ওজন কমানোর ওষুধ নিরাপদ কি না, সে নিয়ে নানা জনের নানা মত। চিকিৎসকদের মধ্যেও মতভেদ আছে। তবে সম্প্রতি ওজন কমানোর তিন-চারটি ওষুধ নিয়ে রীতিমতো হইচই হচ্ছে। সমাজমাধ্যমের দৌলতে ওষুধগুলির নাম কমবেশি সকলেরই জানা। যার মধ্যে একটি হল ওজ়েম্পিক। ইলন মাস্ক, ওপ্রা উইনফ্রি এই ওষুধ খেয়ে একদম ছিপছিপে হয়ে গিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তার পর থেকে ওষুধটি রীতিমতো চর্চায় রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, ওজ়েম্পিক কেবল নয়, জ়েপবাউন্ড, মাউনজেরো, ওয়েগোভির মতো ওজন কমানোর ওষুধও নাকি এ বছরই ভারতের বাজারে আসবে। এমন ধরনের ওষুধ এ দেশে বিক্রি হতে শুরু করলে, তার কী কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে মতামত দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আদৌ কি ওজন কমানোর ওষুধ নিরাপদ?
স্থূলতা কমানোর সব ওষুধ মোটেই নিরাপদ নয়। সকলকে তা দেওয়া হয় না, এমনটাই জানালেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক ও রিজেনারেটিভ মেডিসিন নিয়ে কর্মরত মল্লিনাথ মুখোপাধ্য়ায়। তাঁর কথায়, “ওজ়েম্পিক এক ধরনের ‘সেমাগ্লুটাইড’, যা খিদে কমিয়ে দেয়। ওষুধটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নিতে হয় যার খরচ অনেকটাই বেশি। নির্দিষ্ট ডোজ়ের বেশি এই ওষুধ শরীরে গেলে কিডনির রোগ, অ্যালার্জি, হাইপারটেনশন, হাইপোগ্লাইসেমিয়া, এমনকি থাইরয়েড, ক্যানসারের মতো রোগ হতে পারে।” ওজন ১০০ কেজি ছাড়িয়ে গেলে ও সেই সঙ্গে ডায়াবিটিস ও আনুষঙ্গিক রোগ থাকলে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নির্দিষ্ট ডোজ়ে ওজ়েম্পিক দেওয়া যেতে পারে। তবে সকলের জন্য এই ওষুধ সুরক্ষিত নয়।
আরও পড়ুন:
মাউনজেরো, ওয়েগোভি, জ়েপবাউন্ডের মতো ওষুধও ওজন কমাতে পারে বলে দাবি। মাউনজেরো টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে। জ়েপবাউন্ড স্থূলতার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ ও স্লিপ অ্যাপনিয়াও কমাতে পারে বলে দাবি। স্থূলতার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা যাঁদের বিপজ্জনক ভাবে বেড়ে গিয়েছে, তাঁদের এই সব ওষুধ দেওয়া হয়। ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
স্থূলতা কমানোর ওষুধে একেবারেই ভরসা রাখেন না কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিউক্লিয়ার মেডিসিনের চিকিৎসক সোনালি ঘোষ। তিনি বললেন, “ওজন কমানোর যে কোনও ওষুধের হাজার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। যে সকল তারকা ওষুধ খেয়ে ওজন কমানোর দাবি করেছেন, তাঁরা সুষম ডায়েট ও শরীরচর্চাও করেছেন। তাই যদি স্থূলতা কমানোর ওষুধগুলি জনসাধারণের নাগালে চলে আসে, তা হলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। প্রতিটি ওষুধের নির্ধারিত ডোজ় আছে। সেই ডোজ়ে নিলে তবেই কাজ হবে। কিন্তু ইচ্ছামতো এমন ওষুধ কিনে তার প্রয়োগ শুরু হলে, রোগব্যাধি আরও বাড়বে।”
ওজ়েম্পিক বা জ়েপবাউন্ডের মতো ওষুধের দামও অনেক বেশি বলেই জানালেন চিকিৎসক। ওজ়েম্পিকের একটি ইঞ্জেকশনের দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। বাকি ওষুধগুলির এক-একটি ডোজ়ের দামও হবে কম করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ওষুধগুলি এ দেশের মানুষের শরীরে কেমন প্রভাব ফেলবে, তা ট্রায়ালের পরেই বোঝা যাবে। যদি কম সংখ্যক মানুষজনের উপর পরীক্ষা করে ওষুধগুলি বাজারে আনা হয় এবং ব্যবসায়িক স্বার্থে বহুল পরিমাণে বিক্রি শুরু হয়, তা হলে ফল ভাল না-ও হতে পারে। না জেনেবুঝে এমন ওষুধ দিনের পর দিন নিতে শুরু করলে, ক্যানসার হওয়াও আশ্চর্যের নয়। তা ছাড়া এই ওষুধগুলির প্রভাব পড়ে হার্টের স্বাস্থ্যেও। বেশি মাত্রায় নিলে প্রজনন ক্ষমতাও কমে যেতে পারে। তাই ওষুধ না খেয়ে বরং পরিমিত খাওয়াদাওয়া ও শরীরচর্চার মাধ্যমেই ওজন কমানো উচিত।