী। জেলায় ‘নতুন মুখ’কে কংগ্রেস সভাপতি করা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন জিম্মি। তিনি চেয়েছিলেন, দীর্ঘদিন থেকে জেলায় কংগ্রেস রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, এমন কাউকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হোক। দলের অনেকে মনে করেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তা না মানায় তৃণমূলে যোগ দেন জিম্মি।

জিম্মি তৃণমূলে শামিল হলেও জেলায় কংগ্রেসের তেমন ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন রামপুরহাট শহর কংগ্রেসের সভাপতি সত্য ভট্টাচার্য, রামপুরহাট ১ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি উত্তীয় মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেসের জেলা সংখ্যালঘু সেল ও কিসান কংগ্রেসের নেতারা। তাঁদের বক্তব্য— ‘জিম্মিদা কংগ্রেস দল এবং দলের সকলকে অভিভাবকের মতো ভালবাসতেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর দলত্যাগে বড় মাপের ক্ষতি হবে না। কারণ জিম্মির সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও অঞ্চল বা ব্লক সভাপতি তৃণমূলে যোগ দেননি।’’

জিম্মি তৃণমূলে শামিল হওয়ায় কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ‘থাবা’ বসানো যাবে বলে তৃণমূলের দাবি ভিত্তিহীন বলে মনে করছেন জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। জিম্মি অবশ্য বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলে যোগদান করার সময়ে কাউকে তো আসতে বলিনি। আর বলবোই বা কেন? তা হলে এত দিন ধরে রাজনীতি করছি কেন!’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমি এখন তৃণমূলে এসেছি। এ বার কংগ্রেসের অনেক নেতাও তৃণমূলে যোগ দেবেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy