একে মুকুল কম এসেছে। তার উপরে দোসর হয়েছে পোকা! দু’য়ের গেরোয় কপালের ভাঁজ পড়েছে আম-চাষির।
চলতি মরসুমে মুকুল কম দেখে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন জেলা উদ্যান পালন দফতরের কর্তারা। কিন্তু, টানা তাপপ্রবাহ, আদ্রতা এবং তার জেরে পোকার উৎপাত সে আশঙ্কা বহু গুনে বাড়িয়ে দিয়েছে।
বীরভূম জেলার উদ্যানপালন বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, গত দেড় মাসে বৃষ্টি হয়নি। তাতে গোড়া শুকিয়ে গিয়ে বোঁটা থেকে আম ঝড়ে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। যে ভাবে তাপপ্রবাহ চলছে, তেমনটা আর ক’টা দিন চলতে থাকলে প্রচুর সংখ্যাক ফল ঝড়ে যেতে পারে। এক কর্তার কথায়, ‘‘হিমসাগর বা আম্রপালির মতো আমের আকার যথেষ্ট বড়। ফলে সেই ভার ধরে রাখা সহজ নয়।’’ আম ঝড়ে গেলে ক্ষতিও বেশি হবে।
ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পিছনে দ্বিতীয় যে কারণের কথা উদ্যান পালন দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, সেটা হল আম গাছে হাপার বা শোষক পোকার আক্রমণ। এই পোকার পোশাকি নাম ‘ম্যাঙ্গো হাপার’। দীর্ঘ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় এবং বাতাসে আপেক্ষিক আদ্রর্তা কম থাকায় এই পোকার উপদ্রব ভীষণ বেড়ে গিয়েছে। ফলনে ভাগ বসাতে এই পোকার জু়ড়ি মেলা ভার। এমনটাই জানাচ্ছেন তাঁরা।
উদ্যানপালন কর্তাদের কথার হাতেনাতে প্রমাণও মিলছে। ইতিমধ্যেই অনেকের অভিজ্ঞতা হয়েছে, আমগাছের তলা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে এক ধরনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকার উপস্থিতি। এক যুবকের কথায়, ‘‘গরমের ঠেলায় দুপুর বেলায় বাড়ির সামনের আমবাগানে বসেছিলাম। কিন্তু, বসতে না বসতেই উড়ে এসে ছোট ছোট পোকা গায়ে বসতে শুরু করল। দেখতে অনেকটা শ্যামা পোকার মতো।’’ ওই পোকা কামড়ায় বলেও জানাচ্ছেন দুবরাজপুরের ওই যুবক।
একই অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক আমচাষির। খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আব্রার হোসেনের চারশোটি আম গাছের বাগান রয়েছে। বাবুইজোড় এলাকায়। তিনি বলছেন, ‘‘আমগাছের স্বাস্থ্য ভাল। পোকা নজরে আসেনি। কিন্তু, ফলন অনেক কম।’’ উত্তম মণ্ডল গত দশ বছর ধরে রাজনগরের জাহানাবাদে বাগান করছেন। তিনি বলছেন, ‘‘এ বছর এমনিতেই মুকুল কম। তার উপরে বিস্তর পোকার উপদ্রব রয়েছে। আম ঝরে যাচ্ছে।’’ শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা তপনকুমার রায়। তিনি যৌথ ভাবে এ বার সাতশো আম চারার বাগান করেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘অন্য বছর কুইন্ট্যাল কুইন্ট্যাল আম হয়। এ বছর অধিকাংশ ঝড়ে যাচ্ছে। পোকার উপদ্রব দেখিনি ঠিকই। কিন্তু, শান্তিনিকেতনে বাড়িতে যে আমগাছ রয়েছে তা থেকে ঘরে পোকা ঢুকে যাচ্ছে!’’
এই পরিস্থিতিতে দাওয়াই শোনাচ্ছেন উদ্যান পালন কর্তারা। তাঁদের অনেকেরই মত, মুকুল আসার অন্তত দুই থেকে তিন মাস আগে আম বাগানে সার প্রয়োগ, চাষ দেওয়া, জলসেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। এই সময় কোনও ভাবে গাছকে বিরক্ত করা যাবে না। কারণ পরিচর্যার জেরে গাছে নতুন শাখা-প্রশাখা তৈরি হলে মুকুল আসার সম্ভাবনা কমে যায়। এই গাছগুলিতে পুরনো শাখায় ফুল আসে। যে সব শাখা বসন্ত বা গ্রীষ্মে জন্মায়, তাতে পরের বছর মাঘ-ফাল্গুন মাসে ফুল আসে। তবে, ফুল আসার আগে কিছু রোগপোকার আক্রমণ হলে মুকুল প্রস্ফুটিত হতে পারে না। এই সময় রোগপোকার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
এঁদেরই এক জনের কথায়, মুকুল আসার সময় থেকেই আমগাছের প্রধানতম শত্রু এই পোকা আসতে শুরু করে। মূলত আমগাছের কচি অংশের রস শুষে খায়। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের ওজনের প্রায় কুড়ি গুন রস একটি পোকা খেতে পারে। ফলে গোটা গাছের ক্ষতি হয়।’’ আম গাছে শোষক পোকার সমস্যা সবচেয়ে ব্যাপক। সাদা, সবুজাভ হলুদ বা হাল্কা হলুদ রঙের পোকাগুলি আমের মুকুল আসার পর ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমণ করে। শোষক পোকার শুষে নেওয়া রসের উপরে ছত্রাকের আক্রমণও হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy