Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
উড়ল মুখ্যমন্ত্রীর মামাবাড়ির চাল

ঝড়ে রামপুরহাটের বহু গ্রামে ক্ষয়ক্ষতি

ঝড় থেমে যাওয়ার পর অনেক রাত পর্যন্ত কুশুম্বা, আয়াষ অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলির পরিস্থিতি দেখতে যান রামপুরহাট মহকুমাশাসক উমা শঙ্কর এস এবং রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও নিতীষ বালা। সোমবার সকালেও তাঁরা বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলি দেখতে যান। স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পম্পা মুখোপাধ্যায়ও কুশুম্বা পঞ্চায়েতের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলিতে যান।

ঝড়ের তাণ্ডব। সোমবার কুশুম্বায় ছবিটি তুলেছেন অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়।

ঝড়ের তাণ্ডব। সোমবার কুশুম্বায় ছবিটি তুলেছেন অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০১:১৪
Share: Save:

মিনিট পাঁচেকের ঝড়ে রবিবার বিধ্বস্ত হয়ে গেল রামপুরহাটের ১ ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। প্রথমে শিলাবৃষ্টি পরে মিনিট পাঁচেকের ঝড়ে রামপুরহাট ১ ব্লকের কুশুম্বা অঞ্চলের কুশুম্বা, বলরামপুর, হিমাদপুর, চাকাইপুর, চকমন্ডলা, শোলাগড়িয়া এই সমস্ত গ্রাম গুলিতে চরম ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এছাড়া, আয়াষ অঞ্চলের দাদপুর, ছিটাসপুর গ্রাম-সহ রামপুরহাট ১ ব্লকের অধীন দখলবাটি, বরশাল এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে আছড়ে পড়ে ঝড়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মভিটে রামপুরহাট থানার কুশুম্বাতেও রবিবার বিকালের ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মুখ্যমন্ত্রীর জন্মভিটের চালাঘর খানিও।

ঝড় থেমে যাওয়ার পর অনেক রাত পর্যন্ত কুশুম্বা, আয়াষ অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলির পরিস্থিতি দেখতে যান রামপুরহাট মহকুমাশাসক উমা শঙ্কর এস এবং রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও নিতীষ বালা। সোমবার সকালেও তাঁরা বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলি দেখতে যান। স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পম্পা মুখোপাধ্যায়ও কুশুম্বা পঞ্চায়েতের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলিতে যান। রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও নিতীষ বালা বলেন, ‘‘ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কুশুম্বা গ্রাম পঞ্চায়েত। সেখানে প্রায় এক হাজারের বেশি বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। এছাড়া আয়াষ, দখলবাটি, বরশাল এই তিনটি অঞ্চলের অনেক বসত বাড়ির চালও উড়ে গিয়েছে।’’ বিডিও আরও বলেন, ‘‘রবিবারের ঝড়ে রামপুরহাট ১ ব্লকে সব মিলিয়ে ২১৮০ টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তারপুলিন এবং এক ইউনিট করে চাল দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সদস্যদের বলা হয়েছে।’’

সোমবার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুতবাহী হাইটেনশন তারের উঁচু খুঁটি গুলি দুমড়ে মুচড়ে পর পর মাঠে পড়ে রয়েছে। খুঁটিগুলির বিধ্বস্থ অবস্থা দেখে সহজেই বোঝা যায় ঝড়ের প্রচন্ড গতিবেগ। বিডিও জানান, রাস্তার উপরে পড়ে থাকা গাছগুলি সরানোর জন্য সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা কাজ করছেন। কুশুম্বা গ্রাম ঢুকতেই দেখা গেল, রণজিত বাউড়ি নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার খড়ের চালের বাড়ির ছাউনি উড়ে গিয়েছে। উড়ে গিয়েছে পতিত পাবন কবিরাজ, সনৎ বাউড়িদের বাড়ির ছাউনি। তুফান বাউড়ির বাড়ির কাছে বিশাল আকারের শিশু গাছ পড়ে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর জন্মভিটের ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর মামিমা তাপসী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঝড়ের কি শব্দ! বাড়িতে থাকা যায় না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর জন্মভিটের পরের বাড়ি চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর মাটির বাড়ি খড়ের চাল সম্পূর্ণ ভাবে উড়ে গিয়েছে। গ্রামের যুবক সাগর নাথ মুখোপাধ্যায়ের মুরগির খামারের টিনের ছাউনি সম্পূর্ণ ভাবে বসে গিয়েছে। তিনি জানালেন, ‘‘কোনওরকমে ছেলেমেয়ে গুলোকে পাশের একটি পাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে পেরেছিলাম।’’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুশীল দাসের মুরগির খামার। সম্পূর্ণ ভাবে উড়ে গিয়েছে স্বপন লেট, নিবারণ লেটদের বাড়ি। কুশুম্বা গ্রামের বায়েন পাড়ার ক্ষতি সব চেয়ে বেশি। গ্রামের বাসিন্দা ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী অয়ন চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করলেন, ‘‘রবিবার সন্ধ্যা ছটায় ঝড়ে গ্রাম লন্ডভন্ড হয়। রাতে এসডিও, বিডিও ঘুরে এলাকা ঘুরে গিয়েছেন। সকালে মন্ত্রী ঘুরে গেলেন। কিন্ত সকাল দশটা বেজে গেল এখনও তারপুলিন বা ত্রান ক্ষতিগ্রস্ত এল না।’’

এ দিকে ঝড়ে রামপুরহাট শহরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বসত বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। গাছের ডাল ভেঙে পড়ে যাওয়ার জন্য রাতে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ ছিল না। রাতেই সিউড়ি থেকে সিভিল ডিফেন্সের ছ’ জন কর্মী রামপুরহাট শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ সরানোর ব্যবস্থা করেন। রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির রামপুরহাট বিভাগীয় বাস্তুকার অশোক শ্যামল বলেন, ‘‘শহর-সহ রামপুরহাট থানা এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গিয়েছে। এছাড়া রামপুরহাট থানার কুশুম্বা এবং বলরামপুর গ্রামের মাঠে ১১ হাজার লাইনে দাদপুর ফিডারের বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ খুঁটি পড়ে গিয়েছে। সেগুলিকে মেরামত করে জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলিতে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’ সোমবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরতে গিয়ে কুশুম্বা গ্রামে বিধায়ক তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় এরকম ঝড় খুব কম দেখেছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE