Advertisement
০৪ জানুয়ারি ২০২৫
Schools

গাছতলায় সাঁওতালি মাধ্যম স্কুল

সাঁতুড়ি ও কাশীপুরে পাঁচটি সাঁওতালি মাধ্যমের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। বান্দোয়ানের শিরীষগোড়া সাঁওতালি মিডিয়াম হাই স্কুলে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হয়। কী অবস্থায় স্কুলগুলি?

মাঠেই চলছে পড়াশোনা। সাঁতুড়ির কেশরপুরে।

মাঠেই চলছে পড়াশোনা। সাঁতুড়ির কেশরপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪৩
Share: Save:

জুনিয়র হাই স্কুল থেকে ধাপে ধাপে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে পুরুলিয়ার সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলগুলি। পড়ুয়াও ভর্তি হয়েছে। কিন্তু পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। যার জেরে প্রায় সমস্ত স্কুলে পঠনপাঠন চলছে খোলা মাঠে বা গাছতলায়। শ্রেণিকক্ষের যেমন অভাব আছে, তেমনই স্থায়ী শিক্ষকের সঙ্কটও রয়েছে। সব মিলিয়ে সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুলগুলিকে উন্নয়ন থেকে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সাঁওতাল টিচার অ্যাসোসিয়শন’ নামে শিক্ষক সংগঠনের।

সাঁতুড়ি ও কাশীপুরে পাঁচটি সাঁওতালি মাধ্যমের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। বান্দোয়ানের শিরীষগোড়া সাঁওতালি মিডিয়াম হাই স্কুলে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হয়। কী অবস্থায় স্কুলগুলি? সাঁতুড়ির খাড়বাড় সাধু রামচাঁদ হাই স্কুলে পড়ুয়া রয়েছে ১০৪ জন। শ্রেণিকক্ষ মাত্র তিনটি। সেখানে সবার ঠাঁই হয় না। তাই বহু পড়ুয়াকে খোলা আকাশের নীচে ক্লাস করতে হচ্ছে। ছ’জন পার্শ্বশিক্ষক ও সাত জন স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে পঠনপাঠন চলছে।

একই অবস্থা টাড়াবাড়ি গ্রামের কবি সারদাপ্রসাদ কিস্কু হাই স্কুলেরও। ১২০ পড়ুয়ার জন্য রয়েছে তিনটি শ্রেণি কক্ষ। ছ’জন পার্শ্বশিক্ষক ও এক স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। এখানেও শ্রেণিকক্ষে স্থান না হওয়ায় খোলা জায়গায় বসে ক্লাস করে পড়ুয়ারা। ওই ব্লকেরই কেশরপুর গ্রামের কুশল বাস্কে আদর্শ হাই স্কুলে পড়ুয়া ১৪৮। শ্রেণিকক্ষ তিনটে। বাইরে খোলা জায়গায় পড়ুয়ারা রোদে পুড়ে, জলে ভিজে ক্লাস করছে দেখে গ্রামবাসী খড়ের ছাউনি তৈরি করে দেন। কিন্তু সেখানেও সব পড়ুয়ার জায়গা হয় না।

শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষের সমস্যার কারণেই ‘প্র্যাকটিক্যাল’ নির্ভর বিষয় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শুরু করতে পারছে না কোনও স্কুলই। কুশল বাস্ক আদর্শ হাই স্কুলের টিআইসি প্রশান্ত হাঁসদা (যিনি পার্শ্ব শিক্ষক) জানান, তাঁরা উচ্চ মাধ্যমিকে ভূগোল ও শারীরশিক্ষা বিষয় শুরু করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ না থাকায় প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস কোথায় করানো হবে, সেই অনুমতি পাওয়া যায়নি।

কাশীপুর ব্লকের লোহাট হাই স্কুলের টিআইসি সদানন্দ হাঁসদা জানান, তাঁদের পড়ুয়ার সংখ্যা ১৩২ জন। সদানন্দের কথায়, ‘‘চারটি শ্রেণিকক্ষে সমস্ত ছাত্রছাত্রীর জায়গা হয় না। তাই কিছু পড়ুয়াকে মাঠে বসতে হয়।’’ এখানেও ভরসা পাঁচ জন পার্শ্বশিক্ষক ও আট জন স্বেচ্ছাসেবক।

কাশীপুরের সোনাইজুড়ি তিলকা মুর্মু হাই স্কুল অবশ্য পাশের প্রাথমিক স্কুলের দু’টি ঘর ব্যবহার করতে পারে। সে জন্য তাদের পড়ুয়াদের খোলা মাঠে বসতে হয় না। টিআইসি শিবপ্রসাদ মুর্মু বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলের ভরসায় একটা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল চলছে!’’ বান্দোয়ানের শিরীষগোড়া সাঁওতালি মিডিয়ার হাই স্কুলের টিআইসি তপন সোরেন জানান, শ্রেণিকক্ষর সংখ্যা কম হওয়ায় একটা ঘরেই কয়েকটা ক্লাসের ছেলেমেয়েকে বসাতে হয়।

স্কুলগুলির দাবি, অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ চেয়ে তারা সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহলে জানিয়েছেন। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সাঁওতাল টিচার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক শত্রুঘ্ন মুর্মুর দাবি, ‘‘প্রশাসনিক স্তরে দীর্ঘসূত্রিতা ও নিয়মের বেড়াজালই দায়ী। জেলা শিক্ষা দফতর স্কুলগুলিকে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের পরিকল্পনা, আনুমানিক ব্যয়ের হিসাব তৈরি করে ‘ভেটিং’ জমা দিতে বলেছিল। কিন্তু জেলা পরিষদ থেকে জানানো হয়, নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবিত মোট অর্থের ০.৫ শতাংশ অর্থ ‘ভেটিং’ করার জন্য জমা দিতে হবে। শত্রুঘ্ন বলেন, ‘‘কোনও স্কুলেরই নিজস্ব তহবিলে সেই পরিমাণ টাকা নেই।’’

তবে সূত্রের খবর, সেই সমস্যা মেটানো হয়েছে। সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে জেলা
সমগ্র শিক্ষা মিশনও।

অন্য বিষয়গুলি:

Schools poor infrastructure purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy