কারও আস্থা সাবেকিয়ানায়। কেউ মেতে রয়েছেন থিমে। এ বার কোন ক্লাব এগিয়ে থাকবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু জেলা সদর সিউড়ির দুর্গোৎসবে ক্লাবগুলির শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে। মঙ্গলবার শহর ঘুরে তেমন ছবিই উঠে এল।
এ বারই সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ সিউড়ির জোনাকি ক্লাবের। ক্লাব উদ্যোক্তারা চেয়েছিলেন স্মরণীয় এই বর্ষের প্রতিমা যেন সাবেক রীতির হয়। হয়েছেও তা-ই। জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানে সেই বড় টানা চোখের দেবী মূর্তি। সোনালি রঙের দুর্দান্ত করুকার্য করা ডাকের সাজ। পিছনে বিশাল ভরাট চালি। হঠাৎ দেখলে কলকাতার কোনও বনেদি বাড়ির ঐতিহ্যশালী দুর্গাপ্রতিমার মুখ ভেসে ওঠে যেন!
হওয়ারই কথা। মৃৎশিল্পী যে কুমারটুলির বর্ষিয়ান নিমাই পাল। মঙ্গলবার সকালে সবে কাজ শেষ করে একবার জরিপ করে নিচ্ছিলেন নিমাইবাবু। ক্লাবের সম্পাদক প্রসেনজিৎ দাস বলছেন, ‘‘মন ভরে গিয়েছে। অনবদ্য প্রতিমা গড়েছেন শিল্পী। মণ্ডপও বড় জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানের আদলে।’’
জোনাকির উদ্যোক্তারা যখন সাবেকিয়ানায় মেতে, ঠিক তিনশো মিটার দূরের চৌরঙ্গী ক্লাবে তখন থিম পুজোর তোড়জোড়। উদ্যোক্তাদের দাবি, গত সাত বছরে কখনও মিশরের দেশ, কখনও ‘দাও ফিরে সে অরণ্য’, কখনও বা খাজুরাহ, কখনও বা সমুদ্রের তলদেশ ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁরা। এ বারও সেই একই পথে। থিম হচ্ছে— ‘মায়াবৃত’। ক্লাব সম্পাদক দেবাশিস ধীবরের কথায়, ‘‘দুটো পথ। একটা অন্ধকারের, অপরটা আলোর। জন্মের পরেই মায়ায় আবদ্ধ মানুষকে নিজের পথ নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়। এ বার সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করছি।’’ প্রবেশপথের মুখে কলকাতার সায়েন্স সিটির মতো ঘূর্ণায়মান ট্যানেল, মায়াবী আলো, আয়না দিয়ে তৈরি মণ্ডপ এবং ব্যাতিক্রমী প্রতিমা— সব মিলিয়ে সত্যিই এক ভিন্ন পরিবেশ।
থিম ভাবনায় গা ভাসিয়েছে সিউড়ি একের পল্লি ও হাটজনবাজার মিলনী সঙ্ঘও। লোকসঙ্গীতে ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারে এ বার মণ্ডপ তৈরি করছে একের পল্লি। প্রতিমা তৈরি হচ্ছে পাট দিয়ে। অন্য দিকে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’র দৃশ্যপট এবং সমকালীন দেবীমূর্তি ফুটিয়ে তুলতে মন দিয়েছে মিলনী সঙ্ঘ। দু’টি পুজো উদ্যোক্তাই চান, হারিয়ে যেতে বসা বাদ্যযন্ত্র বা অতীতটাকে তুলে ধরতে। অন্য দিকে, সিউড়ির যান্ত্রিক ক্লাবে এ বার মণ্ডপ বৌদ্ধমন্দিরের আদলে। কিন্তু কৃষ্ণনগর থেকে আনা প্রতিমায় সেই ধারা অবশ্য বজায় নেই। ‘‘একটা ফিউশন বলা যেতে পারে’’— বলছেন ক্লাবের উদ্যোক্তারা।
শহরের অন্যতম জনপ্রিয় পুজো আনন্দপুর সর্বজনীন। এখানে আবার সাবেকিয়ানাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানেও টানা চোখের দেবী মূর্তি। ক্লাব সম্পাদক সমর্পণ ভাট্টাচার্য বলছেন, ‘‘সিউড়িতে সব চেয়ে জনপ্রিয় পুজো এটাই। শহরের মানুষ এখানে এসে সময় কাটাতে ভালবাসেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, পুজোর পরিবেশ সবটাই মিলেই একটা দারুণ ব্যাপার। সেখানে হঠাৎ প্রতিমা অন্য স্বাদের হলে ছন্দপতন ঘটবে। তাই সাবেকিয়ানা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy