ভাইফোঁটার বাজারে মিষ্টি হট-কেক। পুরুলিয়ায় সোমবারের মিজস্ব চিত্র।
উপহার তো থাকবেই। কিন্তু, এই বিশেষ দিনটায় ভাইকে মিষ্টিমুখ না করালেই যে নয়!
সেই সুযোগে ভাইফোঁটায় অনেক বোন-দিদিই দাদা-ভাইকে উপহার হিসাবে দিচ্ছেন মিষ্টির স্পেশ্যাল প্যাকেট। এ বার পুরুলিয়ায় এই ধরনের প্যাকেটের ভাল চাহিদা রয়েছে। সেই চিরাচরিত মিষ্টির দোকানে ঢুকে ‘এটা দিন-ওটা দিন’ না করে রকমারি মিষ্টির গিফট হ্যাম্পার। পুরুলিয়ায় শহরের তিনটি দোকান এই ধরনের প্যাকেট চালু করেছে। ক্রেতাও হচ্ছে বিস্তর। দাম ১৬০ থেকে ৭০০ টাকা। যার যেমন রেস্ত।
এমনিতেই মিষ্টিমুখের রকমারি আয়োজন ছাড়া বাঙালির বারো মাসে চোদ্দ পার্বণ সম্পূর্ণ হয় না। সে জামাইষষ্ঠী বা বিজয়া দশমী হোক, কিংবা ভাইফোঁটা। হরেক মিষ্টির আয়োজন ছাড়া উৎসব কেমন যেন পানসে। তবে ভাইদের মাপা ক্যালোরির কথা মাথায় রেখে বোনেরা নানা দোকান ঘুরে মিষ্টির বাজার সারছেন। রসে টইটম্বুর মিষ্টির বদলে হালকা মিষ্টিরই কদর বেশি। সোমবার দিনভর পুরুলিয়া শহরের নানা দোকান ঘুরে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
শহরের কাপড়গলি সংলগ্ন পি এন ঘোষ ষ্ট্রিটের একটি দোকানে দেখা গেল, হাল্কা মিষ্টিই বেশি চাইছেন ক্রেতারা। এই দোকান এ বার ভাইফোঁটা উপলক্ষে নতুন কয়েকটি মিষ্টি রেখেছে। ফলের নির্যাস মিশিয়ে এই মিষ্টিগুলি তৈরি হয়েছে। যেমন আনার রাবড়ি, ম্যাঙ্গো রাবড়ি, কাজু ভুজিয়া, ড্রাইফ্রুট লাড্ডু, ডুমুর-কাজু সন্দেশ। এ ছাড়া, নলেন গুড়ের জলভরা সন্দেশ, ঘিয়ের লাড্ডু, ঘিয়ের বোঁদে, জিলিপি, গুলাবজামুন তো রয়েইছে। দোকানের মালিক সজন রাজগড়িয়া বলছিলেন, ‘‘রসগোল্লা, পান্তুয়ার মতো সনাতন মিষ্টি তো রয়েইছে। কিন্তু এ বার দেখছি বোনেদের চাহিদা কম মিষ্টির মিষ্টির দিকে। সেটা মাথায় রেখে আমরাও সেই ধরনেরই মিষ্টি বানিয়েছি।’’
শহরের ওল্ড মানবাজার রোডে দেশের নামী একটি মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থার দোকান খুলেছে এ বছরই দুর্গাপুজোর সময়। ভাইফোঁটা উপলক্ষে এখানে মিলছে বিশেষ কয়েকটি মিষ্টি। যেমন কাঁচালঙ্কার রসগোল্লা, স্ট্রবেরি রসগোল্লা, চকোলেট রসগোল্লা, কিওয়ি রসগোল্লা, ম্যাঙ্গো রসগোল্লা। এই দোকানের মিষ্টি প্রস্তুতকারক রাজু মহাপাত্রের কথায়, ‘‘কাঁচালঙ্কার রসগোল্লা এ বার আমাদের স্টার অ্যাট্রাকশন। তা ছাড়া কিওয়ি নিউজিল্যান্ডের একটি ফল। সেটা দিয়েও রসগোল্লা বানানো হয়েছে।’’ এর পাশাপাশি এই দোকানে চকোলেট সন্দেশ, বাটারস্কচ সন্দেশ, যোধপুরি রাবড়ি, ড্রাইফ্রুট লাড্ডু, গুজিয়া তো আছেই। দোকানের মালিক অলোক পোদ্দার বলছিলেন, ‘‘কড়া মিষ্টির থেকে হাল্কা মিষ্টির দিকেই ঝোঁক রয়েছে ক্রেতাদের। তাই রাজস্থানী ও পঞ্জাবের কিছু মিষ্টি আমরা দো কানে রেখেছি। সঙ্গে নানা ধরনের সুগার ফ্রি মিষ্টিও রয়েছে।’’
শহরের ভবতারণ সরকার রোডের দোকানদার সুজিত মুখোপাধ্যায় জানালেন, সনাতনী মিষ্টির চাহিদা কখনও কমার নয়। চাহিদা মোতাবেক ঘিয়ের মিহিদানা তাঁরা প্রস্তুত রেখেছেন। তার সঙ্গে কম মিষ্টির চাহিদার কথা মাথায় রেখে জলভরা তালশাঁস, ক্ষীরের সিঙাড়া, পোস্ত কদম্ব, চকোলেট সন্দেশ, ভাপা সন্দেশ থাকছে দোকানে। আর শেষ পাতে লাল দই। জঙ্গলমহল মিষ্টির দোকানেও চাহিদা রয়েছে পুরনো মিষ্টির পাশাপাশি কম মিষ্টির।
ভাই উৎসবকে সঙ্গে নিয়ে মিষ্টির বাজার সারছিলেন পুরুলিয়া শহরের নর্থ লেক রোডের বাসিন্দা মৌমিতা রায়। তাঁর কথায়, ‘‘আগাম বাজার সেরে রাখতে হচ্ছে। ভাইয়ের মন বুঝে।’’ স্বাস্থ্যকর্মী শীলা মজুমদার বললেন, ‘‘আমার ভাই কড়া মিষ্টি পছন্দ করে না। তাই হালকা মিষ্টি কিছু নিলাম।’’ কলকাতা থেকে ভাইকে ফোঁটা দিতে এসেছেন অনসূয়া সাহা। বললেন, ‘‘এখন তো ভাইদের চাহিদা কম মিষ্টির দিকেই।’’ তবে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসক কার্তিক পাতরেরর সতর্কবার্তা, মিষ্টি খাওয়া মানেই বেশি ক্যালোরি। সুগার ফ্রি মানে কম ক্যালোরি বটে, কিন্তু কিছু ক্যালোরি তো থাকেই। ‘‘ভাইফোঁটায় মিষ্টি তো মাস্ট। কিন্তু, খেতে হবে ক্যালোরি বুঝে।’’—বললেন কার্তিকবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy