রোদে সন্তান কোলে মা। বান্দোয়ানের বম্বেচকে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
এক গুচ্ছ প্রশ্নকে সামনে রেখেই পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গেল।
ঘোষণার পরের দিন থেকেই ছ’দিনের মধ্যে মনোনয়ন পর্ব শেষ করার নির্দেশ ঘিরে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনই বর্ষাকালে কী ভাবে নির্বিঘ্নে ভোট সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করা যাবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিরোধীরা। তার উপরে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া, ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার মতো দাবিগুলি নিয়ে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে কিছু না জানানোয় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বিরোধীদের মধ্যে।
ফি বছর বর্ষায় বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় বহু কজ়ওয়ে জলের তলায় চলে যায়। বাঁকুড়ার নদী লাগোয়া বহু গ্রামও ডোবে। তার উপরে ওই সময়ে খরিফ মরসুমের চাষে মেতে থাকেন চাষিরা। ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষ ভোট দিতে কতটা উৎসাহী হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দাবি, এখন তাপপ্রবাহে বাইরে বেরোনো যাচ্ছে না। তার মধ্যেই বা কী করে ভোটের প্রচার করা যাবে, তা নিয়েও সংশয়ে অনেকে।
সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির মন্তব্য, “কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো বর্ষার মধ্যে পঞ্চায়েত ভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগেও তো ভোট করা যেতে পারত। বিরোধীরা যাতে প্রস্তুতির সময় না পায়, তার জন্যই কৌশল করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আমরা প্রস্তুত। বর্ষায় যাতে মানুষ ভোট দিতে আসেন, তা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে।” তাঁর সুরেই জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাটে বর্ষায় জল জমে থাকে। মানুষজন এই সময় কৃষিকাজে নামেন। বর্ষায় ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণকেই সমস্যায় ফেলা হল। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডলের দাবি, “ভোটের জন্য আমরা প্রস্তুত। তবে বিরোধীরা যাতে মনোনয়ন জমা করতে পারেন, মানুষ যাতে সুষ্ঠ ভাবে ভোট দিতে পারেন পুলিশ প্রশাসনকে তা নিশ্চিত করতে হবে।” তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্রের পাল্টা দাবি, “পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হওয়ারই ছিল। বিরোধীরা কেন এত প্রশ্ন তুলছেন জানি না। হতে পারে ওরা প্রস্তুত নয়।”
সর্বদল বৈঠক না ডেকে হঠাৎ করে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা করায় সরব হয়েছেন পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। তাঁর মতে, ‘‘এটা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ লক্ষণ নয়।’’ তাঁর দাবি, এখন প্রার্থী দেওয়ার মতো তাঁরা পুরোপুরি প্রস্তুত যেমন নয়, আবার অপ্রস্তুত, তা-ও নয়। সিপিএমের পুরুলিয়ার সম্পাদক প্রদীপ রায় জানান, বামফ্রন্টের কর্মীরা নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে রাস্তাতেই আছেন। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য তাঁরা প্রস্তুত। একই দাবি করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়াও।
তবে বিরোধীরা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো এ বারেও ভোটে শাসকদলের মদতে দুষ্কৃতীদের সন্ত্রাসের আশঙ্কা করছেন। কংগ্রেসের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো জানান, আজ, শুক্রবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী কলকাতা হাই কোর্টে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে পঞ্চায়েত নির্বাচন করানোর দাবিতে রিট পিটিশন ফাইল করবেন। বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘শুধু রাজ্য পুলিশ দিয়ে সারা রাজ্যে প্রায় ৭৮ হাজার বুথে পঞ্চায়েত নির্বাচন করানোর পরিকাঠামোই নেই রাজ্য পুলিশের। সেই সুযোগে লাগামহীন সন্ত্রাস চালাবে শাসকদল তৃণমূল। তাই আমরা আগে থেকেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার দাবি জানাচ্ছি।” তবে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেনের দাবি, ‘‘পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে বলেই ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা।”
তবে পঞ্চয়েত ভোট ঘোষণা হতেই প্রশাসনিক তোড়জোড়ও বেড়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই মহকুমাশাসক ও বিডিওদের নিয়ে বৈঠকে বসে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। কার্যত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মনোনয়ন সেল গড়ার কাজ বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই শুরু করেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy