জটলা: মৃত শেখ বাবর আলির বাড়ির সামনে পড়শিরা। নিজস্ব চিত্র
কিছু দিন আগেই বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলে সাংগঠনিক পদে রদবদল হয়েছে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, তারপরেই বিষ্ণুপুর ব্লকের উলিয়াড়া পঞ্চায়েতে দীর্ঘ দিন ধরে কোণঠাসা হয়ে থাকা দলের একটি গোষ্ঠী মাথা চাড়া দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে। যা মেনে নিতে পারেনি দলের অন্য গোষ্ঠী। বাসিন্দাদের একাংশের সঙ্গে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, এলাকার ক্ষমতা কাদের হাতে থাকবে, তা নিয়ে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর রেষারেষির জেরেই প্রাণ গেল উলিয়াড়ার প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান শেখ বাবর আলির।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, বাবর দলের বিষ্ণুপুর ব্লক সভাপতি তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। ২০১৩ সালে উলিয়াড়ার পঞ্চায়েত প্রধান হন বাবর। ২০১৬ সালে শ্যামবাবু বিধানসভা ভোটে হারার পরে দলে তাঁর প্রভাব কমে। সেই বছরেই বিক্ষুব্ধদের আনা অনাস্থায় বাবর প্রধান পদ থেকে সরে যান। এলাকাও হাতছাড়া হতে শুরু করে বাবরের।
তাঁর মেয়ে শিল্পা খাতুনের অভিযোগ, “প্রধানের পদ যাওয়ার পরে বাবা গ্রামে থাকলেই ঝামেলা হত। বাড়িতেও এক বার ভাঙচুর হয়। তাই বাবা বেশির ভাগ সময় বিষ্ণুপুর শহরে থাকত।’’
কীসের জন্য এত রেষারেষি?
বিরোধীদের দাবি, দ্বারকেশ্বর নদের বালি ঘাট ও ইটভাটা থেকে ‘তোলা’ আদায় এবং পঞ্চায়েতের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়ণের রাশ কোন গোষ্ঠীর হাতে থাকবে, তা নিয়েই শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর গোলমাল। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা টেনে আনছেন, সম্প্রতি ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচির নামে স্থানীয় ইটভাটার মালিক, গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ‘তোলা’ চাওয়ার অভিযোগে পুলিশ উলিয়াড়ার তিন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হরকালী প্রতিহারের দাবি, “কাটমানির ভাগাভাগি নিয়েই তৃণমূলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তি চলছে।’’
ওই এলাকায় রাজনৈতিক ক্ষমতা বর্তমানে কার্যত একক ভাবে তৃণমূলের। সিপিএমের কার্যত কোনও সংগঠন সেখানে নেই। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন ঘোষের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে বেলিয়াড়া গ্রামে সিপিএমের শাখা কমিটিই গড়া যায়নি।’’ বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা নেতারাও মানছেন, বেলিয়াড়া গ্রামে তাঁদের দলেরও সংগঠন তেমন মজবুত নয়। বাসিন্দাদের দাবি, বিরোধী-শূন্য এই এলাকায় লড়াই তাই তৃণমূলের অন্দরেই। ওই অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
এ দিন এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এবং নিচুতলার তৃণমূল কর্মীরা দাবি করেন, বাবর কার্যত এলাকা ছাড়া হওয়ায় উলিয়াড়ায় বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধান তাসমিনা খাতুনের স্বামী রহিম মণ্ডলের গোষ্ঠীর লোকেদের ‘বাড়বাড়ন্ত’ শুরু হয়। যদিও এ দিন সকালে রহিম ও তাঁর স্ত্রী তাসমিনা ওই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
দলের অন্দরের খবর, কয়েক মাস আগে বিষ্ণুপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় শ্যামবাবুকে। তখন থেকেই ফের বাবরের গোষ্ঠীর লোকজন সক্রিয় হন। তা নিয়ে ফের দু’তরফের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সম্প্রতি জেলা সভাপতির পদ থেকে শুভাশিস বটব্যালকে সরিয়ে জেলা চেয়ারম্যান করায় বাবরের ঘনিষ্ঠেরা এলাকার ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার থেকেই ওই দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে বোমাবাজি শুরু হয়। ইদে বাবর গ্রাম ফিরতেই সংঘাত চরমে ওঠে। শনিবার রাতে তা খুনোখুনির আকার নেয় বলে অভিযোগ। রবিবার শ্যামবাবু অভিযোগ করেন, “আমাদের দলেরই কিছু লোকজন ওই গ্রামের দলীয় কর্মীদের একাংশকে প্ররোচিত করে এই ঝামেলা তৈরি করেছেন।’’ আর শুভাশিসবাবু দাবি করেন, “আমি চার মাস জেলা সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। তার মধ্যে তিন মাস কেবল করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেই কেটে গিয়েছে। বিষ্ণুপুরের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর সুযোগই পাইনি। আমার কোনও গোষ্ঠী নেই। গোষ্ঠীবাজিকে প্রশয়ও দিই না।’’
রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যামল সাঁতরা গোষ্ঠিদ্বন্দ্বের কথা অস্বীকার করে বলেন, “খুনের ঘটনার যথাযথ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। খুনের পিছনে কী কারণ, তা তদন্তেই উঠে আসবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy