সেই কামান। ফাইল চিত্র
মল্লরাজবাড়ির দেবী মৃণ্ময়ীর মন্দির থেকে চুরি যাওয়া গয়না ফেরত না আসার আক্ষেপ রয়েছে। তার উপরে পুজোয় তোপধ্বনি করা নিয়ে প্রশাসনের কাছে দায়ের করা অভিযোগ ঘিরে নতুন করে আশঙ্কার মেঘ তৈরি হয়েছিল। তবে শেষমেষ বিষ্ণুপুরের মহকুমা প্রশাসন জানিয়ে দিল, নিয়ম মেনে দেবী মৃণ্ময়ীর পুজোয় দফায় দফায় তোপধ্বনি করতে বাধা নেই।
বিষ্ণুপুরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেবী মৃণ্ময়ীর পুজোর সময়ে তিথি মেনে তোপধ্বনি, যা শুনতে-দেখতে প্রতি বছর পুজোর সময় বাইরে থেকেও বহু মানুষ বিষ্ণুপুরে আসেন। এ বার সেই তোপধ্বনি করা যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছিল। মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বুধবার বলেন, “কয়েকদিন আগে রাজবাড়ির একটি তরফে পুজোর সময় নিয়ম মেনে কামান দাগা হয় না বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। বিষ্ণুপুর থানাকে তদন্ত করতে বলেছিলাম। থানা থেকে খোঁজ নিয়ে জানিয়েছে, নিয়ম মেনেই কামান দাগা হয়। ফলে, আগের মতোই পুজোর সময় কামান দাগতে অসুবিধা নেই।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, নিয়ম মেনে তোপধ্বনি করা হয় না বলে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন রাজবংশের এক তরফের সদস্য অমিতাভ সিংহদেব। সেখান থেকে মহকুমাশাসককে বিষয়টি দেখতে বলা হয়। অমিতাভবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমাদের পুজোয় যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয়। মারধরও করা হয়েছে। তোপধ্বনি করার জন্য মহকুমাশাসকের মাধ্যমে লাইসেন্স দিয়েছেন জেলাশাসক। কিন্তু, নিয়ম মেনে তোপধ্বনি করা হয় না বলে মনে করি। তাই প্রশাসনকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, ক’দিন আগে বিষ্ণুপুর থানা থেকে পুজোপাঠের দায়িত্বে থাকা রাজবাড়ির সদস্য সলিল সিংহ ঠাকুরকে কামান ব্যবহারের যাবতীয় নথি নিয়ে যেতে বলা হয়। তা পরীক্ষা করেই মহকুমাশাসককে রিপোর্ট দিয়েছে থানা। এ দিন সলিলবাবু দাবি করেন, ‘‘পুজো দিতে কারও মানা নেই। এখানে সমস্ত নিয়ম মেনেই কামান দাগা হয়। কেউ যদি গায়ের জোরে তা বন্ধ করতে চান, তবে মেনে নেব না। নিয়ম মেনে যে সব করা হয়, প্রশাসন তা জানে।’’
রাজবাড়ির তরফে জানা গিয়েছে, জিতাষ্টমীর পরের দিন থেকেই দশমী পর্যন্ত কয়েক দফায় তিনটি কামান থেকে তোপধ্বনি করা হয়। রাজবাড়ি লাগোয়া মুর্চার পাহাড়ে কামানদাগা দেখতে বহু মানুষ ভিড় করেন। প্রবীণেরা জানাচ্ছেন, বছর কয়েক আগে বর্ধমান রাজবাড়ির পুজোয় কামান দাগার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। তার পরেই প্রশাসন থেকে বিষ্ণুপুরে কামানদাগায় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা শুরু হয়। যদিও বিষ্ণুপুরবাসীর প্রতিবাদে তোপধ্বনি বন্ধ হয়নি।
রাজবাড়ির সদস্য জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ ঠাকুর বলেন, ‘‘মৃণ্ময়ী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা জগৎমল্লের আমল থেকেই পুজোয় তোপধ্বনির পরম্পরা চলছে। হাজার বছর পার করে এখনও সেই ঐতিহ্য বজায় রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy