Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বাড়েনি বিক্রয়মূল্য, দুধ সংগ্রহ কমছে

বিষয়টি টের পেয়েছেন কংসাবতীর কর্তারাও। এর প্রভাব সরাসরি সংস্থার আয়ের উপরে পড়ছে বলে মানছেন প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকে।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৭
Share: Save:

বেড়েছে গো-পালনের খরচ। অথচ দুধের দাম বাড়ছে না। ফি বছর দুধের দাম বাড়ানোর দাবি তুলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ চাষিদের। এ বার ‘কংসাবতী মিল্ক প্রোডিউসার ইউনিয়ন লিমিটেড’-এর থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন গো-চাষের সঙ্গে যুক্ত জেলার বড় অংশের মানুষ।

বিষয়টি টের পেয়েছেন কংসাবতীর কর্তারাও। এর প্রভাব সরাসরি সংস্থার আয়ের উপরে পড়ছে বলে মানছেন প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকে। গত তিন বছরে চাষিদের থেকে দুধ কেনার তথ্য তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে দৈনিক প্রায় ৪০ হাজার লিটার দুধ চাষিদের কাছ থেকে কেনা হত। ২০১৮-তে তা কমে দাঁড়ায় ৩৬ হাজার লিটারে। চলতি বছর পরিমাণ আরও কমে হয়েছে ২৫ হাজার লিটার।

কংসাবতীর এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, মাস তিনেক আগেও প্রতি ১০ দিনে প্রায় এক কোটি কুড়ি লক্ষ টাকা মূল্যের দুধ কিনত সংস্থা। সম্প্রতি দুধ কেনার খরচ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দিনে ৭৫-৮০ লাখে! কংসাবতীর আওতায় জেলা জুড়ে দুগ্ধ চাষিদের নিয়ে ৩৬৫টি সমবায় সমিতি গড়া হয়েছিল। যার মধ্যে ৫৮টি সমবায় সমিতি কার্যত বন্ধ। এই সমবায়গুলির আওতায় দু’হাজারের বেশি দুগ্ধ চাষি ছিলেন। তাঁরা কংসাবতীকে দুধ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন বলে খবর। সোনামুখী, কোতুলপুর, ইন্দাস, পাত্রসায়র, জয়পুর, বিষ্ণুপুর, তালড্যাংরা ব্লক থেকে বিক্রির পরিমাণ খুবই কমে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন সংস্থার ওই আধিকারিক।

কেন কংসাবতীকে দুধ বিক্রি করছেন না চাষিরা?

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কংসাবতীর দুধের দর শেষ বেড়েছিল ২০১৫ সালে। সেই সময় লিটারে চার টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল। ওই সময় ১২-১৪ টাকা প্রতি কেজি দরে চাষিদের ভর্তুকিযুক্ত গো-খাদ্য বিক্রি করত কংসাবতী। এখন সেই দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজিতে ১৯ টাকা। ফলে গো-পালনের খরচ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু দুধের দাম না বাড়ায় চাষিদের লাভ বাড়েনি।

চাষিদের দাবি, এখন এক লিটার দুধের জন্য খরচ দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩০ টাকা। কংসাবতী লিটার পিছু দর দিচ্ছে ২৫ টাকা। দু’টাকা ইনসেনটিভ মিলিয়ে লিটার পিছু ২৭ টাকা দাম পাচ্ছেন বিক্রেতারা। তাঁদের কথায়, ‘‘এতে ঢাকের দায়ে মনসা বিক্রি

হওয়ার অবস্থা।’’ এই পরিস্থিতিতে কংসাবতীর আওতায় থাকা জেলার গো-চাষিদের বড় অংশ বেসরকারি সংস্থাগুলিকে লিটার পিছু ৩২ টাকা মূল্যে দুধ বিক্রি করছেন।

সারেঙ্গার সুখাডালি সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান তথা কংসাবতী পরিচালন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মামনি গরাই বলেন, “দুধের সংগ্রহ মূল্য না বাড়ানোর ফলে কংসাবতীতে দুধ বিক্রি করতে চাইছেন না গো-চাষিরা। এখন বাজারে বেসরকারি দুগ্ধজাত সামগ্রী প্রস্তুতকারী সংস্থার অভাব নেই। তাঁরা বেশি দাম দেওয়ায় চাষিরা সেখানেই যাচ্ছেন। অবিলম্বে দুধের সংগ্রহ মূল্য বাড়ানো দরকার।”

সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জয় শীট বলেন, “দুধ সংগ্রহের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, দুধের সংগ্রহ মূল্য না বাড়ানোয় তাঁরা অন্যত্র দুধ বিক্রি করছেন। সমস্যার কথা রাজ্যকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে কী নির্দেশিকা আসে, তার অপেক্ষায় রয়েছি।” সমস্যাটি নজরে এসেছে রাজ্য ‘অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনে’-এর ভাইস চেয়ারম্যান

শুভাশিস বটব্যালেরও। তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট দফতর ভাবনাচিন্তা করছে। শীঘ্রই এ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানা যাচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Kangsabati Milk producer union Milk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy