অরণ্যের ডাক। ভাগ্য সহায় হলে জয়পুরের জঙ্গলে দেখা মিলতে পারে দাঁতালদের।
বিশাল এলাকা জুড়ে শাল, মহুল, পিয়াশাল, বহেড়া আর হরিতকির বিশাল জঙ্গল। সেখানে হরিণ, ময়ূর, বুনো শুয়োর, হাতিদের অবাধ বিচরণ। রয়েছে বাঁকুড়া জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয় সমুদ্র বাঁধ। আর এই সবুজের টানেই এখানে হাজির হয় অসংখ্য পাখির ঝাঁক। যার টানে বাংলার প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন বাঁকুড়ার নিরিবিলি শহর জয়পুরে।
৬ হাজার ৩৩১ হেক্টর জায়গা নিয়ে এই বনাঞ্চল। ভ্রমণার্থীদের কথা ভেবে সেই নিবিড় অরণ্যের মধ্যে ২০০৫ সালে বন দফতর গড়ে তোলে পাঁচতলার ওয়াচ টাওয়ার। যার উপর ও নিচের তলা বাদে তিনটি তলায় রয়েছে তিনটি স্যুট। প্রতি স্যুটে দ্বিশয্যার বিছানা। জানালা খুললেই গাছ-গাছালির ফাঁক দিয়ে দেখা যায় বিশাল সমুদ্র বাঁধ। সেখানেই দিনভর চক্কর মারে পাখপাখালি। টাওয়ার থেকে চোখ রাখলে মাঝে মধ্যে নজরে আসে হরিণ, ময়ূর। ভাগ্য ভাল থাকলে সমুদ্রবাঁধে হাতিদের জলকেলিও চোখে পড়তে পারে।
এ ছাড়া বন দফতরের রেঞ্জ অফিস লাগোয়া একটি বিশ্রামাগারও রয়েছে। সেখানেও উপর ও নিচের তলায় ডবল বেডের পাঁচটি ঘর রয়েছে। এ দু’টিতে থাকার জন্য অগ্রিম যোগাযোগ করতে হবে ডিএফও, বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বন বিভাগের সঙ্গে। সরকারি ভাবে আর থাকার জায়গা বলতে জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির ‘বনবিতান’ লজ। জয়পুরের বিডিও ইলমি মারগুম বলেন, ‘‘ওই লজটি তিন বছরের চুক্তিতে একজন ব্যবসায়ীকে দেওয়া হয়। সেখানে একটি বড় ডর্মিটরি ছাড়াও আটটি দ্বিশয্যার ঘর রয়েছে।”
পর্যটকদের কাছে এ সবই অপ্রতুল বুঝতে পেরে কয়েকটি বেসরকারি লজও তৈরি হয়েছে জয়পুরে। তৈরি হয়েছে রিসর্ট। খাবারও সুস্বাদু। তবুও জয়পুরে থাকার সমস্যা মেটেনি বলে মনে করেন কেউ কেউ। যেমন জয়পুরে বেড়াতে আসা কলকাতার এক পর্যটক সুবীর বসু বলছিলেন, “গত শীতের মরসুমে গিয়েছিলাম। অমন একটি নিরালা পরিবেশে রাতে থাকার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সরকারি বাংলো থেকে বেসরকারি হোটেলে খোঁজ করেও জায়গা পাইনি। শেষে বিষ্ণুপুরের একটি লজে উঠেছিলাম।” সমুদ্রবাঁধের পাশে ঘুরতে থাকা দুর্গাপুর থেকে আসা এক পর্যটক দম্পতি সুদীপ ও ময়না চক্রবর্তী জানান, “এর আগেও এসেছি, এখন বাঁধটি দেখছি মজে যাচ্ছে। বাঁধের পাশে সুন্দর সুন্দর মূর্তি রয়েছে। সেগুলিও দেখছি ভেঙে পড়ছে। প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।”
বিডিও জানান, “জয়পুরের পর্যটন উন্নয়নে একটি পরিকল্পনা রিপোর্ট তৈরি করে জেলাশাসকের মাধ্যমে পর্যটন দফতরে পাঠানো হয়েছে। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে এলাকার সুরধনী পার্ক উন্নয়নে ৩০ লক্ষ টাকা দেবেন বলে জানিয়েছেন।” ওই এলাকার কোতুলপুরের বিধায়ক শ্যামল সাঁতরা বলেন, “পর্যটকদের থাকার সমস্যার কথা ভেবে জয়পুরে সমুদ্রবাঁধের পাড়ে চারটি কটেজ তৈরির পরিকল্পনা প্রস্তাব নেওয়া আছে। বাঁধের উপরে রোপওয়েও হবে। চারপাশ সাজানো হবে। এই খাতে ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে পর্যটন দফতরের কাছে।” তিনি জানান, সমুদ্রবাঁধের সংস্কারে কৃষি-সেচ দফতরের কাছে চাওয়া হয়েছে চার কোটি টাকা।” জেলা পরিকল্পনা দফতরের আধিকারিকরা এ ব্যাপারে এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
জয়পুরের রেঞ্জ অফিসার মনোজ যশ বলেন, “খুব সম্প্রতি হাতির দলের বা দলছুট হাতিদের গতিবিধি জানার জন্য আমরা জঙ্গলের ভিতর মোবারকপুর ও মাচানতলা এলাকায় দু’টি ওয়াচ টাওয়ার বানিয়েছি। জঙ্গলের ভিতরে ঘঘরা গ্রামে হাতিদের স্নানের বা জল খাবার জন্য ৫ বিঘা জমি খনন করে বানানো হয়েছে হাতিবাঁধ। বেড়াতে আসা অনেককে ওইসব দিকে দেখা যাচ্ছে। আমাদের রেঞ্জ অফিস লাগোয়া হাইটেক নার্সারিটিও অনেকের নজর কাড়ছে।”
কলকাতা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে জঙ্গলে বেড়াতে আসা ঝিলিক দত্ত ও সুরভি পাল বলেন, “বেঙ্গালুরুতে বানেরঘাটা জঙ্গলে বন দফতরের গাড়িতে চড়ে জঙ্গল সাফারি খুব জনপ্রিয়। এখানেও জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো হাতি, হরিণ, ময়ূর দেখাতে এ ধরণের উদ্যোগ নিলে ভাল লাগত।” তাঁরা জানান, জয়পুরের কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে বিখ্যাত গোকুলনগরের মন্দির। প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা থাকলে ঘুরে আসা যেত। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়গুলি নিয়ে ভাবলে ভাল হয়।”
এলাকার সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, “জয়পুরের পর্যটন উন্নয়ন নিয়ে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা হবে।” জয়পুর তেমাথা মোড়ের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘শীতের মরসুমে প্রচুর মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাব থাকায় অন্য সময় তাঁদের দেখা মেলে না। ফলে ব্যবসাও ওই সময়ে মার খায়। আমরা চাই, সারা বছর পর্যটক আসুক এমন কিছু পরিকল্পনা নিক প্রশাসন।’’
ছবি: শুভ্র মিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy