ভূগর্ভস্থ জলকে ফ্লোরাইড মুক্ত করতে ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ বসানো হয়েছে কেন্দ্রগড়িয়া স্কুলে। নিজস্ব চিত্র।
এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে মাত্রাতিরিক্ত ফ্লোরাইডের উপস্থিতির ফলে স্কুলের গভীর নলকূপের জলেও রয়েছে বিষ। মিড-ডে মিলের রান্না, দৈনন্দিন পানীয় জল সব কিছুতেই সেই ফ্লোরাইডযুক্ত জলই ব্যবহার করতে হত খয়রাশোলের কেন্দ্রগড়িয়া উচ্চ বিদ্যালের পড়ুয়াদের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে সেই সমস্যা এখন মিটতে চলেছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার ভূগর্ভস্থ জলকে ফ্লোরাইড মুক্ত করতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বসানো হয়েছে স্কুল প্রাঙ্গণে। ইতিবাচক ফলও মিলছে। তবে সেই জল ব্যবহারের আগে আরও একটি ল্যাবরেটরি টেস্টের রিপোর্ট পাওয়া বাকি আছে। হয়তো দু’ একদিনের মধ্যেই ফল হাতে এসে যাবে। রিপোর্ট ইতিবাচক হলেই স্কুল পড়ুয়াদের পরিস্রুত পানীয় জল পেতে সমস্যা থাকবে না।
কেন্দ্রগড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমিক স্কুল এটি। স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৭৫৪। স্কুলের প্রধান সমস্যা এলাকার ভূগর্ভস্থ জলে মাত্রাতিরিক্ত ফ্লোরাইডের উপস্থিতির প্রভাব পড়ত পানীয় জলে। গোটা এলাকায় ফ্লোরাইডের মাত্রা ৭ থেকে ১২ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে। স্কুলেও পানীয় জলে ফ্লোরাইডের মাত্রা ছিল ৮ মিলিগ্রাম। সমস্যা মেটাতে প্রশাসনের সর্বস্তরে দরবার করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতদিনে তার সমাধান হতে চলেছে, তবে ভিন্ন পথে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুঘটকের কাজ করেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক ছাত্র দেবদাস চৌধুরী। বীরভূমের বাসিন্দা ওই গবেষক এলাকায় এসে ফ্লোরাইড ও পানীয় জলের মান সংক্রান্ত গবেষণা করেন। দূষণ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পড়েই তিনি এলাকায় এসেছিলেন। ওঁর সঙ্গী ছিলেন আরও কয়েকজন। একটি সমীক্ষা চালিয়ে অবাক হন সকলে। ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড ও ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজ়েশন-এর গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতি লিটার পানীয় জলে ১.৫ মিলিগ্রাম বা তার বেশি ফ্লোরাইড হলেই তা পান করা বিপজ্জনক। সেখানে এলাকার জলে ফ্লোরাইড মাত্রাতিরিক্ত। তখনই স্কুলের জলে ফ্লোরাইডের মাত্রা কমানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন দেবদাস। পাশে পান ওঁর শিক্ষক পঙ্কজ রায়কে।
দেবদাস বলেন, “স্কুলে আমরা প্রতি লিটারে ৮ মিলিগ্রাম ফ্লোরাইড পেয়েছিলাম। এলাকায় তার থেকেও বেশি পেয়েছিলাম। যা দাঁত ও হাড় ভঙ্গুর করে, আরও নানা রোগ হয়। পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে স্কুলের জলকে ফ্লোরাইড মুক্ত করার কথা ভাবি। ফান্ড প্রয়োজন ছিল, ফলে আমরা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করি।”
জল ফ্লোরাইড মুক্ত করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় একটি ফিল্টার তৈরি করেছে। এর নির্মাণে সহজলোভ্য ও স্বল্প মূল্যের দু’টি উপকরণ ল্যাটেরাইট ও অ্যাক্টিভেটেড অ্যালুমিনা ব্যবহার করা হয়েছে। দেবদাস বলেন, “ফিল্টার করার পরে প্রাপ্ত জলে ফ্লোরাইডের পরিমাণ শূন্য। জলে আয়রন সংক্রান্ত একটি পরীক্ষা করা হচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার রিপোর্ট পেলেই ওই জল ব্যবহারযোগ্য হয়ে যাবে।”
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌম্যেন্দু মল্লিক ও স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি উত্তম গায়েন জানান, পড়ুয়াদের এক গ্লাস পানীয় জল দিতে পারতাম না। এটি আক্ষেপ ছিল। অভিভাবকেরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। আশা করি, এ বার সমস্যা মিটে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy